Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Lockdown

অসহায়ের মুখে খাবার দিতে একজোট

বর্ধমানের তেঁতুলতলা এলাকায় চার জনের সেই উদ্যোগে এখন হাত মিলিয়েছেন আরও ১৮ জন।

বর্ধমানের তেঁতুলতলা বাজার এলাকায় চলছে রান্না। ছবি: উদিত সিংহ

বর্ধমানের তেঁতুলতলা বাজার এলাকায় চলছে রান্না। ছবি: উদিত সিংহ

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২০ ০২:৩৪
Share: Save:

প্রতিদিন সন্ধ্যায় আড্ডা দিতেন কয়েকজন। ‘লকডাউন’ ঘোষণার পরে, সে আড্ডায় ছেদ পড়লেও টুকটাক আলোচনা চলছিল। তেমন আলোচনাতেই কথা ওঠে, আশপাশের অনেক দুঃস্থ মানুষ খাবার পাচ্ছেন না। সাতপাঁচ না ভেবে নিজেরা রান্না করে কিছু মানুষকে খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত তখনই নিয়ে ফেলেন চার জন।

বর্ধমানের তেঁতুলতলা এলাকায় চার জনের সেই উদ্যোগে এখন হাত মিলিয়েছেন আরও ১৮ জন। হিন্দু, মুসলমান থেকে জৈন, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রান্না করা খাবার নিয়ে যাচ্ছেন স্টেশন বা হাসপাতাল চত্বরের ভবঘুরেদের কাছে। কখনও খাদ্যসামগ্রী বিলি করে আসছেন বস্তি এলাকায়। রাতুল জৈন, নীলঙ্কর সাধু, রাজু শেখদের কথায়, ‘‘সঙ্কটের সময়ে অসহায়ের পাশে দাঁড়ানোই ধর্ম।’’

অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী তরুণ ঘোষ তাঁর বাড়ির একতলা খালি করে দিয়েছেন। সেটাই এখন তাঁদের ‘কন্ট্রোল রুম’। স্থানীয় বাসিন্দা শেখ জালালউদ্দিনের নেতৃত্বে খাবার তৈরি থেকে বিলি-বণ্টনের পরিকল্পনা চলছে সেখানে। তরুণবাবু জানান, তিনি, জালালউদ্দিন-সহ চার জন প্রথম এই উদ্যোগ শুরু করেন ২৮ মার্চ থেকে। গোড়ায় নিজেরা টাকা দিয়ে তহবিল তৈরি করেছিলেন। রান্নার গ্যাস, জল সরবরাহ করছিলেন বাড়ি থেকে। তাঁদের কর্মকাণ্ড দেখে একে-একে শামিল হয়েছেন অনেকে। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তেঁতুলতলা বাজারের ব্যবসায়ীরাও।

কিলোমিটার পাঁচেক দূরে, বর্ধমানের বাহির সর্বমঙ্গলাপাড়ায় থাকেন দীনেশ জৈন। তরুণবাবুদের কর্মসূচির কথা শুনে হাজির হয়েছেন তিনি ও তাঁর ছেলে রাতুল। তাঁদের কথায়, ‘‘গরিব মানুষজনের কাছে খাবার পৌঁছনো এখন সবচেয়ে বড় কর্তব্য।’’ তাঁরা জানান, দিনে শ’পাঁচেক জনকে রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া, এক দিন অন্তর বস্তি এলাকায় আলু, পেঁয়াজ, ডাল, বিস্কুট, নুন ও তেল বিলি করা হচ্ছে।

দলের সদস্য কুতুব বাবুর্চি, শেখ সালেক মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘প্রত্যেকটা দিনের শেষে মনে হয়, কাল বোধ হয় আর এত জনের খাবার জোগাড় করা সম্ভব হবে না। কিন্তু কোনও না কোনও ভাবে সাহায্য মিলে যাচ্ছে।’’ তাঁদের অভিজ্ঞতা, এক দিন বর্ধমান স্টেশন চত্বরে ভবঘুরেদের খাবার বিতরণের সময় আচমকা এক ব্যক্তি এসে দশ হাজার টাকা দিয়ে যান। তরুণবাবুরা বলছেন, ‘‘এত মানুষ পাশে দাঁড়াচ্ছেন, ভাবনার অতীত!’’

দামোদরের ধারের বস্তির বাসিন্দা সুনীল শর্মা, সান্ত্বনা রায়েরা বলেন, ‘‘সরকার থেকে রেশন মিলছে। তবে তাতে সব চাহিদা মিটছে না। জালালভাই, তরুণবাবুরা অবস্থা বুঝে পাশে দাঁড়ানোয় আমাদের অন্তত না খেয়ে থাকতে হচ্ছে না।’’ আর একটি বস্তির বাসিন্দা, মোটরবাইক গ্যারাজের কর্মী আনসারুল হকের কথায়, ‘‘লকডাউনে রোজগার বন্ধ। এখন এমন সাহায্যই ভরসা।’’

বর্ধমান পুরসভার এগজ়িকিউটিভ অফিসার অমিত গুহ বলেন, ‘‘সরকারের তরফে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তার পাশাপাশি, একজোট হয়ে বাসিন্দাদের এমন উদ্যোগ এই মুশকিলের সময়ে সমাজে খুব দরকার। ওঁদের সাধুবাদ জানাই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy