ক্লাস নিচ্ছেন জগন্নাথ স্যর। নিজস্ব চিত্র।
রাত পোহালেই রথ। রথের রশিতে টান পড়ার আগে এক অন্য জগন্নাথের কাহিনিতে মুগ্ধ পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম। তিনি জগন্নাথ বাউড়ি। দুটো হাত নেই। শুধু মাত্র দু’পায়ের জোরেই তৈরি করেছেন নিজের ভবিষ্যৎ। এখন ভবিষ্যৎ গড়ছেন আরও হাজারো পড়ুয়ার।
স্থানীয় বেলুটি গ্রামে এক গরিব পরিবারে এই জগন্নাথের জন্ম। জন্ম থেকেই দুটো হাত নেই। পায়ে লেখা অনুশীলন করে পরীক্ষা দিয়ে আজ একটি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তিনি। প্রথম প্রথম স্থানীয় গ্রামবাসীদের মনে সংশয় ছিল, দু’হাত ছাড়া তিনি কী ভাবে স্কুলের ক্লাস নেবেন! তাই অভিভাবকেরা স্কুলের জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে নজর রাখতেন। কিন্তু তাঁর ক্লাস নেওয়া দেখে সমস্ত সংশয় কেটে যায়। দু’হাত ছাড়াই স্কুলে পড়ান পেশায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক জগন্নাথ।
জগন্নাথ এখন জয়কৃষ্ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তাঁর বাবা জনমজুরি করতেন। ছেলে চাকরি পেয়ে বাবাকে আর মজুরির কাজ করতে দেন না। বাড়িতে আছেন মা সুমিত্রাদেবী, স্ত্রী লক্ষ্মী। জগন্নাথের দুই সন্তান, মেয়ে ঋত্বিকা ও ছেলে অষ্টম। সুমিত্রা জানিয়েছেন, জগন্নাথ তাঁদের একমাত্র ছেলে। জন্মের পর থেকেই তাঁর দুটো হাত নেই। তাই নাম রাখা হয় জগন্নাথ। কিন্তু হাত না থাকলেও ছোট থেকেই পায়ে পেন-পেন্সিল ধরে লেখালেখি শুরু। এ ভাবেই উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি টপকে ২০১০ সালে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকের চাকরি। পায়েই এখন চক ডাস্টার ধরে ছাত্রছাত্রীদের পাঠ দেন জগন্নাথ। সহকর্মী জগন্নাথ সম্পর্কে শিক্ষক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘আর পাঁচ জন শিক্ষকের থেকে জগন্নাথের দক্ষতা কোনও অংশে কম নয়। ওঁর বোর্ডওয়ার্ক দেখে আমরা অবাক হয়ে যাই।’’
জগন্নাথের অবশ্য এতে হেলদোল নেই। তাঁর কাছে এটা একটা লড়াই। তিনি জানান, ছোট বেলার প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভূতনাথ পালের অবদান। তিনিই তাঁকে পায়ে পেন্সিল ধরে লিখতে শিখিয়েছিলেন। জগন্নাথ বলেন, ‘‘আমি ছেলেমেয়েদের এই শিক্ষাই দিই যে, সদিচ্ছা ও অধ্যাবসায় থাকলে এক জন সব পারেন। অসাধ্য বলে কিছুই নেই।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy