শরদ পওয়ারের দিল্লির বাংলোয় ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক। — ফাইল চিত্র।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণেই ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটির বৈঠকে হাজির হতে পারেননি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দিল্লিতে বৈঠক শেষে বিজেপি বিরোধী জোটের তরফে এই অভিযোগ করা হল। কংগ্রেস নেতা কেসি বেণুগোপাল বলেন, ‘‘সমন্বয় কমিটির সদস্য অভিষেককে আজকেই তলব করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এই ঘটনা কেন্দ্রের প্রতিহিংসার রাজনীতির উদাহরণ।’’ ‘ইন্ডিয়া’র তরফে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতেও রয়েছে ‘বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনীতি’র প্রসঙ্গ।
বৈঠক শেষে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে বেণুগোপাল জানান, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালে হবে বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র প্রথম জনসভা। মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্বের মতো বিষয়গুলি সামনে রেখে ওই সমাবেশ হবে। সেই সঙ্গে বুধবার দিল্লিতে সমন্বয় ও নির্বাচনী রণকৌশল কমিটির প্রথম বৈঠকের পর এই ঘোষণা করে বেনুগোপাল বলেন, ‘‘যত দ্রুত সম্ভব আসন সমঝোতার বিষয়ে আমরা আলোচনা করব।’’
ঘটনাচক্রে, শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবারই অভিষেককে তলব করেছিল ইডি। তাই এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারের বাড়িতে ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় ও নির্বাচনী রণকৌশল কমিটির প্রথম বৈঠকে হাজির ছিলেন না অভিষেক। ছিলেন না সিপিএমের কোনও প্রতিনিধিও। দুই দলের অনুপস্থিতিতেই ইন্ডিয়া-র শরিক দলগুলির মধ্যে আসন বণ্টন প্রক্রিয়া, যৌথ নির্বাচনী প্রচার ও জনসভা নিয়ে আলোচনা হয়। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে অভিষেকের জন্য ফাঁকা রাখা হয়েছিল একটি চেয়ার।
বৈঠকের পর কংগ্রেস নেতা বেণুগোপালের পাশাপাশি এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার এবং সমন্বয় কমিটিতে ডিএমকের প্রতিনিধি তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী টিআর বালু হাজির ছিলেন। বৈঠকে ছিলেন সিপিআই নেতা ডি রাজা-সহ ১২টি দলের প্রতিনিধিরা। সমন্বয় কমিটির সদস্য জেডিইউ সভাপতি লালন সিংহের পরিবর্তে দলের প্রতিনিধি হিসাবে হাজির ছিলেন সঞ্জয় ঝা।
বৈঠক শুরুর আগেই বুধবার সকালে অভিষেকের জন্য আসন ফাঁকা রাখা নিয়ে শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা সঞ্জয় রাউত বলেন, “আজকেই তাঁকে (অভিষেক) ডেকে পাঠিয়েছে ইডি। আমরা তাঁর জন্য একটি আসন ফাঁকা রেখে এই বার্তাই দিতে চাইছি যে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি ‘ইন্ডিয়া’র সদস্যদের উপর অত্যাচার করছে।” তাঁকে যে ইডি আবার তলব করেছে, তা নিজেই জানিয়েছিলেন অভিষেক। তিনি নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে রবিবার লিখেছিলেন, ‘‘ইন্ডিয়ার সমন্বয় কমিটির প্রথম বৈঠক ১৩ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে, যে কমিটির আমিও এক জন সদস্য। কিন্তু ইডি ওই দিনই আমাকে হাজিরা দেওয়ার জন্য নোটিস দিয়েছে! এই মাত্র সেই নোটিস পেলাম। ৫৬ ইঞ্চি ছাতির কাপুরুষতা ও অন্তঃসারশূন্যতা দেখে বিস্মিত না হয়ে পারছি না।’’ মঙ্গলবারই তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছিল, সমন্বয় কমিটির বৈঠকে নয়, ইডির ডাকে সাড়া দিয়ে সিজিও কমপ্লেক্সেই যাবেন অভিষেক। বুধবার সকাল ১১টা ১২ মিনিটে ইডি দফতরের দিকে রওনা দেয় অভিষেকের গাড়ি। সকাল ১১টা ৩৪ মিনিটে ইডি দফতরে ঢোকেন অভিষেক।
প্রসঙ্গত, গত ১ সেপ্টেম্বর দুপুরে মুম্বইয়ের সান্তাক্রুজে বিজেপি বিরোধী ২৮টি দলের শীর্ষ নেতা-নেত্রীদের বৈঠকে তৈরি হয় ‘ইন্ডিয়া’র ১৩ জনের কো-অর্ডিনেশন (সমন্বয়) কমিটি। ওই কমিটিতে তৃণমূলের প্রতিনিধি হিসাবে রয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই কমিটিতে ১৪ জন সদস্য থাকার কথা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সিপিএমের তরফে কোনও নাম ঘোষণা করা হয়নি। ১৩ জনের সমন্বয় কমিটির অন্য নামগুলি হল শরদ পওয়ার (এনসিপি), কেসি বেণুগোপাল (কংগ্রেস), টিআর বালু (ডিএমকে), তেজস্বী যাদব (আরজেডি), হেমন্ত সোরেন (জেএমএম), মেহবুবা মুফতি (পিডিপি), ওমর আবদুল্লা (ন্যাশনাল কনফারেন্স), সঞ্জয় রাউত (শিবসেনা-উদ্ধব), লালন সিংহ (জেডিইউ), জাভেদ আলি খান (সমাজবাদী পার্টি), ডি রাজা (সিপিআই) এবং রাঘব চড্ডা (আপ)।
বিজেপি বিরোধী ১৭ দলের জোটের প্রথম বৈঠক হয়েছিল গত ২৩ জুন। বিহারের রাজধানী পটনায়। সে রাজ্যে ক্ষমতায় নীতীশ কুমারের জেডিইউ এবং লালুপ্রসাদ যাদবের আরজেডি। দ্বিতীয় বৈঠক হয় ১৭-১৮ জুলাই। কর্নাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে। সে রাজ্যে সদ্য ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস। সেখানে ২৬টি দলের শীর্ষনেতাদের উপস্থিতিতে জোটের নাম স্থির করা হয়। ৩১ অগস্ট-১ সেপ্টেম্বর মুম্বইয়ে তৃতীয় বৈঠকে ২৮টি বিরোধী দলের ৬৩ জন প্রতিনিধি উপস্থিতি ছিলেন। মুম্বই বৈঠকের পরে শরদ-কন্যা তথা এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে জানিয়েছিলেন, ইন্ডিয়ার পরবর্তী বৈঠক হবে দিল্লিতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy