সুরাটের শাড়ির ঢের৷ —নিজস্ব চিত্র।
হস্তচালিত তাঁতের শাড়ির চাহিদা কমছে কয়েক বছর ধরে। এর জেরে ইতিমধ্যেই কালনা মহকুমায় বহু তাঁত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাঁতশিল্পীদের অনেকেই ছোট পাওয়ার লুম তৈরি করে শুরু করেছিলেন শাড়ি বোনা। তাঁদের অনেকেরই দাবি, পুজোর আগে সুরাতের পলিয়েস্টার সুতোর তৈরি সস্তার শাড়ি বাজারে ছেয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে পাওয়ার লুমে তৈরি শাড়ির বিক্রিতে। শিল্পীরা বলছেন, তাঁতের শাড়ির বাজার দখল করছে সুরাতের শাড়ি। ওই শাড়ি দেদার বিকোচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকায়।
কৃষির পরেই পূর্ব বর্ধমানের বেশি সংখ্যক মানুষ নির্ভরশীল তাঁত শিল্পের উপরে। সব থেকে বেশি তাঁতশিল্পীর বাস কালনা মহকুমায়। মহকুমার সমুদ্রগড়, ধাত্রীগ্রামের জামদানি শাড়ির নাম ছড়িয়েছে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে। হাতে বোনা তাঁত ছেড়ে শিল্পীদের অনেকেই ঋণ নিয়ে অথবা জমানো টাকায় ছোট পাওয়ার লুম চালু করেছিলেন। এক সময়ে এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুক্ত ছিলেন দেড় লক্ষের বেশি মানুষ। পুজোর আগে প্রত্যেক বছর বাজারে আসত নতুন তাঁতের শাড়ি। পুজোর মাস তিনেক আগে থেকে তাঁতিদের এলাকায় শাড়ি বোনার ‘খটখট’ আওয়াজে সরগরম থাকত মহল্লা। সে সব কার্যত ইতিহাস হতে চলেছে, বলছেন তাঁতশিল্পীরা। তাঁদের দাবি, গত এক দশক ধরে ক্রমশ শাড়ি বিক্রি কমেছে। করোনা ঠেকাতে জারি লক-ডাউনের প্রভাব পড়েছিল
এই শিল্পে।
কম দামের পলিয়েস্টার সুতোর তৈরি এই শাড়ি বড় বড় গাড়িতে আসছে ব্যবসায়ীদের কাছে। প্রত্যেক ‘রোল’-এ থাকছে ৩০-৩৫টি শাড়ি। মাড় দিয়ে ইস্ত্রি করে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে সেই শাড়ি। এক বিক্রেতা বলেন, ‘‘আগে ১৫০ টাকাতেও সুরাতের শাড়ি মিলত। তবে এখন দাম হয়েছে ১৭০-১৮০ টাকা। একটু ভাল মানের শাড়ির জন্য ৩০০-৩৫০ টাকা খরচ করতে হবে। দাম কম হওয়ার কারণে সুরাতের শাড়ির ব্যাপক চাহিদা তৈরি রয়েছে। এই শাড়ির বিক্রি বাড়ায় স্থানীয় তাঁতশিল্পীদের হাতে এবং পাওয়ার লুমে তৈরি শাড়ির বিক্রি
অনেক কমেছে।’’
শ্রীরামপুরের তাঁতশিল্পী কমল দাসের কথায়, ‘‘পাঁচটি তাঁত যন্ত্র ছিল আমার। এখন একটিও নেই। লাভ না হওয়ায় আর তাঁত বুনি না। আমার মতো অজস্র তাঁতশিল্পী অন্য পেশায় চলে গিয়েছেন।’’ আর এক তাঁতশিল্পী বিশু রায়ের কথায়, ‘‘একটি তাঁতের শাড়ি বুনতে ৭০০-৮০০ টাকা খরচ হয়। বাজারে তাঁতের শাড়ি নিয়ে গেলে অর্ধেক দামও মেলে না। যাঁরা পাওয়ার লুমে শাড়ি তৈরি করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছিলেন, তাঁদের ব্যাপক ক্ষতি করেছে সুরাতের কম দামের শাড়ি।’’ অনেকের দাবি, নকশাতেও সুরাতের শাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিতে
পারছেন না তাঁতশিল্পীরা।
মহকুমা হ্যান্ডলুম দফতরের আধিকারিক রঞ্জিত মাইতি বলেন, ‘‘সরকারি নানা প্রকল্পের মাধ্যমে হস্তচালিত তাঁতশিল্পীদের সহযোগিতা করা হয়। সুরাতের কম দামের শাড়িতে ব্যবহার করা হয় কম দামের পলিয়েস্টার সুতো। তবে ওখানকার পাওয়ার লুম মেশিন উন্নত হওয়ায় প্রচুর শাড়ি তৈরি করা যায়। সে কারণে সুরাতের পাওয়ার লুমে তৈরি শাড়ির দাম কম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy