কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
উপাচার্য নিয়োগে রাজ্যের একচেটিয়া অধিকার আইনসঙ্গত নয় বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। এর পরেই আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাধন চক্রবর্তীর অপসারণ চেয়ে, আন্দোলনের তীব্রতা আরও বাড়িয়েছে তৃণমূল অনুমোদিত কলেজ শিক্ষক সংগঠন ‘ওয়েবকুপা’। বুধবার দিনভর ওয়েবকুপার নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অবস্থান-বিক্ষোভ করেন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা। যার জেরে চরম অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। পঠনপাঠনও ব্যাহত হয়েছে বলে অভিযোগ। তবে এই বিক্ষোভ-আন্দোলনকে সরকার বিরোধী ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এমন অচলাবস্থা ও বিশৃঙ্খলা তিনি কড়া হাতে দমন করবেন বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। কয়েক জনের বিরুদ্ধে আসানসোল উত্তর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন বলেও জানান।
গত তিন দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ-অবস্থান কর্মসূচি করছেন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের একাংশ। উপাচার্যের বিরুদ্ধে তাঁরা আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। এরই মাঝে মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার চন্দন কোনারকে চাকরি থেকে বরখাস্তের চিঠি পাঠানো হয়। বিষয়টি জানাজানি হতেই শিক্ষক-শিক্ষিকারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ-অবস্থান শুরু করেন। এক সময়ে তাঁরা কার্যত জোর করেই চন্দনকে তাঁর কার্যালয়ের চেয়ারে বসিয়ে দেন। এর পরেও আন্দোলন থামেনি।
বুধবার সকাল থেকে ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু হয়। নেতৃত্ব দেয় ওয়েবকুপা। সংগঠনের আহ্বায়ক সজল ভট্টাচার্যের দাবি, “উপাচার্য আর্থিক দুর্নীতি করেছেন। উপযুক্ত তদন্ত চাই। তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছি। এর পরেও সরকার তাঁকে উপাচার্য পদে বহাল রাখলে, সহযোগিতা করা হবে না।” উপাচার্যের দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার ও ফিনান্স অফিসার জানাতে পারবেন।”
রেজিস্ট্রার চন্দন নিজের কার্যলয়ে বসে উপাচার্যের বরখাস্তের চিঠি মানেন না দাবি করে বলেন, “পুরো বিষয়টি উচ্চ শিক্ষা দফতরে জানিয়েছি। সেখান থেকে যেমন নির্দেশ আসবে, তেমনই পদক্ষেপ করব।” তাঁর অভিযোগ, “উপাচার্যের আর্থিক দুর্নীতিগুলি ধরতে শুরু করেছি বলেই তিনি আমার প্রতি এই অনৈতিক আচরণ করছেন। তাঁর দুর্নীতির প্রসঙ্গগুলি উল্লেখ করে উচ্চ শিক্ষা দফতরে তদন্ত চেয়ে আবেদন করেছি।” তবে কী ধরনের দুর্নীতি, তা স্পষ্ট করে জানাননি চন্দন। দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স অফিসার সুজাতা হোমরায় কোনারও নির্দিষ্ট কিছু বলতে চাননি। তবে তাঁর বক্তব্য, “ওয়েবকুপার তরফে যে সব খরচগুলির প্রসঙ্গ তুলে উপাচার্যের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ আনা হচ্ছে, সেগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজ়িকিউটিভ এবং ফিনান্স কমিটির আগাম অনুমোদন নিয়েই করা হয়েছে।” উপাচার্যের গাড়ি কেনা ও তাঁর কার্যালয়ের সৌন্দর্যায়নের জন্য অর্থ খরচকে অনিয়ম বলে অভিযোগ তুলেছে ওয়েবকুপা।
উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী অচলাবস্থা ও বিশৃঙ্খলা তৈরির কথা উল্লেখ করে এ দিন আসানসোল উত্তর থানায় অভিযোগ করেছেন। তাতে নাম রয়েছে ওয়েবকুপার কলেজ শাখার আহ্বায়ক সজল ভট্টাচার্য, রেজিস্ট্রার চন্দন কোনার ও প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অসমঞ্জা চট্টরাজের। পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান অচলাবস্থার কথা উল্লেখ করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও উচ্চ শিক্ষা দফতরের মুখ্যসচিবের কাছেও রিপোর্ট পাঠিয়েছেন বলে জানিয়ে উপাচার্য বলেন, “আমার বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ অসত্য। প্রয়োজনে ওঁরা আদালতে মামলা করুন। ওঁরা সরকার বিরোধী আন্দোলন করছেন। কারণ, সরকার আমাকে এই পদে বসিয়েছেন। ওঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন বিঘ্নিত করছেন। পড়ুয়াদের বিপাকে ফেলছেন। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সব রকম অচলাবস্থা ও বিশৃঙ্খলা দমন করব।”
উপাচার্যের বিরুদ্ধে ওয়েবকুপার আন্দোলনকে কটাক্ষ করেছে সিপিএমের কলেজ শিক্ষক সংগঠন ‘ওয়েবকুটা’। সংগঠনের জেলা সম্পাদক চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “বহু আগে আমরাই এই দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছি। দাবি তুলেছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ নিয়ম মেনে হচ্ছে না। তখন ওয়েবকুপা আমাদের বিরোধিতা করেছে। আসলে, উপাচার্যের সঙ্গে এখন ওদের বোঝাপড়ায় খামতি হয়েছে বলেই এমন লোক দেখানো বিক্ষোভ চলছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy