শহরের রাস্তায় রাস্তায় ল্যাম্পপোস্ট আছে বিস্তর। কিন্তু, অনেক ল্যাম্পই জ্বলে না! এমনই ছবি কাটোয়া জুড়ে।
কারণ, কোথাও সৌরবাতির ব্যাটারি নিয়ে গিয়েছে চোরের দল। কোথাও পথবাতি ভেঙে পড়ে রয়েছে। কিন্তু, সারানোর দিকে নজর দেওয়া হয়নি। তাই সন্ধ্যা নামলেই ঝুপ করে অন্ধকার নামে শহর জুড়ে। এখন দিন ছোট হয়ে আসছে বলে আরও তাড়াতাড়ি আঁধার ঘনাচ্ছে। স্টেশন রোড, কাছারি রোড বা থানা রোডের মতো জমজমাট জায়গাগুলো বাজার ও দোকানের সৌজন্যে এমনিতেই আলোকিত থাকে। কিন্তু, মেন রোড ছেড়ে এ-গলি ও-গলি কিংবা পাড়ার ভিতরে ঢুকলেই অন্য ছবি—এমনই দাবি বাসিন্দাদের।
দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা চলায় তিতিবিরক্ত শহরের মানুষ। যাতায়াতের সমস্যা তো আছেই, অন্ধকার রাস্তার সুযোগ নিয়ে ছোটখাটো চুরির ঘটনাও ঘটছে বলে জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। মাস দুয়েক আগের কথা। এক সন্ধ্যায় শহরের মাধবীতলা এলাকায় ছাত্র পড়িয়ে ফিরছিলেন গৃহশিক্ষিকা। অন্ধকার গলিতে এক যুবক হঠাৎ এসে ওই মহিলার কানের দুল ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। তাঁর চিৎকারে কিছু লোক এগিয়ে এলেও একটি দুল ছিঁড়ে নিয়ে স্রেফ দৌড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় ওই দুষ্কৃতী।
পুরসভা সূত্রে জানা যাচ্ছে, শহর জুড়ে ৪২৩৫টি বিভিন্ন রকমের পথবাতি রয়েছে। টিউব, সিএফএল, এলইডি বাল্ব জাতীয় আলো রয়েছে পুরসভার। ওই আলোগুলি ছাড়াও শহরের গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্কা মোড়, গৌরাঙ্গপাড়া, পুরসভা মোড়, স্টেশনবাজার চৌরাস্তার মোড়ে ২০টি হাইমাস্ট আলো রয়েছে। এই হাইমাস্ট আলোগুলির সব ক’টিই বিধায়ক তহবিলের অর্থে লাগানো হয়েছিল। এই সব আলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পুরসভার। বছর খানেক ধরে কোথাও লম্বা স্তম্ভে লাগানো অনেকগুলি আলোর মধ্যে একটি জ্বলছে, কোনও মোড়ে সব আলোই বিকল। যেমন, সার্কাস ময়দানে নজরুল মূর্তির সামনের হাইমাস্টের একটি আলো জ্বলে, বাকি তিনটিই বিকল।
পুরসভায় খোঁজ নিয়েই জানা গেল, হাইমাস্ট বাদে ৪২৩৫টি আলোর মধ্যে ৬০০টিই বিকল। কোথাও ল্যাম্পপোস্টই ভেঙে পড়েছে, তো কোথাও দীর্ঘদিন ধরে বিকল আলোই লাগানো রয়েছে। গত অর্থবর্ষে সাংসদ তহবিল থেকে পুর-এলাকায় ১০০টি সৌরবাতি লাগানো হয়েছিল। ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বেশি সংখ্যায় সৌরবাতি লাগানো হয়েছিল। ইতিমধ্যেই তার মধ্যে ৬৫টি সৌরবাতি বিকল হয়ে পড়ে আছে। বেশির ভাগেরই ব্যাটারি, বাল্ব চুরি গিয়েছে। মাস্টারপাড়া, ঘুটকিয়াপাড়া, টেলিফোন ময়দান, মাধবীতলায় একটিও সৌরবাতি জ্বলে না বলে অভিযোগ সেখানকার বাসিন্দাদের। বছরখানেক ধরে বন্ধ হয়ে পড়েছে হাসপাতাল মোড়ে বিধান রায়, স্টেশনবাজার চৌরাস্তায় গাঁধী মূর্তি এবং টেলিফোন ময়দানে জওহরলাল নেহরুর মূর্তির আলোও। দিনের আলো ফুরোলে ওই মনীষীদের মূর্তি আর দেখা যায় না।
স্থানীয়দের ক্ষোভ, অন্ধকার পথে চলতে গিয়ে যেমন হোঁচট খেতে হয়, তেমনই খানাখন্দ ঠাহর করতে না পেরে উল্টে পড়ে মোটরবাইক, সাইকেল, মাঝেমধ্যে রিকশাও। ঘুটকিয়াপাড়ার সোমা মিত্র, মাস্টারপাড়ার পরমা রায়েরা বলেন, ‘‘অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে টিউশন থেকে বাড়ি ফেরা মেয়েদের উত্ত্যক্তও করে কিছু ছেলেপুলে।’’ এমনকী দুর্গোৎসবেও পুর-এলাকার বেশ কিছু জায়গায় অন্ধকার ছিল পথঘাট। ব্যবসায়ী নির্মল দাস, মৃন্ময় সাহাদের কথায়, ‘‘বাজার এলাকায় দোকানের আলোই ভরসা পথচারীদের। লোডশেডিং হলে দোকানও যখন অন্ধকার হয়ে পড়ে, তখন রাস্তায় যাতায়াতে খুবই সমস্যা হয়।’’
কেন পুরসভা কাটোয়ার রাস্তা আলোকিত করতে ব্যর্থ, এই প্রশ্নের জবাবে কাটোয়া শহরে শাসকদলের দ্বন্দ্ব সামনে এসেছে। গত আড়াই বছর বছর ধরে যিনি কাটোয়া পুরসভার দায়িত্বে ছিলেন, সেই অমর রামকে অনাস্থায় হারিয়ে সদ্য পুরপ্রধানের গদিতে আরও এক বার বসেছেন কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি সরাসরি তোপ দেগেছেন প্রাক্তন পুরপ্রধানের দিকেই। রবিবাবুর অভিযোগ, গত আড়াই বছরে বেশির ভাগ সময়ে পুরসভার নানা কাজে অনিয়ম হয়েছে। আলো জ্বালানোর জন্য গণ-আবেদন বা মাস-পিটিশন হলেও পুর-কর্তৃপক্ষ তা গ্রাহ্য করেননি। প্রাক্তন পুরপ্রধানের সঙ্গে অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
তবে, কার্তিক পুজোর আগে সোডিয়াম ভেপার ল্যাম্প লেগে যাবে বলে আশ্বাস রবিবাবুর। পুরসভার লাইটিং সুপারভাইজার রামকৃষ্ণ বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুজোর পরে ২০০টি পথবাতি সারানো হয়েছে। দ্রুত বাকিগুলো সারানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy