পথের অনিয়মের এমনই নানা ছবি দেখা যায় রাস্তা জুড়ে। ছবি: উদিত সিংহ ও কাজল মির্জা
ঠিক মতো নেই সিগন্যাল-ব্যবস্থা। বৈধ ‘কাটিং’-ও আলো নেই। চলছে আকছার ‘ডিভাইডার’ ও ‘লেন’ ভাঙা। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে এমনই নানা অনিয়ম, পরিকাঠামোর অভাবের কারণে বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে বলে দাবি চালক থেকে পুলিশ, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই।
শনিবার রাতেই বর্ধমান শহরে তেজগঞ্জের কাছে জাতীয় সড়কের উপরে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় স্থানীয় বাসিন্দা মহাদেব সমাদ্দারের (৫৫)। পুলিশের দাবি, রাতের অন্ধকারে রাস্তা পারাপারের সময়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনার পরে প্রায় সওয়া এক ঘণ্টা দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার রাতে ওই রাস্তাতেই মিরছোবায় ডিভাইডার দিয়ে পারাপার করার সময় ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হয় স্থানীয় বাসিন্দা সহিদুল ইসলাম মোল্লার (৩৬)। ওই দিন সকালে জ্যোৎরামে ‘লেন ভাঙার’ সময়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন স্কুটির চালক-সহ তিন জন। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপর রয়েছে পালসিট টোলপ্লাজা। এখানেও সপ্তমীর দিন সকালে একটি যাত্রিবাহী গাড়ি উল্টে চালক-সহ চার জন জখম হন। পুজোর মধ্যেই সাইকেল নিয়ে পারাপার করতে গিয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। পুলিশের হিসেবে, মহালয়ার পরে জামালপুর থেকে গলসি পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার রাস্তায় ২০টির মতো দুর্ঘটনায় আট জনের মৃত্যু হয়েছে।
কিন্তু কেন এত দুর্ঘটনা? নানা এলাকায় গিয়ে বেশ কিছু কারণ সামনে এসেছে।
প্রথমত, উল্লাস মোড় থেকে পালসিট পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে থাকে অসংখ্য ট্রাক, ডাম্পার, ট্রেলার। এগুলির পিছনে অন্য গাড়ির ধাক্কা মারার সম্ভাবনা থাকে। অথচ, এই ভাবে যানগুলি দাঁড় করানো বেআইনি বলে জানান জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই)।
দ্বিতীয়ত, সচেতনতার অভাব। মোটা টাকা ‘টোল’ দিয়ে দ্রুত গতিতে যাওয়ার জন্যই তৈরি হয়েছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে। কিন্তু গাড়ি চালকের সামনে হুট করে ‘ডিভাইডার’ টপকে বা বেআইনি ‘কাটিং’ ভেঙে চলে আসেন অনেকেই। এমনকি, অনেক সময়ে ডিভাইডারের উপরে থাকা ঘাস খাওয়ানোর জন্য রাস্তার ধারে থাকা বাসিন্দাদের একাংশ ছাগল নিয়ে আসেন। জেলা পুলিশকর্তাদের আক্ষেপ, ‘‘ক্রমাগত সচেতনতার প্রচার চালানো হলেও টনক নড়ছে না অনেকের। বেআইনি কাটিং বন্ধ করতে গেলে গ্রামবাসী বাধা দিচ্ছেন। তাঁরা বুঝতে চাইছেন না নাগরিক সুরক্ষার স্বার্থেই এই পদক্ষেপ।’’ এ দিনই তেজগঞ্জে দেখা গেল, শনিবার রাতে যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, ঠিক সেই জায়গায় সাইকেল নিয়ে এক দম্পতি ডিভাইডার টপকাচ্ছেন!
তৃতীয়ত, জেলা ট্র্যাফিক পুলিশ জানাচ্ছে, বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে রাতে। রাস্তার বেশির ভাগ জায়গা অন্ধকারে রয়েছে। উল্লাস, নবাবহাটের মতো গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বিদ্যুতের খুঁটি থাকলেও আলোর ব্যবস্থা নেই। আবার বেশির ভাগ বৈধ কাটিংয়ে সিগন্যাল ব্যবস্থা, আলো নেই। ফলে, রাস্তা পারাপার করতে গিয়েই দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে।
পুলিশ জানায়, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে রাস্তায় ন্যূনতম আলোর ব্যবস্থা করার আর্জি জানানো হয়েছে। বৈধ কাটিংয়ে প্রয়োজনীয় আলো ও সিগন্যাল ব্যবস্থা তৈরিও জরুরি। জরুরি, বিকল বিদ্যুতের খুঁটি সারিয়ে সেখানে আলোর ব্যবস্থা করারও। পুলিশের আরও প্রস্তাব, রাস্তায় বেশ কিছু কাটিং খতিয়ে দেখে ছোট করা যেতে পারে।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে এক কর্তার দাবি, “কয়েকটি সমস্যা মেটাতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। কয়েকটি সমস্যা সমাধানের জন্য সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্তাদের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। আমরা পুলিশকে বেআইনি কাটিং বন্ধ করতে বলেছি।’’ পুলিশও জানায়, ওই সব কাটিং বন্ধের জন্য এলাকাবাসীর সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy