ওয়ার্ড কমিটির সম্পাদক কাদরি এবং কাউন্সিলর রেশমা। নিজস্ব চিত্র।
আসানসোল পুরনিগমের একটি ওয়ার্ড কমিটির সম্পাদকের বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠল। অভিযোগকারী ওই ওয়ার্ডেরই কাউন্সিলর। ঘটনাচক্রে, দু’জনেই শাসকদলের!
আসানসোল পুরনিগমের ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সম্পাদক তথা কাজি নজরুল মুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক মহম্মদ সৈয়দ আলম কাদরির বিরুদ্ধে ওয়ার্ড শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কমিটির কয়েক লক্ষ টাকা নিয়ম ভেঙে ব্যাঙ্ক থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ওই ওয়ার্ডেরই তৃণমূল কাউন্সিলর তথা কমিটির সভাপতি সিকে রেশমা।
রেশমা বৃহস্পতিবার জানান, আসানসোল রেলপাড় বাবুতলার এলাকার তৃণমূল নেতা কাদরির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাইমারি স্কুল ইন্সপেক্টর) সন্দীপ কোনরার কাছে এবং আসানসোল উত্তর থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করে ওয়ার্ড কমিটির সম্পাদক কাদরি স্যরের কাছে ব্যাঙ্কের পাসবই এবং চেক বই জমা দিয়েছিলাম। যে টাকার অঙ্ক তিনি লিখে নিয়ে আসতেন, তা দেখে সই করে দিতাম। কিন্তু কাদরি স্যর পরে টাকার অঙ্কের আগে আর একটি সংখ্যা লিখে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলে নিয়েছেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে আসানসোল উত্তর থানায় অভিযোগ করেছি।’’
দলেরই নেতা কাদরির বিরুদ্ধে দুর্নীতির ‘প্রমাণ’ দিতে গিয়ে তৃণমূল কাউন্সিলর রেশমা বলেন, ‘‘কাদরি স্যরকে এক বার ৩৬ হাজার ২৫০ টাকার চেকে সই করেছিলাম। উনি ওই অঙ্কের আগে ‘২ লক্ষ’ লিখে টাকা তুলে নিয়েছেন। আর এক বার ৯ হাজার টাকা তোলার চেকে সই করিয়ে ৯-এর আগে ২ জুড়ে সেই টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন বলে ব্যাঙ্ক মারফত জানতে পেরেছি।’’ রেশমার দাবি, ‘‘এখন এই অভিযোগ করার পরে ব্যাঙ্কে গিয়ে তদন্ত করে দেখতে হবে পুলিশ এবং স্কুল ইনস্পেক্টরকে। ২০১৮ সাল থেকে কাদরি স্যর ওয়ার্ড কমিটির সম্পাদক রয়েছেন। তাই আরও টাকা এই ভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখতে হবে।’’
যদিও টাকা তছরুপের অভিযোগ উড়িয়ে কাদরি জানান, তাঁর বিরুদ্ধে থানা এবং স্কুল পরিদর্শকের কাছে স্থানীয় কাউন্সিলর রেশমা অভিযোগ করেছেন বলে তাঁর কাছে খবর এসেছে। তিনি বলেন, ‘‘১৫ তারিখ স্কুল ইনস্পেক্টরের কাছে গিয়ে সমস্ত তথ্য তুলে ধরব। আমি এই ধরনের কোনও অপরাধমূলক কাজ করিনি। তদন্ত হলেই সব জানা যাবে।’’
প্রাইমারি স্কুল ইনস্পেক্টর সন্দীপ অভিযোগের প্রাপ্তিস্বীকার করে বলেন, “২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি রেশমা ম্যাডাম একটি অভিযোগ করেছেন। আমি সমস্ত ব্যাঙ্কের নথি নিয়ে দেখা করতে বলেছি। তদন্ত শুরু করে দিয়েছি। অভিযোগ সত্যি হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি অনিমেষ দাস বলেন, ‘‘কাদরি স্যর আমাদের দলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। এখনও তিনি দলের কর্মী, এটা অস্বীকার করার জায়গা নেই। তবে ওঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দায়ের হয়েছে তা যদি সত্যি হয়ে থাকে, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। দল কোনও রকম দুর্নীতি বরদাস্ত করে না।’’
কংগ্রেস নেতা তথা আসানসোল পুরনিগমের কাউন্সিলর গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘‘তৃণমূলের রাজত্বে এই ধরনের অভিযোগ নতুন নয়। এখন দেখার পুলিশ এবং প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেয়। লিখিত অভিযোগ যখন হয়েছে, তখন ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কিন্তু পুলিশ আদৌ কি কোনও ব্যবস্থা নেবে? না কি আসানসোল পুরনিগম থেকে উধাও হয়ে যাওয়া ৮৭ লাখ টাকার মতো এই মামলারও ‘রফা’ হয়ে যাবে?’’ বিজেপির আসানসোল জেলা সভাপতি বাপ্পা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তৃণমূল এখন আর কাটমানি নেয় না। তৃণমূল এখন লুটমানি শুরু করেছে। আমরা এ কথা বলছি না। তৃণমূলের কাউন্সিলরই থানায় অভিযোগ করেছেন। গোটা রাজ্য জুড়ে কী ভাবে লুটমানি চলছে, তা প্রতি দিন প্রমাণিত হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy