দ্বিতীয় দিন, বুধবারও পড়ুয়া বেশ কম বর্ধমানের একটি স্কুলে। নিজস্ব চিত্র।
স্কুল খোলার দ্বিতীয় দিন, বুধবার পড়ুয়াদের হাজিরা কিছুটা বাড়লেও, বড় অংশের ছাত্রছাত্রীদের অনুপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ কাটল না। ওই পড়ুয়ারা কি করোনা সংক্রমণের ভয়ে স্কুলমুখো হতে চাইছে না, না পড়াশোনা ছেড়ে তারা কাজে যুক্ত হয়েছে— খোঁজ নিতে বাড়ি-বাড়ি যেতে শুরু করেছেন কিছু স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কিছু স্কুল ফোনে অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। কিছু স্কুল জানিয়েছে, আজ, বৃহস্পতিবার থেকে তাঁদের শিক্ষক-শিক্ষিকারা গরহাজির থাকা পড়ুয়াদের বাড়িতে যাবেন।
বর্ধমান শহরের তেজগঞ্জ স্কুলে প্রথম দিনের থেকে ছাত্র সংখ্যা এ দিন কিছুটা বেড়েছে। তবে তা আশাজনক নয়। প্রথম দিনে নবম শ্রেণিতে চার জন এসেছিল, এ দিন এসেছে ১০ জন। দশম শ্রেণিতে ১১২ জনের মধ্যে হাজির ছিল ২৪ জন। একাদশে ৭৪ জনের মধ্যে হাজির হয় ১৫ জন এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ৫৬ জনের মধ্যে হাজির ছিল ১৬। বর্ধমান ১ ব্লকের কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রায় ৪০০ পড়ুয়ার মধ্যে এ দিন ১৩০ জন হাজির হয়।
আবার পড়ুয়া কমেছে এমন স্কুলও রয়েছে। বর্ধমান শহরের রাজ কলেজিয়েট স্কুল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, মঙ্গলবার নবম শ্রেণিতে ৫০ জনের মধ্যে ১১ জন এসেছিল। বুধবার তা কমে ন’জন। দশম শ্রেণিতে ৬০ জনের মধ্যে মঙ্গল ও বুধবার দু’দিনই ১৪ জন করে পড়ুয়া এসেছে। একাদশ শ্রেণিতে ৭০ জন পড়ুয়ার মধ্যে মঙ্গলবার ১৬ জন এলেও এ দিন তার অর্ধেক এসেছে। দ্বাদশ শ্রেণিতে ৫৬ জনের মধ্যে প্রথম দিনে ১৬ জন এলেও দ্বিতীয় দিনে এই সংখ্যা ছিল ১২।
জেলা ও রাজ্যের বিভিন্ন পুরস্কার পাওয়া বর্ধমান শহরের আদর্শ বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হালও আরও খারাপ। এই স্কুলে শুধুমাত্র নবম ও দশম শ্রেণি পড়ানো হয়। দু’টি ক্লাস মিলিয়ে এখানে মঙ্গলবার পড়ুয়া ছিল পাঁচ। এ দিন এসেছে মাত্র আট জন। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুবীরকুমার দে বলেন, ‘‘পড়ুয়ারা কেন আসছে না, তা জানতে শীঘ্রই ওই সব পড়ুয়াদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।’’ বর্ধমান কৃষ্ণপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সৌমেন কোনার জানান, আজ, বৃহস্পতিবার স্কুলের তরফে বাড়ি-বাড়ি অভিযানের কথা ভাবা হয়েছে। রাজ স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুব্রত মিশ্র জানান, বুধবার তাঁরা ফোন করে পড়ুয়াদের স্কুলে আসতে বলেছেন।
জেলার অন্য প্রান্ত পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নাদনঘাট রামপুরিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে চারটি শ্রেণিতে পড়ুয়ার সংখ্যা ৫৩২ হলেও মঙ্গলবার হাজিরা ছিল ১১০ জনের। বুধবার তা কিছুটা বেড়ে হয় ১৩২ জন। কালনা ১ ব্লকের সিমলন অন্নপূর্ণা কালী বিদ্যামন্দিরে মঙ্গলবারের তুলনায় এ দিন ৩০ জন বেশি পড়ুয়া এলেও মোট ৫০ শতাংশ পড়ুয়াই আসেনি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবনাথ শিকদার বলেন, ‘‘স্কুলে না আসা পড়ুয়াদের দ্রুত ফিরিয়ে আনতে অবিভাবকদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। সমাজমাধ্যমেও এ নিয়ে প্রচার করতে বলা হয়েছে শিক্ষকদের।’’
এই ব্লকের সোন্দলপুর বৃন্দাদেবী বিদ্যামন্দিরের নবম এবং দশম শ্রেণির ১২০ জনের মধ্যে এ দিন এসেছিল ৫৩ জন। প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ পাল জানান, টানা এক সপ্তাহ দু’টি ক্লাসের হাজিরা দেখে যারা আসছে না তাদের নামের তালিকা তৈরি করে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু হবে। কালনা শহরের মহারাজা উচ্চবিদ্যালয়ে এ দিন ছাত্র সংখ্যা বেড়েছে সাত জন। ৭৪৫ জনের মধ্যে হাজির হয়েছিল ৪৮৭ জন। তবে বিজ্ঞান বিভাগের সবাই এসেছিল। ওই স্কুলের শিক্ষকেরা বিকেল থেকে অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
কালনা ২ ব্লকের অকালপৌষ অরবিন্দপ্রকাশ ঘোষ উচ্চ বিদ্যালয়ে হাজিরা কম হওয়ায় চার জন করে শিক্ষক-শিক্ষিকাকে নিয়ে দু’টি দল গড়ে স্কুলে না আসা পড়ুয়াদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করা হয়েছে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুদীপ্ত ঘোষ বলেন, ‘‘কিছু পড়ুয়া বাইরে কাজে চলে গিয়েছে বলে খবর পেয়েছি। বাড়ি-বাড়ি সমীক্ষা করে তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হচ্ছে।’’
মহকুমা স্কুল পরিদর্শক (কালনা) নিলয় ঘোষ বলেন, ‘‘স্কুলগুলির হাজিরা নিয়ে পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করতে আরও খানিকটা সময় লাগবে। তবে যারা স্কুলে আসছে না, তাদের ফেরানোই আমাদের মূল লক্ষ্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy