গ্রামের মন্দিরে উঠে পুজো দেওয়ার ‘অধিকার’ সম্প্রতি লড়াই করে আদায় করেছেন পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার গিধগ্রামের দাস সম্প্রদায়ের মানুষজন। কিন্তু শুধু গিধগ্রাম নয়, বহু মন্দিরে দলিতদের ‘অস্পৃশ্য’ করে রাখা হচ্ছে এখনও, অভিযোগ ‘রবিদাসীয়া মহাসঙ্ঘ’ সংগঠনের। তেমন কয়েকটি মন্দিরের নামের তালিকা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে, দাবি সংগঠনের।
গিধগ্রামের শিবমন্দিরে দাস সম্প্রদায়ের লোকজন পুজো দিতে পারতেন না। প্রশাসনের দ্বারস্থ হন তাঁরা। প্রশাসন সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করার পরে, পুলিশি পাহারায় মন্দিরে পুজো দিতে পারেন দাসপাড়ার বাসিন্দারা।
‘রবিদাসীয়া মহাসঙ্ঘ’-এর তরফে পাঠানো চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, চামার, মুচি সম্প্রদায়ের ‘সরিয়ে রাখার’ ঘটনা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ঋষি রামপ্রসাদ দাসের অভিযোগ, ‘‘আরও বেশ কিছু মন্দিরে আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষজনকে উঠতে দেওয়া হয় না, পুজো দিতে দেওয়া হয় না। সেখানেও প্রশাসন আমাদের অধিকার আদায় করে দিক। সে জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছি।’’
ওই সংগঠনের চিঠিতে যে সব মন্দিরের নাম রয়েছে, তার অন্যতম পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের গঙ্গাটিকুরি শিবমন্দির। সেখানকার সেবায়েত মিলন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘এটি পারিবারিক মন্দির। ট্রাস্টি বোর্ড রয়েছে। গ্রামের সবাই এসে পুজো দেন। তবে গর্ভগৃহে পুরোহিত ছাড়া কেউ ঢোকেন না। প্রাচীন রীতি পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।’’ কেতুগ্রামেরই
বিল্লেশ্বর শিবমন্দির কমিটির সদস্য সুবীর পাল মেনেছেন, সে মন্দিরে দলিতদের পুজো দিতে না দেওয়ার রীতি কয়েকশো বছর ধরে চলে আসছে। তবে তাঁর বক্তব্য, ‘‘এটা কতটা প্রাসঙ্গিক, তা আমরাও ভাবছি। গিধগ্রামের মতো সবার জন্য মন্দিরের দরজা খুলে দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে শীঘ্রই সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
তফসিলি জাতির লোকজনকে গাজনের সন্ন্যাসী হতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে নদিয়ার কালীগঞ্জের বৈরামপুর গ্রামেও। সেখানকার তফসিলি বাসিন্দারা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। পঞ্চায়েতের সদস্য তথা তফসিলি বাসিন্দা উজ্জ্বল দাস বলেন, “এই আধুনিক যুগেও এমন ব্যবস্থা আমরা মানতে পারছি না। স্থানীয় স্তরে কথাবার্তায় লাভ হয়নি। তাই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আমাদের বিশ্বাস, বিচার মিলবে।” ওই শিবমন্দিরের সেবায়ত আশিস কুণ্ডু অবশ্য দাবি করেন, “আমাদের মধ্যে ভেদাভেদ নেই। এটি গ্রামীণ বিষয়। আদালত কী রায় দেয়, দেখি।’’
পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েষা রানি এ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে কেউ চিঠি দিয়েছেন, তা জানা নেই। তবে গিধগ্রামের মতো রীতি অন্য কোথাও আছে কি না, দেখব।’’
(সহ-প্রতিবেদন: সন্দীপ পাল)
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)