দুর্গাপুর আদালতের সামনে অভিযুক্ত অজয়প্রতাপ সিংহ। নিজস্ব চিত্র (ইনসেটে) উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় ও ভি শিবদাসনের সঙ্গে অভিযুক্ত। ফাইল চিত্র
অবৈধ বালির কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগে তৃণমূল নেতা তথা পশ্চিম বর্ধমানের কুলটির প্রাক্তন কাউন্সিলর অজয়প্রতাপ সিংহকে গ্রেফতার করল কাঁকসা থানার পুলিশ। রবিবার রাতে তাঁকে কুলটির কুলতোড়া থেকে ধরা হয়। সোমবার তাঁকে দুর্গাপুর আদালতে তোলা হয়। বিচারক চার দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্ত বলেন, “অবৈধ বালির কারবারে জড়িত অভিযোগে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতকে জেরা আরও তথ্য জানার চেষ্টা করা হবে।”
অভিযোগ অস্বীকার করে অজয়প্রতাপের দাবি, “কাঁকসার সাতকাহনিয়ায় আমার বৈধ বালিঘাট রয়েছে। কোনও অবৈধ কারবারে আমি যুক্ত নই।” এ দিকে, বালির অবৈধ কারবারের মামলায় তৃণমূল নেতা গ্রেফতার হওয়ায় কটাক্ষ করেছেন বিজেপি ও সিপিএম নেতৃত্ব। তবে তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিধান উপাধ্যায় বলেন, “অভিযুক্তের সঙ্গে দলের সম্পর্ক নেই। পুলিশ যা ব্যবস্থা নেওয়ার, নেবে।”
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ, মঙ্গলবার কুলটির মিঠানিতে প্রাক্তন বিধায়ক তথা দলের জেলা চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের ডাকে কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সে জন্য রবিবার রাতে নিয়ামতপুরে আসানসোল পুর-প্রশাসক বোর্ডের সদস্য মীর হাসিমের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভা করছিলেন অজয়প্রতাপ। সভা শেষে, বাড়ি বরাকরে ফিরছিলেন তিনি। পথে, রাত সওয়া ১০টা নাগাদ তিনি
গ্রেফতার হন।
৯০-এর দশক থেকে তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে অজয়প্রতাপের। ২০০৯-এর সাবেক কুলটি পুরসভার তৎকালীন ৩২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে জয়ী হন তিনি। তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, তার পর থেকে এলাকায় ‘প্রথম সারির তৃণমূল নেতা’ বলে এলাকায় পরিচিত তিনি। এখনও দলের বিভিন্ন সভা, মিছিল থেকে দলের রুদ্ধদ্বার বৈঠকেও অজয়প্রতাপ হাজির থাকেন এবং জেলার শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ যোগ’ আছে বলে দলের একাংশের দাবি।
স্থানীয়দের একাংশেরও দাবি, প্রাক্তন বিধায়ক উজ্জ্বলের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠ’ ভাবেই নানা কর্মসূচিতে অজয়প্রতাপকে দেখা গিয়েছে। যদিও দলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনের দাবি, “দলের সঙ্গে অজয়প্রতাপের কোনও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ নেই।” উজ্জ্বল বলেন, “অজয়প্রতাপ এক সময় তৃণমূলের কাউন্সিলর ছিলেন। তবে আজ তিনি দলের কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদে নেই।” তাঁর দাবি, “দলের যে কোনও সভা, মিছিল, বৈঠকে তাঁকে ডাকা হয় না। তিনি নিজে থেকে চলে আসেন। তা ছাড়া, কেউ যদি দলের কোনও কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসেন, তাঁকে বাধা দিতে পারি না।”
অবৈধ বালির কারবারে অজয়প্রতাপের নাম জড়াল কী ভাবে?
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বালির অবৈধ কারবার বন্ধ করতে জেলা প্রশাসনের তরফে অভিযান চালানো হচ্ছে। অজয় বা দামোদর নদ থেকে বালি তোলায় নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। প্রায় দু’মাস ধরে চলা অভিযানে বহু বালিবোঝাই গাড়িও আটক হয়েছে। গত মাসে কাঁকসা ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর এবং পুলিশ যৌথ ভাবে কাঁকসায় অজয় নদের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায়। পুলিশের দাবি, বেশ কয়েকটি অবৈধ বালিঘাটের সন্ধান মেলে। পাশাপাশি, বনকাটি, সাতকাহনিয়া-সহ বনকাটি পঞ্চায়েতের নানা জায়গায় ‘অবৈধ’ ভাবে বালি মজুত করে রাখা ছিল। দফতরের আধিকারিক সুব্রত ঘোষ জানান, “ওই সব মজুত রাখা বালির কোনও মালিকের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এর পরেই পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৩ অগস্ট অভিযোগ হয়। তদন্তে অজয়প্রতাপের নাম উঠে আসে।
বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের মন্তব্য, “যে কোনও অবৈধ কারবারের সঙ্গেই তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। সময়ে সময়ে তা বেরিয়ে আসে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, “তৃণমূলই জানে, কারা কোন কারবারে জড়িত। অন্যের দিকে আঙুল তোলার আগে তাদের নিজেদের ভাল করে চেনা দরকার।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy