জাকিরা (বাঁ দিকে) ও সুরভি। নিজস্ব চিত্র
বয়স মাত্র তেরো, তখনই বাড়ি থেকে বিয়ের বন্দোবস্ত করা হয়। স্কুলের উদ্যোগে সে যাত্রায় বন্ধ হয় বিয়ে। কাটোয়ার গাঙ্গুলিডাঙার ওই ছাত্রী মাদ্রাসা দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় (ফাজিল) ৪৩৫ নম্বর পেয়ে নজর কেড়েছে। ওই গ্রামেরই আর এক ছাত্রী হৃদযন্ত্রের নানা সমস্যা নিয়েও মাদ্রাসা দশম শ্রেণির পরীক্ষায় ভাল ফল করেছে। কন্যাশ্রী ক্লাবের সহযোগিতাতেই মেয়েদের এই সাফল্য বলে জানান মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
এক সময় বারো, তেরো বয়স হলেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হত মেয়েদের। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রামে বারো-চোদ্দো বছরের ছেলেরা রাজমিস্ত্রির কাজের খোঁজে ছুটত কেরল বা রাজস্থান। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বছর সাতেক ধরে কন্যাশ্রী ক্লাব ও মিনা মঞ্চ মিলে এলাকায় নাবালিকা বিয়ে রুখতে প্রচার চালাচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে কমবয়সে বিয়ের কুফল , শরীরে-মনে তার প্রভাব বোঝানো হচ্ছে। টানা প্রচারে কমেছে স্কুলছুটও।
এ গ্রামেরই ছাত্রী জাকিরা খাতুন। তেরো বছয় বয়সে পূর্বস্থলীর হামিদপুরে বিয়ে ঠিক হয় তার। নবম শ্রেণির পড়ুয়া জাকিরা স্কুলে গিয়ে বলে সবটা। স্কুলের তরফে অভিভাবকদের বুঝিয়ে বিয়ে বন্ধ করা হয়। মাদ্রাসার দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ৪৩৫ নম্বর পেয়েছে ওই মেয়ে। জাকিরার বাবা জাকির হোসেন দর্জির কাজ করেন। গত মার্চে আঠারো পেরনোর পরে মঙ্গলকোটে বিয়ে হয়েছে জাকিরার। পড়াশোনা চলছে আগের মতোই। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘এত ভাল ফল আশা করিনি। তবে কম বয়সে বিয়ে হয়ে গেলে এই সাফল্যের মুখ দেখতে পেতাম না।’’ আরবী নিয়ে পড়ে ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে চান তিনি।
ওই স্কুলেরই ছাত্রী সুরভি সুলতানা মাদ্রাসার দশম শ্রেণির পরীক্ষায় ৫০৫ নম্বর পেয়েছে। বছরখানেক আগে কদমপুকুরের বাসিন্দা ওই ছাত্রীর হৃদযন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয়। সুরভির মা মালাইলি বেগম জানান, মাসে হাজার তিনেক টাকার ওষুধ খরচ হয় সুরভির। অর্থের অভাবে গৃহশিক্ষকও রাখতে পারেননি তাঁরা। পেশায় খেতমজুর বাবা, মোর্তাজা শেখ বলেন, ‘‘কষ্ট করেও চেষ্টা করব যেন কারও পড়াশোনা না আটকায়।’’ নাবালিকাদের বিয়ে রুখে প্রত্যন্ত গ্রামে স্কুলছুট বন্ধের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৫ সালে শিক্ষারত্ন পান মাদ্রাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট মহম্মদ জাকিরুদ্দিন শেখ। তিনি বলেন, ‘‘পড়ার জন্য যত সাহায্য লাগে করব। তবু ছাত্রীদের কম বয়সে বিয়ে হয়ে যেতে দেব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy