হোরশুনায় মেয়েদের আড্ডা। —নিজস্ব চিত্র।
... সে কি ভোলা যায়।’
এক সময়ে তাঁদের বাড়ির ঠিকানায় লেখা থাকত হোরশুনা গ্রামের নাম। এখন বিবাহ সূত্রে কেউ থাকেন অন্য এলাকায়, কেউ বা ভিন্ রাজ্যে। গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ কমলেও নাড়ির টান আজও অটুট। সেই মেয়েরা রবিবার এক সঙ্গে ফিরলেন তাঁদের গ্রামে। ঝাপসা হয়ে যাওয়া শৈশব-কৈশোর উঠে এল তাঁদের চোখের সামনে। ছেলেবেলার খেলার সাথী, স্কুলের সবপাঠীদের সঙ্গে সময় কাটালেন তাঁরা। গ্রামবাসীর উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানে তাঁরা হাঁটলেন স্মৃতির সরণিতে। আর একটি বার প্রাণের মাঝে খুঁজে পেলেন সখাকে।
কালনার সুলতানপুর পঞ্চায়েতের ছায়াঘেরা এই গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত। এই গ্রামের ছেলে ‘ন্যাশনাল ডিজ়াস্টার রেসপন্স ফোর্স’-এর (এনডিআরএফ) কাজি হুজাফাউদ্দিন গ্রামবাসীর কাছে একদিন প্রস্তাব দেন, বিবাহসূত্রে দূরদূরান্তে চলে যাওয়া গ্রামের মেয়েদের একদিনের জন্য ফিরিয়ে আনা হোক গ্রামে। সেই প্রস্তাব মনে ধরে অনেকেরই। এগিয়ে আসেন সমাজসেবী রবিউল মণ্ডল-সহ অনেক বাসিন্দা। ঠিক হয় পাঁচ-ছ’দশক আগে বিয়ে হয়ে গিয়েছে, এমন মহিলাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে। মিলন অনুষ্ঠানের নাম হবে ‘মাতৃভূমির মৈত্রী সমারোহ’।
এ দিন সকাল থেকে অচেনা দেখাচ্ছিল হোরশুনা গ্রামকে। আশেপাশের খালিশপুর, উৎরা, রসুলপুর, আয়মাপাড়া, বুলবুলিতলা, বিটরা-সহ নানা এলাকা থেকে বহু মহিলা ১০টা বাজার আগেই হাজির হয়েছিলেন তাঁদের বাপের বাড়ির গাঁয়ে। ভিন্ রাজ্য এবং দূরের জেলা থেকে অনেকে চলে এসেছিলেন শনিবারই। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছিল প্রায় পাঁচশো। বহু বছর পরে গ্রামের মাটিতে পা রেখে অনেকে মিলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন, তাঁদের দেখা সেই খেলার মাঠ, চাষের জমি, পুকুর ঘাট, রাস্তা আগের মতো আছে কিনা। অনেকে স্কুলের সহপাঠীদের বদলে যাওয়া মুখের সঙ্গে অতীত মেলানোর চেষ্টা করেন। তার পরে কথায় কথায় জীবন্ত হয়ে ওঠে স্কুলে যাওয়া ও খেলাধুলোর সেই দিনগুলি। বর্ণালী সাহা বলেন, ‘‘এই উদ্যোগ এক কথায় দারুণ। চোখে জল এসেছিল। প্রাথমিক স্কুলে যাদের সঙ্গে পড়েছি, তাদের সবাইকে কাছে পেয়েছি। এত আনন্দ আগে পাইনি। ময়নাতে বিয়ে হয়েছে। বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা হওয়ার সুযোগ ছিল না। এমন একটা কাজ গ্রামের ছেলেরা করবে তা ভাবতেই পারিনি। মন খুলে কথা বলেছি। আবদার করেছি, প্রত্যেক বছর যেন এমন অনুষ্ঠান হয়।’’
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘‘এমন উদ্যোগ আগে দেখিনি। এখান থেকে মেয়েরা অনেক কিছু শিখে বাড়ি ফিরবেন।’’ উদ্যোক্তাদের তরফে কাজি হুজাফা বলেন, ‘‘৪০-৫০ বছর আগে বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়েরা দীর্ঘদিন পরে সহপাঠীদের দেখে আনন্দ করেছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy