Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Fog

দৃশ্যমানতা শূন্য, ভোরের শহরে মৃত্যুফাঁদ কুয়াশা

পর পর ধাক্কা লাগে গাড়িগুলিতে। মৃত্যু এড়ানো গেলেও সব মিলিয়ে আহত হন পাঁচ জন। তদন্তে নেমে পুলিশ দেখে, ভোরের শহরে দৃশ্যমানতা কম হওয়ার জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে ইএম বাইপাসে।

‘ঘিরে ধরে...’ ভোরের কুয়াশার জেরে কমেছে দৃশ্যমানতা। মঙ্গলবার, রেড রোডে।

‘ঘিরে ধরে...’ ভোরের কুয়াশার জেরে কমেছে দৃশ্যমানতা। মঙ্গলবার, রেড রোডে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ০৫:৩১
Share: Save:

সরাসরি গার্ডরেলে ধাক্কা মেরে দাঁড়িয়ে পড়ে গাড়িটি। কোনও মতে রক্ষা পেয়ে যান গাড়িতে থাকা চালক-সহ পাঁচ জন। কিন্তু পিছনের দু’টি গাড়ি ও একটি মোটরবাইকের চালকেরা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। ফলে পর পর ধাক্কা লাগে গাড়িগুলিতে। মৃত্যু এড়ানো গেলেও সব মিলিয়ে আহত হন পাঁচ জন। তদন্তে নেমে পুলিশ দেখে, ভোরের শহরে দৃশ্যমানতা কম হওয়ার জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে ইএম বাইপাসে।

শীতের শুরুর এই সময়ে প্রতি বারের মতো এ বছরও গাড়ি বা মোটরবাইক নিয়ে ভোরে রাস্তায় বেরোনোই কষ্টকর হয়ে উঠেছে। কুয়াশার জেরে কার্যত কিছু দেখাই যাচ্ছে না বলে গাড়ি এবং মোটরবাইক চালকদের অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতেই আতঙ্ক বাড়িয়ে ঘটছে পর পর দুর্ঘটনা। যার জেরে চিন্তা বেড়েছে পুলিশ মহলেও।

দেখা যাচ্ছে, ভাঙড় ডিভিশন কলকাতা পুলিশের অন্তর্গত হওয়ার পরে শুধুমাত্র বাসন্তী হাইওয়ে জুড়েই গত দশ দিনে ৩২টি দুর্ঘটনার খবর এসেছে লালবাজারে। এর মধ্যে মোটরবাইক দুর্ঘটনাই বেশি। বাসন্তী হাইওয়েতে দুর্ঘটনায় মৃত্যুও হয়েছে। যদিও এই মৃত্যুর সরকারি হিসাব পুলিশের তরফে দেওয়া হয়নি। স্থানীয় থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, সব মিলিয়ে গত ১০ দিনে এই ডিভিশনেই মৃত্যু হয়েছে চার জনের। অনেকেই গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি।

শুধুমাত্র নভেম্বরে পথ দুর্ঘটনার এমন সংখ্যা বৃদ্ধি আদতে কুয়াশার কারণেই কিনা, সে ব্যাপারেও ধন্দে পুলিশ। বাসন্তী হাইওয়ে ছাড়া গত দশ দিনে ভোরের কলকাতায় পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ২০টি। মৃত্যু হয়েছে আট জনের। এ ক্ষেত্রেও ভোরের রাস্তায় দৃশ্যমানতার অভাব দায়ী কিনা, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। যদিও দুর্ঘটনাগ্রস্ত একটি গাড়ির চালকই বললেন, ‘‘সামনে কী আছে, দেখা যাচ্ছিল না। যত ক্ষণে বোঝা গেল, আর কিছু করার ছিল না।’’ অন্য এক বাইকচালক বলেন, ‘‘সরাসরি গার্ডরেলে ধাক্কা মেরেছিলাম। অবস্থা এমন হয়েছিল যে, গার্ডরেলের ফ্লুরোসেন্ট স্টিকারও চোখে পড়েনি।’’

আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, বাতাসে ভেসে থাকা জলীয় বাষ্পের সূক্ষ্ম কণা রাতের দিকে ঠান্ডা হয়ে আসা মাটির কাছে এসে ঘনীভূত হয়ে ভেসে বেড়ায়। এটাই কুয়াশা। ভোরে মাটি আরও ঠান্ডা হওয়ায় এই কুয়াশাই বাড়ে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে তার সঙ্গে ধূলিকণা, ধোঁয়া মিশলে বা বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রার তারতম্য ঘটলে কুয়াশা ঘন হয়। এই ঘন কুয়াশাই গাড়ি বা মোটরবাইক চালকদের দৃষ্টিপথের প্রধান অন্তরায় হয়। কুয়াশার সঙ্গে ধোঁয়া মিশে যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়, তা স্বাস্থ্যের পক্ষেও ক্ষতিকারক।

এই ক্ষতিকর পরিস্থিতি বদলাবে কবে? প্রতি বছর এমন পরিস্থিতি হলেও কোনও পাকা বন্দোবস্ত হয় না কেন? কেন শুধুই চালকদের সচেতনতা এবং রাস্তায় ফ্লুরোসেন্ট রিফ্লেক্টর লাগানোয় জোর দিয়ে কাজ সারে পুলিশ? বছরের এই সময়ে অনেকেই রাতে পার্টি সেরে ভোরে গাড়িতে ফেরেন। সে সব ভেবে পথে বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থাই বা কী? কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের এক অফিসারের দাবি, ‘‘এক দিনে তো এই সমস্যার সমাধান হবে না। চালককেই সতর্ক হতে হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

fog Accident Winter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy