Advertisement
১১ জানুয়ারি ২০২৫
West Bengal Lockdown

কুমড়ো তিন, লঙ্কা বিকোচ্ছে চার টাকায়

চাষিদের দাবি, ‘লকডাউন’-এর আগে যে লঙ্কা ২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হত, সেই লঙ্কা এখন বিকোচ্ছে চার টাকায়।

আড়তে জমা রয়েছে বস্তা বস্তা উচ্ছে। নিজস্ব চিত্র

আড়তে জমা রয়েছে বস্তা বস্তা উচ্ছে। নিজস্ব চিত্র

সৌমেন দত্ত  ও  প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২০ ০৩:০১
Share: Save:

ঢেঁড়শ নিয়ে আড়তদারের কাছে গিয়েছিলেন রায়নার চাষি শেখ ইয়াকুব। ১০ কিলোগ্রাম কেনেন আড়তদার। বাকি ২০ কিলোগ্রাম বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হন তিনি। জামালপুরের মধু রায়, মধ্যম ঘোষেরাও কেউ লঙ্কা, কেউ পটল নিয়ে গিয়েছিলেন আড়তদারের কাছে। বেশির ভাগই ফিরিয়ে এনে ডাঁই করে ফেলে রেখেছেন আনাজ।

চাষিদের দাবি, ‘লকডাউন’-এর আগে যে লঙ্কা ২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হত, সেই লঙ্কা এখন বিকোচ্ছে চার টাকায়। উচ্ছে ছ’টাকা কেজি, কুমড়ো তিন টাকা কেজিতে মিলছে। পটলের দাম কয়েকদিন আগেও কেজিতে ৪০ টাকা ছিল, এখন তা নেমেছে ৮-১০ টাকায়। এই পরিস্থিতিতে গ্রামীণ অর্থনীতি ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, “চাষিরা যাতে আর্থিক ক্ষতির মুখে না পড়েন, সেটা সরকার দেখবে। কোথায়-কোথায় এ রকম সমস্যা হচ্ছে, সে সব জায়গা চিহ্নিত করার জন্য বলা হচ্ছে।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সালিমডাঙায় জামালপুর ছাড়াও রায়না, মাধবডিহি, খণ্ডঘোষের বহু চাষি আনাজ এনে বিক্রি করেন। প্রতিদিন ৮০ টন আনাজ বিক্রি হয় ওই পাইকারি বাজার থেকে। তবে এখন বিক্রি পরিমাণ অনেক কম। কাড়ালাঘাটেও আনাজ বিক্রি করতে ভোর থেকে ভিড় করতেন প্রচুর চাষি। হট্টগোল লেগেই থাকত। সেই বাজার এখন শান্ত। পাইকারেরা জানান, কলকাতার ভবানীপুর, গড়িয়া, উল্টোডাঙা, গড়িয়া, হুগলির শেওড়াফুলি, শ্রীরামপুর-সহ বিভিন্ন জায়গার ক্রেতারা পণ্যবাহী গাড়ি নিয়ে রাতেই ওই বাজারে হাজির হয়ে যেতেন। ভোরের মধ্যে আনাজ নিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যেতেন তাঁরা। তবে এখন সবই বন্ধ। চাষিদের দাবি, যাঁদের হাঁকডাকে সরগরম ছিল জামালপুরের সালিমডাঙা ও কাড়ালাঘাটের পাইকারি বাজার, সেই পাইকারদেরই দেখা নেই। ফলে, দামোদরের পাড়ে বিঘার পরে বিঘা জমিতে চাষ হওয়া আনাজ কেনারও লোক নেই।

চাষিরা জানাচ্ছেন, স্থানীয় মানুষজন যেটুকু কিনছেন, তা অতি সামান্য। ফলে, টন-টন আনাজ আড়তদারদের ঘরে পড়ে থাকছে। দু’-এক জন ক্রেতা মিললেও জলের দরে বিক্রি করতে হচ্ছে আনাজ। আড়তদারদের দাবি, ‘লকডাউন’-এর পর থেকে জেলার আনাজ কলকাতার বাজারে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। কলকাতার পাইকারেরা আসছেন না। পচে যাওয়ার ভয়ে সামান্য দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে আনাজ। কৃষিজীবী তাপস ঘোষ, মুকুন্দ দাসদের দাবি, “এক বিঘা জমিতে লঙ্কা চাষ করতে খরচ হয় প্রায় ন’হাজার টাকা। উচ্ছে, পটল চাষেও বিঘায় খরচ হয় ১০-১২ হাজার টাকা। জমি থেকে ফসল তোলার জন্য কৃষি শ্রমিকেরা প্রতি পাঁচ কেজিতে ২৫ টাকা করে নেন। সেখানে জলের দরে আনাজ বিক্রি করতে গিয়ে অতলে পড়ে যাচ্ছি।’’

একই পরিস্থিতি আউশগ্রামের শসা চাষিদের। তাঁদের দাবি, কোথাও মাঠে শসা শুকিয়ে যাচ্ছে, কোথাও চাষিরা গবাদি পশুকে খাইয়ে দেওয়া হচ্ছে ফসল। সংসার চালানো নিয়েও চিন্তায় তাঁরা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জমি থেকে শসা তোলা শুরু হতেই ‘লকডাউন’ জারি হয়। ফলে, ফসল তুললেও তা বিক্রির ব্যবস্থা করা যায়নি। মিঠু বৈরাগী, কার্তিক গায়েন, পথিকৃৎ মেটে, বিশ্বজিৎ মণ্ডলদের দাবি, যেটুকু বিক্রি হচ্ছে, তাতেও দাম মিলছে না। তাঁরা বলেন, ‘‘এত দিন মূলত, রেলের হকারেরা আমাদের কাছ থেকে শসা কিনে নিয়ে যেতেন। বাকিটা গুসকরার আড়তে বিক্রি হত। কিন্তু ট্রেন চলাচল বন্ধ, পাইকারি বাজারে বাইরের ক্রেতার সংখ্যা কমায় চাহিদা কমেছে।’’

চাষিরা জানান, প্রতিদিন খেত থেকে শসা তুলতে হয়। না হলে গাছেই পেকে যায় ফসল। কিন্তু এখন যানবাহন না থাকায় মাঠেই পড়ে থাকছে ফসল। শুকনো শসা গবাদি পশুকে খাওয়ানো ছাড়া উপায় নেই, দাবি চাষিদের। তাঁরা জানান, অনেকেই বাজার থেকে ধারদেনা করে শসা চাষ করেছেন। ফসল বিক্রি করে সেই ধার শোধ করা হয়। এ বার সবই জলে। মিঠুবাবুর দাবি, “প্রতিদিন ৮-১০ বস্তা শসা তোলা হয়। সার, মজুরি, ভ্যানভাড়া মিটিয়ে বস্তা পিছু ১০-২০ টাকা থাকছে। এই অবস্থায় সরকার থেকে সাহায্য না করলে ধনেপ্রাণে মারা পড়তে হবে।’’ তাঁরা জানান, অন্য বছর বিঘা প্রতি ১০-১৫ হাজার টাকা লাভ থেকে। তার থেকেই সংসার চলে।

গুসকরার ফল ব্যবসায়ী শঙ্কর মণ্ডল, বিমল দে-র দাবি, বিভিন্ন জায়গায় উৎসব, গাজন থাকায় এই মরসুমে শসার ভালই চাহিদা থাকে। কিন্তু এ বার তা বন্ধ। খরিদ্দারও কম। আউশগ্রাম ১ ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা দেবতনু মাইতি বলেন, “আউশগ্রামে প্রায় ৬০–৭০ বিঘা জমিতে শসা চাষ হয়। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা যোগাযোগ করলে পরে তাঁদের সাহায্য করার চেষ্টা করা হবে।’’ পাইকারেরা দুরবস্থার কথা মেনে নিয়েছেন। তাঁরা বলেন, “আনাজে ছাড় থাকলেও নানা ঝামেলা, বাজারে খরিদ্দার কম বলে কেউ ঝুঁকি নিচ্ছে না। চাষিরা উৎপাদিত ফসল নিয়ে এলেও এক-তৃতীয়াংশ কিনছি। আমাদেরও কিছু করার নেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy