প্রতীকী ছবি
সম্প্রতি কয়লা ও খনি ক্ষেত্রে সংস্কারের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, বাণিজ্যিক ভাবে কয়লা উত্তোলনের জন্য বেসরকারি উদ্যোগ বাড়ানো হবে। এই লক্ষ্যে ৫০টি ‘কয়লা ব্লক’ বেসরকারি সংস্থাকে নিলাম করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শ্রমিক সংগঠনগুলির নেতারা সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে ধর্না কর্মসূচি পালন করার কথা জানিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বার থেকে বেসরকারি সংস্থাগুলি বাজারে বাণিজ্যিক ভাবে কয়লা বিক্রি করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে উৎপাদিত কয়লা বিক্রি করে যে আয় হবে, তার একটা অংশ পাবে কেন্দ্র (‘রেভিনিউ শেয়ারিং’)।
এই ঘোষণার পরে রবিবার এআইটিইউসি, আনএনটিইউসি, এইচএমএস, সিটু ও বিএমএস, এই পাঁচটি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনকে নিয়ে তৈরি ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’র নেতৃত্ব আসানসোলে এআইটিইউসি-র কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে জানানো হয়, ঠিক হয়েছে, আগামী ২২মে একজোট হয়ে আসানসোলে রবীন্দ্র ভবনের সামনে ধর্না-বিক্ষোভের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তার পরে সমস্ত খনির সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণার পরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। এআইটিইউসি-র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভাপতি রামচন্দ্র সিংহের প্রতিক্রিয়া, ‘‘অনেক আগেই কয়লা শিল্পের বেসরকারিকরণে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ইতিমধ্যেই ‘কোল ইন্ডিয়া’র ২২ শতাংশ অংশীদারিত্ব বিক্রি করা হয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করবে। শনিবার থেকেই দিল্লিতে কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলি এর প্রতিবাদ জানাচ্ছে।’’ এআইটিইউসি-র আশঙ্কা, এই পরিস্থিতিতে ‘শ্রম আইন’ লঙ্ঘিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি রয়েছে। আইএনটিইউসি নেতা চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, এইচএমএস নেতা শিবকুমার পাণ্ডেরাও সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন।
সিটু নেতা গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, এই সিদ্ধান্তের আগে থেকেই কয়লা-শিল্পের বেসরকারিকরণের পথ তৈরি করা হচ্ছিল। তাঁর দাবি, ২০১৫-য় কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি করা ‘কোল মাইনস স্পেশাল প্রভিশন অ্যাক্ট’ অনুযায়ী, বেসরকারি সংস্থাকে খনি চালানোর আগে মজুত কয়লার দাম বাবদ ‘কোল ইন্ডিয়া’-কে অগ্রিম টাকা দিতে হত। কিন্তু তাতে সংস্থাগুলি রাজি না হওয়ায় ২০১৯-এ আইন সংশোধন করে বলা হয়, অগ্রিম দাম দিতে হবে না। বেসরকারি সংস্থা যে পরিমাণ উৎপাদন করবে, তার দাম কোল ইন্ডিয়াকে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরীর মতে, ‘‘এই ঘোষণার ফলে ‘কোল ইন্ডিয়া’র অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।’’
বিএমএস-এর ইসিএল শাখার সাধারণ-সম্পাদক ধনঞ্জয় পাণ্ডে জানান, সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে যৌথ আন্দোলনের পাশাপাশি, আজ, ১৮মে তাঁরা পৃথক ভাবে প্রতিটি খনির সামনে বিক্ষোভ দেখাবেন। ২০মে জেলাশাসকের (পশ্চিম বর্ধমান) মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দফতরের কাছে ‘কয়লা ব্লক’ নিলামের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে চিঠিও দেওয়া হবে। নিলামের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন আইএনটিটিইউসি-র জেলা চেয়ারম্যান ভি শিবদাসন। এই সিদ্ধান্ত খনি এলাকার জন-জীবনকে সঙ্কটের মুখে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা সিটু প্রভাবিত সিএমএসআই-এর সাধারণ সম্পাদক বিবেক চৌধুরীরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy