Advertisement
৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

ছেলেরা খাদানে, অপেক্ষায় গ্রাম

নিখোঁজ সন্তোষ মারান্ডি, বিনয় মুর্মু, কালীচরণ কিস্কু, গ্রামের মাঝিপাড়ায় হাত খানেকের দূরত্বে তিন জনের বাড়ি।

দুশ্চিন্তা: কালীচরণ কিস্কুর মা। ছবি: পাপন চৌধুরী

দুশ্চিন্তা: কালীচরণ কিস্কুর মা। ছবি: পাপন চৌধুরী

সুশান্ত বণিক
শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৩৫
Share: Save:

কারও বাড়িতে আশা, ঘরের ছেলে নিশ্চয় ঘরেই ফিরবে। কারও স্ত্রী’র গলায় আবার সংশয়। অদূরের অন্য এক বাড়ি থেকে তখন ভেসে আসছে বিলাপ, ‘ফুটবল খেলা দেখব বলল...।’— রবিবার ‘অবৈধ’ খাদান খুঁড়তে গিয়ে নিখোঁজ কুলটির আকনবাগান গ্রামের তিন যুবকের বাড়ির ছবিটা সোমবার দিনভর এমনই। আর গ্রামের ছেলেদের জন্য দুশ্চিন্তায় কারও হেঁশেলে শোনা যায়নি ভাত ফোটার শব্দ।

নিখোঁজ সন্তোষ মারান্ডি, বিনয় মুর্মু, কালীচরণ কিস্কু, গ্রামের মাঝিপাড়ায় হাত খানেকের দূরত্বে তিন জনের বাড়ি। সোমবার ঘটনার কথা চাউর হওয়ার পরে ২২ বছরের কালীচরণের একচিলতে মাটির বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বুক চাপড়াচ্ছেন রমণী কিস্কু। মাঝেসাঝেই চিৎকার করে বলছিলেন, ‘‘আমার ছেলেটা বলল, গাঁয়ের মাঠে ফুটবল খেলা দেখতে যাচ্ছি। কী করতে যে খাদানে নামল!’’ তাঁকে সামলাতে সামলাতে পড়শি মহিলাদের কেউ কেউ জলের গ্লাস হাতে নিয়ে অনুরোধ করছেন, ‘একটু মুখে দাও।’ পড়শিদেরই এক জন জানান, রবিবার রাতের পরে আর কিছুই মুখে তোলেননি রমণীদেবী। খবরটা শুনে কালীচরণের বড় দাদা দুলালবাবুর মুখে কোনও কথা নেই।

ক্রমে দুপুর গড়িয়ে গ্রামের পশ্চিমে ঢলতে শুরু করে সূর্য। কিন্তু তখনও ভোর থেকে বসে থাকা গ্রামের মানুষগুলো পাড়ার একেবারে শেষ প্রান্তে ঝাঁকড়া বট আর নিম গাছের তলায় বসে রয়েছেন। জটলার চোখ, অদূরের ওই খাদানের দিকে, যেখানে তলিয়ে গিয়েছেন তিন জন। শতাধিক মানুষের ভিড়ে দাঁড়িয়েছিলেন সোনামণি টুডু। গ্রামের কারও ঘরে রান্না হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ছেলেরা গিয়েছে খাদানে। আমরা তাই অপেক্ষা করব, যতক্ষণ না ওরা ফেরে।’’ কাছেই থাকা গ্রামেরই সাজন মারান্ডি বলেন, ‘‘ওই খাদানের কাছে যুবকদের ছেড়ে যাওয়া পোশাক দেখে বুঝতে পারি, ওরা ওখানেই ঢুকে গিয়েছেন। আমাদের অনুমান, মাটি খুঁড়ে প্রথমে ভিতরে ঢোকেন সন্তোষ। ও ফিরছে না দেখে ওঁকে তুলতে যান বিনয় ও কালীচরণ। তার পরেই মনে হয় বিপত্তি ঘটে।’’

এই বিপত্তির পরে স্বামী কি আর উঠবে ওই পাতাল থেকে, সময় যত গড়ায় সংশয় তত বাড়ে প্রতিমা মুর্মুর। প্রতিমা নিখোঁজ বছর ৩২-এর যুবক বিনয়ের স্ত্রী। ছোট ছোট তিন ছেলেমেয়ে রবীন, শুকদেব আর শিবানীকে নিয়ে সাজানো সংসার বিনয়-প্রতিমার। এ দিনের ঘটনার পরে প্রতিমার গলায় ভবিষ্যতের জন্য সংশয়, ‘‘কী ভাবে চালাব আগামিদিনের সংসার?’’

তবে স্বামী ফিরবেই, দৃঢ় প্রত্যয় সুরবতা মারান্ডির গলায়। বছর ২৭-এর যুবক নিখোঁজ সন্তোষের স্ত্রী সুরবতা। দেড় বছরের মেয়ে লক্ষ্মীকে আঁকড়ে ধরে তিনি বলেন, ‘‘আমার স্বামী খাদে নামেনি। ও তো গাড়ির চালক। স্বামী ফিরবেই।’’ বারবার এ কথাই বলে যাচ্ছিলেন তিনি। আর পাশে বসে কান্না চেপে তাঁকে সামলানোর চেষ্টা করছিলেন সন্তোষের মা সাধমণি মারান্ডি। ‘ছেলে ফিরবেই’, প্রত্যয়ী তিনিও।

দিনভর এই পরিস্থিতি চলার পরে আঁধার ঘনিয়ে আসে গ্রামে। গাছতলায় সেই ভিড়টা তখনও অপেক্ষায়...।

কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) অনমিত্র দাস জানান, তল্লাশি চলছে। কমিশনারেট জানায়, অবৈধ খাদানের খবর পেলেই তারা ব্যবস্থা নেয়। সম্প্রতি কিছু জায়গায় অভিযানও চালানো হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Kulti Mines
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy