প্রতিমা গড়ায় ব্যস্ত। নিজস্ব চিত্র ।
মাটির তাল থেকে নানা রকম পুতুল গড়ার নেশা ছিল তার ছোটবেলা থেকে। সেই নেশাই পেশা করতে চেয়েছে সে। নবম শ্রেণির ছাত্র শঙ্কর ধীবরের লক্ষ্য, স্কুল-কলেজের গন্ডি পেরিয়ে আর্ট কলেজে ভর্তি হবে, হয়ে উঠবে ভাস্কর্য শিল্পী। এখনই পড়াশোনার অবসরে নানা রকম প্রতিমা গড়ে তা থেকে আয়ের একটি অংশ সংসারের খরচে দেয়। বাকি অংশ তুলে রাখে পড়াশোনার খরচের জন্য। এ বার তার হাতে গড়া সরস্বতী প্রতিমাই পুজো হচ্ছে তার স্কুল, আসানসোলের নরসমুদা জনকল্যাণ সমিতি উচ্চ বিদ্যালয়ে।
আসানসোলের নরসমুদায় শুধু শঙ্করের নিজের স্কুল নয়, তার হাতে তৈরি প্রতিমায় পুজো হবে এলাকায় আরও দু’টি স্কুল-সহ কয়েক জায়গায়। পুজোর আগের দিন ব্যস্ততার অন্ত নেই শঙ্করের। তার ফাঁকেই সে জানায়, গত এক সপ্তাহ ধরে কার্যত নাওয়া-খাওয়া ভুলে প্রায় ২০টি প্রতিমা গড়েছে। একাগ্র মনে তুলি হাতে প্রতিমার চোখ আঁকতে আঁকতে শঙ্কর বলে, ‘‘সব খরচ বাদ দিয়ে এ বার প্রায় ২০ হাজার টাকা আয় হবে। কিছু টাকা সংসার চালানোর জন্য মাকে দেব। কিছু টাকা দিয়ে একটা রঙ করার স্প্রে মেশিন কিনব। তুলি দিয়ে ভাল রং করা যায় না।’’
কেন প্রতিমা গড়ার কাজে উৎসাহী হল শঙ্কর? সে জানায়, ছোটবেলায় মৃৎশিল্পীদের মনসা ঠাকুর গড়তে দেখত। তখন তাঁদের সঙ্গে মাটির তাল দিয়ে মূর্তি তৈরির হাতেখড়ি হয়। একটু বড় হওয়ার পরে নিজেই নানা রকম পুতুল গড়তে শুরু করে। প্রথম ২০২১ সালে পাড়ার পুজোর জন্য সরস্বতী প্রতিমা গড়ে। সেই থেকে শুরু। শঙ্কর বলে, ‘‘প্রতিমা গড়ার খুঁটিনাটি শিখিয়েছেন আমার গুরু অর্ধেন্দু দাস।’’ ছাত্রের এই শিল্পীসত্তাকে মর্যাদা দিয়েছেন নরসমুদা জনকল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। প্রধান শিক্ষক দীপক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওর হাতের কাজ খুব ভাল। এ বার তাই ছাত্রের গড়া প্রতিমাই পূজিত হবে আমাদের স্কুলে।’’ খুশি শঙ্করের সহপাঠীরাও। নাকড়াসোতা, সাতা-সহ আশপাশের কয়েকটি এলাকার পুজো উদ্যোক্তারাও শঙ্করের তৈরি প্রতিমা কিনেছেন এ বার। তাঁদেরই এক জন বেণুগোপাল গড়াই বলেন, ‘‘খুব ভাল ঠাকুর গড়ে শঙ্কর। ওর সৃষ্টিকে সম্মান জানিয়েছি আমরা।’’
ভাল লাগা থেকে প্রতিমা গড়া শুরু করলেও, ব্যবসায়িক দিক উপেক্ষা করতে পারেনি সে, জানায় শঙ্কর। সে জানায়, এর পিছনে দু’টি কারণ রয়েছে। প্রথমত, প্রতিমা বিক্রির আয়ে অভাবের সংসারে খানিক সুরাহা হয়। দ্বিতীয়ত, এখনকার পড়াশোনার খরচ মেটানোর পাশাপাশি, ভবিষ্যতে আর্ট কলেজে পড়ার খরচও জমিয়ে রাখতে পারছে সে। তার মা জয়া ধীবর জানান, চার জনের সংসার। বাবা নব ধীবর খুচরো মাছ বিক্রেতা। সেই আয়ে সব খরচ মেটে না। তাই প্রতিমা গড়ে সংসারের সুরাহাও করছে শঙ্কর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy