Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

গেরুয়া শিবিরে মিষ্টি, নীল-সাদা ‘আঁধারে’

কেউ বলছেন, পরিষেবা দিয়ে একটু বিশ্রাম নিতে গিয়েছেন কর্মীরা। কারও দাবি, পঞ্চায়েতের শিবিরে রয়েছেন কর্মীরা।

বাঁ দিকে, বিজেপি ও ডান দিকে তৃণমূলের শিবির। নিজস্ব চিত্র

বাঁ দিকে, বিজেপি ও ডান দিকে তৃণমূলের শিবির। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৪২
Share: Save:

বর্ধমান-কাটোয়া রোড ধরে ডাকবাংলো মোড়। একটু দূরেই মেলা। মূল মন্দিরে ঢোকার আগেই চোখে পড়ে পাশাপাশি শাসক এবং বিরোধীদের শিবির। গেরুয়া শিবিরে ঝলমলে আলো, নেতা-কর্মীদের ভিড়, অন্যটি অন্ধকার, ফাঁকা। মেলায় আসা লোকেদের টিপ্পনী, ‘‘বোঝা যাচ্ছে না কে শাসক আর কে বিরোধী।!’’

যদিও এমন দাবিকে মান্যতা দিতে একেবারেই নারাজ তৃণমূল। কেউ বলছেন, পরিষেবা দিয়ে একটু বিশ্রাম নিতে গিয়েছেন কর্মীরা। কারও দাবি, পঞ্চায়েতের শিবিরে রয়েছেন কর্মীরা। যদিও আলো জ্বলছে না কেন, বা দলনেত্রীর একটা ছবিও নেই কেন, সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।

পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার শ্রীখণ্ডে চার দিন ধরে চলছে বড়ডাঙার মেলা। সোমবারই ছিল শেষ দিন। মেলা কমিটি, পঞ্চায়েতের মতে, এই ক’দিনে দিন-রাত মিলিয়ে লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়েছে। যদিও জেলা গোয়েন্দা দফতরের হিসেবে দর্শনার্থীদের সংখ্যা ৬০ হাজার। প্রশ্ন উঠছে, পুরভোট যেখানে কড়া নাড়ছে সেখানে জনসংযোগের এমন সুযোগ হাতছাড়া কি করা যায়?

মেলায় আসা দর্শনার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলির কর্মীদের একাংশের দাবি, এ বছর অন্তত জনসংযোগের কাজে অনেকটাই এগিয়ে বিজেপি। মেলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দলীয় পুস্তিকা, লিফলেট বিলি করতে দেখা গিয়েছে নেতাদের। মানুষজনকে গরম জিলিপি খাওয়াতেও দেখা গিয়েছে। জেলা স্তরের নেতারাও পালা করে এসেছেন শিবিরে। রবিবার বিকেলে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, বিজেপির শিবিরে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের ছবির নীচে বসে রয়েছেন জেলা সভাপতি (কাটোয়া) কৃষ্ণ ঘোষ, মঙ্গলকোটের নেতা রানাপ্রতাপ গোস্বামী, সদ্য কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে আসা শ্যামা মজুমদার প্রমুখ। ক্রমাগত পুস্তিকা বিতরণ, ভিড়ে নেমে গিয়ে লোকজনকে জিলিপি খাওয়াচ্ছেন তাঁরা। সেখানে তৃণমূলের শিবির ছিল একেবারেই ফাঁকা।

নীল-সাদা কাপড়ের ক্যাম্পে কোনও আলো, চেয়ার, টেবিল এমনকি, দলনেত্রীর ছবিও চোখে পড়েনি। কিছুটা দূরে পঞ্চায়েতের শিবিরে অবশ্য কয়েকজন বসেছিলেন। দূরেও কিছু চেয়ার রাখা ছিল। বিরোধীদের দাবি, যেখানে পঞ্চায়েত স্তর থেকে সব তৃণমূলের দখলে, সেখানে শিবিরে লোক না থাকা আসলে ‘ভাঙনের চোরাস্রোত’। যদিও শ্রীখণ্ড পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ও স্থানীয় তৃণমূল নেতা শমীন্দ্র দে’র (শশি) দাবি, ‘‘দলের আর পঞ্চায়েতের দু’টি শিবির ছিল। কর্মীরা পঞ্চায়েতের শিবিরে ছিলেন। আবার কয়েকদিন ধরে মেলায় পরিষেবা দিয়ে অনেকেই ক্লান্ত বলে বাড়িতে বিশ্রাম নিতে গিয়েছেন।’’ নেত্রীর ছবি, আলো? কোনও জবাব দিতে চাননি তিনি।

দেখা যায়নি কংগ্রেস, সিপিএমের শিবিরও। কংগ্রেসের কর্মীরা প্রকারান্তরে মেনেও নিয়েছেন লোকাভাব, সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা। মেলায় বন্ধুদের সঙ্গে এসেছিলেন কংগ্রেসের কাটোয়া ১ ব্লক সভাপতি পূর্ণেন্দুশেখর চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য আমরা মেলায় শিবির করতে পারিনি। খারাপ লাগছে।’’ মেলায় ঘুরতে দেখা যায় কাটোয়ার প্রাক্তন বিধায়ক তথা সিপিএম নেতা অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়কে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সারা বছরই মানুষের সঙ্গে থাকি। তাই জনসংযোগ বাড়ানোর জন্য মেলায় আলাদা ভাবে দলীয় শিবির করিনি।’’ যদিও কার্তিক লড়াইয়ের সময়েই কাটোয়া শহরের গোয়েঙ্কা মোড়ে এ ধরনের জনসংযোগ শিবির করতে দেখা গিয়েছে সিপিএমকে। তা নিয়ে অবশ্য মন্তব্য করতে চাননি অঞ্জনবাবু।

বিজেপি জেলা সভাপতি কৃষ্ণ ঘোষের দাবি, ‘‘তৃণমূলের পাশে আর কোনও লোক নেই। নইলে একটি জনবহুল মেলায় শাসকদলের শিবির এ ভাবে ফাঁকা থাকে! এই ছবি দেখে আমাদেরও লজ্জা লাগছে।’’

কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, ‘‘ওই মেলায় আমাদের কর্মীরা দর্শনার্থীদের নানা ভাবে সহযোগিতা করেছেন। হয়তো, সেই সময় মন্দিরের ভিতর অথবা মেলা চত্বরেই কোথাও ছিলেন তাঁরা। তবে ক্যাম্পে দলনেত্রীর ছবি টাঙানো ছিল কি না তা কর্মীদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

TMC BJP Villege Fair Katwa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE