খণ্ডঘোষের গ্রামে চলছে পড়াশোনা। নিজস্ব চিত্র।
ক্লাস শুরু করেছিলেন গ্রামের একটি কালভার্টে দু’জন ছাত্রকে নিয়ে। নাম হয়ে গিয়েছিল ‘কালভার্ট স্কুল’। এখন ছাত্রসংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৫। তাই ক্লাস সরাতে হয়েছে পাশের মাঠে।
পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ ব্লকের গুঁইর গ্রামের বাসিন্দা সন্দীপপ্রসন্ন চক্রবর্তী পেশায় স্কুলশিক্ষক। বিকেলে পাশের গ্রাম আম্বায় গিয়ে মিশে যেতেন খুদেদের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানতে পারেন, স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনা কার্যত শিকেয় উঠেছে। পড়ুয়াদের হাতে চকোলেট গুঁজে তাদের পড়াশোনার জগতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা শুরু করেন এক মাস আগে। গ্রামের একটি কালভার্টে শুরু করেন ক্লাস। প্রথমে এসেছিল দু’জন পড়ুয়া। এখন সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৫। শুধু প্রাথমিকের পড়ুয়ারাই আসছে না, ক্লাসে যোগ দিয়েছে অষ্টম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রছাত্রীরও, জানাচ্ছেন সন্দীপবাবু। মাস্ক পরে, দুরত্ব-বিধি মেনে ও স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করে চলছে ক্লাস।
সন্দীপবাবু জানান, আম্বা গ্রামের বেশির ভাগ বাসিন্দাই ক্ষুদ্রচাষি কিংবা দিনমজুর। গৃহ-শিক্ষক রেখে ছেলেমেয়েদের পড়ানোর ক্ষমতা নেই কারও। তাঁদের সন্তানেরা যাতে যাতে স্কুলছুট না হয়, সে কারণেই এই উদ্যোগ বলে জানান সন্দীপবাবু। তাঁকে সাহায্য করছেন অনেকেই। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ‘কালভার্ট স্কুল’-এর কথা জানতে পেরে সন্দীপবাবুর পাশে দাঁড়িয়েছেন আরও অনেক শিক্ষক। তাঁদের কেউ দিচ্ছেন মাস্ক, কেউ স্যানিটাইজ়ার। কেউ কেউ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য চকোলেট কিংবা শিক্ষা সরঞ্জামও পাঠিয়েছেন।
সন্দীপবাবুর এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন তাঁরই স্কুলের শিক্ষক অরিন্দম পাঁজা। সন্দীপবাবুর সঙ্গে তিনিও নিয়মিত ছাত্রছাত্রীদের পড়াচ্ছেন। অরিন্দমবাবু বলেন, ‘‘সন্দীপ স্যরের উদ্যোগের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নিয়ে ভাল লাগছে। শুধু আম্বা গ্রাম নয়, পাশের গুঁইর গ্রামের ছাত্রছাত্রীরাও আসছে কালভার্ট স্কুলে।’ গুঁইর ও আম্বা গ্রামের বাসিন্দারা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। ‘কালভার্ট স্কুল’-এর পড়ুয়া অর্পিতা ধাড়া ও বিশ্বজিৎ ধাড়া বলে, ‘‘আগে প্রতিদিন বিকালে চকোলেট নিতে আসতাম। এখন চকোলেটও পাই, আবার পড়াশোনাও করি। মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ারও পাচ্ছি। অনেক বন্ধু হয়েছে। সব মিলিয়ে ভাল লাগছে।’’
সন্দীপবাবুর উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগ। তিনি বলেন, ‘‘বাচ্চাদের শিক্ষার জগতে ধরে রাখার এই কর্মকাণ্ড সাধুবাদের যোগ্য। তবে স্বাস্থ্য-বিধি মেনে সুরক্ষার দিকটি মাথায় রাখতে হবে।’’ সন্দীপবাবু বলেন, ‘‘মূলত পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছেলেমেয়েদের কথা ভেবেই ক্লাস শুরু করি। তবে এখন অনেকেই আসছে। স্বাস্থ্য-বিধি মেনেই ক্লাস চলছে।’’ জেলা শিক্ষা দফতরের আধিকারিকেরাও প্রশংসা করেছেন ওই শিক্ষকের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy