Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
TMC

মেলেনি দেহ আনার খরচ, পূর্বস্থলীতে সরব তৃণমূল

গুজরাতের মোরবী শহরে সেতু দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে সেখানে গয়নার দোকানে কাজ শিখতে যাওয়া হাবিবুলের। দেহ পূর্বস্থলীর বাড়িতে আসার পরেই রাতে সেখানে পৌঁছন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ।

হাবিবুলকে শ্রদ্ধা। নিজস্ব চিত্র।

হাবিবুলকে শ্রদ্ধা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২২ ০৯:৩১
Share: Save:

রবিবার গভীর রাতে ফোনে এসেছিল দুঃসংবাদ। সোমবার গভীর রাতে পূর্বস্থলীর কেশববাটী গ্রামে কফিনে বন্দি দেহ ফিরল হাবিবুল শেখের (১৭)। গুজরাত থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছনোর পরে, সেখান থেকে গাড়িতে পূর্বস্থলী আনা হয় দেহ। ভোরে সৎকারের ব্যবস্থা হয়। দেহ আনার খরচ বা ক্ষতিপূরণ, কিছুই এখনও গুজরাত সরকারের তরফে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ মৃতের পরিবার ও তৃণমূল নেতৃত্বের।

গুজরাতের মোরবী শহরে সেতু দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে সেখানে গয়নার দোকানে কাজ শিখতে যাওয়া হাবিবুলের। দেহ পূর্বস্থলীর বাড়িতে আসার পরেই রাতে সেখানে পৌঁছন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। মঙ্গলবার সকালে পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, এলাকার বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়-সহ বেশ কিছু তৃণমূল নেতা। রবীন্দ্রনাথের অভিযোগ, ‘‘বিমানে দেহ পাঠানোর খরচও গুজরাত সরকার দেয়নি। এখনও ক্ষতিপূরণের অর্থ পায়নি পরিবার। আমরা পরিবারটির পাশে রয়েছি।’’

গ্রামে এ দিনও ছিল শোকের আবহ। পরিবারটির সঙ্গে দেখা করতে আসেন অনেকে। বাড়ির বাইরে বসেছিলেন হাবিবুলের ঠাকুরদা আজিজুল শেখ। তিনি বলেন, ‘‘রবিবার রাতে ঘুম থেকে উঠে ফোন ধরতেই এক জন জানান, নাতির মৃত্যু হয়েছে। হাত থেকে ফোন পড়ে যায়। তবে আমরা ঠিক করি, নাতির দেহ শেষ বারের মতো গ্রামে আনা হবে।’’ শোকস্তব্ধ অবস্থায় বাড়ির দুয়ারে বসেছিলেন হাবিবুলের মা লুতফা বিবি। তাঁকে ঘিরে রেখেছেন পড়শিরা। লুতফা বলেন, ‘‘সংসারের খারাপ অবস্থার জন্যই ছেলেকে গুজরাতে পাঠাতে হয়েছিল। সে যে এ ভাবে কফিনে বন্দি হয়ে ফিরবে, কোনও দিন কল্পনাও করিনি!’’

হাবিবুল যাঁর কাছে কাজে গিয়েছিলেন, সেই কাকা সাহিবুল শেখ বলেন, ‘‘রবিবার বিকেলে ভাইপো আরও চার জনের সঙ্গে সেতুতে বেড়াতে গিয়েছিল। ওদের সঙ্গে বছর দশেকের এক বালকও ছিল। এতটাই দুর্ভাগ্য, ভাইপো যেখানে ছিল, সেতুর সেই অংশটাই ভেঙে নীচে পড়ে যায়। ওকে আর ফিরে পেলাম না!’’ স্থানীয় বাসিন্দা মিঠু শেখ বলেন, ‘‘ধান, পাট বিক্রি করে লাভ আগের মতো হচ্ছে না। তাই ভিন্‌ রাজ্যের পথ ধরতে হচ্ছে এলাকার অনেককেই।’’ কেশববাটী লাগোয়া আঁশটেপুর গ্রামের বাসিন্দা আনন্দ দাসের কথায়, ‘‘চাষের জমিতে ধারাবাহিক কাজ মেলে বছরে মাস চারেক। ধান কাটার সময়ে দৈনিক মজুরি ২৫০ টাকা, অন্য সময়ে ২০০ টাকা। এই পরিস্থিতিতে আমাদের পরিবারের কমবয়সী ছেলেকেও অন্য রাজ্যে কাজে পাঠাতে হয়েছে।’’

হাবিবুলের বাড়ির কাছেই মহাদেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়। সেখানে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েও, পড়া চালিয়ে যেতে পারেননি হাবিবুল। এ দিন প্রধান শিক্ষক আসরফ আলি শেখ-সহ শিক্ষক-শিক্ষিকারা হাবিবুলের বাড়িতে এসে তার মাকে সান্ত্বনা দেন। স্কুলের শিক্ষকদের দাবি, হাবিবুল স্বভাবে নম্র-বিনয়ী ছিল। একাদশ শ্রেণিতে কলা বিভাগে ভর্তি হয়ে কয়েক দিন ক্লাসও করেছিল। গুজরাতে যাওয়ার আগে রেজিস্ট্রেশন করিয়েছিল। পরে ফিরে পরীক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনাও ছিল তার। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘মাধ্যমিকের পরে স্কুলছুট হয়ে কিছু ছাত্র ভিন্‌ রাজ্যে কাজে যাচ্ছে, এ বিষয়টি আমাদেরও নজরে এসেছে। এলাকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতিই এর কারণ। তবে তারা যাতে ফিরে এসে পরীক্ষা দেয়, সে জন্য ফোন করে বোঝানো হয়।’’

রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানান, হাবিবুলের মায়ের হৃদযন্ত্রের অসুখ রয়েছে। তাঁর স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আছে কি না, তা দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার সব রকম ভাবে পরিবারটির পাশে রয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Gujarat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy