Advertisement
২০ ডিসেম্বর ২০২৪
Potato Agricultural Marketing Office

ক্ষতি এড়াতে মাঠের কাঁচা আলুই বিক্রি

জেলা কৃষি দফতরের এক আধিকারিক সুপ্রিয় ঘটক বলেন, ‘‘পরিস্থিতি অনুকূল নয়, তা বলা যায়। বিশেষত, যাঁরা দেরিতে আলু গাছ লাগিয়েছেন তাঁদের সমস্যা বেশি। কৃষি দফতর ক্রমাগত প্রচার চালাচ্ছে।’’

 নাবিধসায় আক্রান্ত ফসল, দেখাচ্ছেন চাষি। ছবি: উদিত সিংহ

নাবিধসায় আক্রান্ত ফসল, দেখাচ্ছেন চাষি। ছবি: উদিত সিংহ

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:১৮
Share: Save:

আমন ধানের ফলনে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রত্যক্ষ প্রভাব বিশেষ পড়েনি পূর্ব বর্ধমান জেলায়, সম্প্রতি জানিয়েছে কৃষি দফতর। কিন্তু তার পরোক্ষ প্রভাব কী আলুর ফলনের উপরে পড়বে, সেটাই এখন প্রশ্ন জেলার চাষি ও কৃষি-কর্তাদের।

পূর্ব বর্ধমান কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় গত বছর আলু চাষ হয়েছিল প্রায় ৭২,৩৪১ হেক্টর জমিতে। এ বার তা হয়েছে প্রায় ৭০,২৮০ হেক্টরে। বুলবুলের প্রভাবে মাঠ থেকে আমন ধান কাটতে পারেননি চাষিরা। তার উপরে মাঠও ভিজে থাকায় আলু চাষ পিছিয়ে যায়। এখন আবার খামখেয়ালি আবহাওয়ায় আলু গাছে ধসা রোগ দেখা দিচ্ছে বলে অভিযোগ চাষিদের বড় অংশের। তাঁদের দাবি, কুয়াশা থাকলে দেরিতে রোপণ হওয়া গাছ ধসার হাত থেকে বাঁচানো কঠিন। বারবার কীটনাশক ‘স্প্রে’ করেও তা বাঁচবে কি না সন্দেহ। তাই নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কাঁচা আলু তুলে বাজারে পাঠাচ্ছেন অনেক চাষি।

জেলা কৃষি দফতরের এক আধিকারিক সুপ্রিয় ঘটক বলেন, ‘‘পরিস্থিতি অনুকূল নয়, তা বলা যায়। বিশেষত, যাঁরা দেরিতে আলু গাছ লাগিয়েছেন তাঁদের সমস্যা বেশি। কৃষি দফতর ক্রমাগত প্রচার চালাচ্ছে।’’ সম্প্রতি পাঁচ জেলার কৃষি আধিকারিকদের নিয়ে বর্ধমানে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার। তিনি মেমারি, জামালপুরে পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন। তাঁর কথায়, “আবওহাওয়ার জন্য সমস্যা হচ্ছেই। চাষিদের সচেতন করতে আমরা মাঠে নেমেছি।’’

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-১৮ মরসুমে প্রতি হেক্টরে আলুর ফলন হয়েছিক সাড়ে ৩৫ টন। গত মরসুমে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য আলুর ফলন কমে দাঁড়িয়েছিল প্রতি হেক্টরে মাত্র ২৩ টন। এ বছর জেলার ২৮ শতাংশ জমিতে দেরিতে চাষ শুরু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৮-১০ শতাংশ জমির গাছে নাবিধসা দেখা দিয়েছে।

বর্ধমান ২ ব্লকের মহিলা চাষি সামন্নুসে বিবির অভিযোগ, ‘‘২২ বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছিলাম। ধসা রোগে সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বারবার কীটনাশক দিয়েও বাঁচানো যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে কাঁচা আলু তুলে বাজারজাত করতে হচ্ছে।’’ ওই এলাকারই বুদ্ধদেব ঘোষ দাবি করেন, ‘‘আলু বড় হওয়ার মুখে এ রকম আবহাওয়ার জন্য ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। উৎপাদনও কমবে। আতঙ্কেই কাঁচা আলু মাঠ থেকে তুলে ফেলছেন অনেকে।’’ মেমারির আলু চাষি নারায়ণচন্দ্র পাল, জামালপুরের সুকুর আলিরাও বলেন, “ধসার প্রকোপ দেখেই চাষিরা ভয়ে কাঁচা আলু মাঠ থেকে তুলে ফেলছেন। তাতে ফলনের হিসেবেও অনেকটা কম দেখাবে। হিমঘরে আলু মজুত হবে কি না, সেটাও ভাবতে হবে।’’

প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সংগঠন সূত্রে জানানো হয়, এখন বাজারে পোখরাজ আলু থাকার কথা। কিন্তু কাঁচা আলু তুলে ফেলার কারণে জ্যোতি আলুও দেখা যাচ্ছে। পোখরাজ-জ্যোতির প্রতি ৫০ কেজির প্যাকেটের এখন বাজারদর প্রায় ৬৫০ টাকা। ওই সংগঠনের জেলা সম্পাদক (পূর্ব বর্ধমান) সুনীল ঘোষ দাবি করেন, ‘‘গত বার মাঠ থেকে প্রতি প্যাকেট আলু বিক্রি হয়েছে গড়ে ১৫০ টাকায়। হিমঘরে আলু রাখার পরে চাষিরা শেষ দিকে সে দাম পাননি। ক্ষতি পোষাতে এখন মাঠ থেকেই অনেক চাষি কাঁচা আলু তুলে বিক্রি করে দেওয়ায় হিমঘরগুলি মার খাবে।’’ পরের বছর বাজারে আলুর সঙ্কট হতে পারে বলেও আশঙ্কা তাঁর।

জেলার কৃষি বিপণন দফতরের এক কর্তার দাবি, উত্তরপ্রদেশেও ধসার জন্য প্রচুর আলু নষ্ট হয়েছে। সেখান থেকে আলু জেলায় আসেনি। জোগানের জন্য কাঁচা আলুই বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘মার্চে হিমঘর খোলার পরে গোটা পরিস্থিতি বোঝা যাবে।’’ (শেষ)

অন্য বিষয়গুলি:

potato Framers Agricultural Marketing Office
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy