Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

শোলা শিল্প বাঁচাতে সমবায়, মিলবে ঋণও

সপ্তাহখানেক আগে গ্রামের ৬০ জন শিল্পীকে নিয়ে বিশেষ বৈঠক করেন কাটোয়ার মহকুমাশাসক সৌমেন পাল। ঠিক হয়, সমবায় গড়ে সমস্ত উৎপাদিত শিল্পসামগ্রী বাজারজাত করা হবে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

প্রণব দেবনাথ
মঙ্গলকোট শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৯ ০০:১৯
Share: Save:

চাহিদা রয়েছে, কিন্তু কাঁচামাল ও লাভের অভাবে আগ্রহ হারাচ্ছিলেন নতুন প্রজন্মের শোলাশিল্পীরা। উৎপাদিত সামগ্রী সহজে বাজারে পৌঁছে দিতে সরকারের তরফে শোলা হাব গড়ে দেওয়া হয়। তার পরেও হাল ফেরেনি। মঙ্গলকোটের বনকাপাশির ওই শিল্পীদের নতুন ভাবে উৎসাহ দিতে পুজোর আগে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছে মহকুমা প্রশাসন।
সপ্তাহখানেক আগে গ্রামের ৬০ জন শিল্পীকে নিয়ে বিশেষ বৈঠক করেন কাটোয়ার মহকুমাশাসক সৌমেন পাল। ঠিক হয়, সমবায় গড়ে সমস্ত উৎপাদিত শিল্পসামগ্রী বাজারজাত করা হবে। উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে প্রয়োজন মতো সরকারি ঋণও পাবেন শিল্পীরা। এর সঙ্গেই শিল্পের মূল কাঁচামাল অর্থাৎ শোলা বাইরে থেকে এনে সরবরাহ করারও আশ্বাস দিন প্রশাসন। আশিস মালাকার, জীবন মালাকার, সুভাষ ঘোষের মতো প্রবীণ শিল্পীদের দাবি, শোলার দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভ কমছে। কাজ থেকে সরে যেতেও চাইছেন অনেকে। শিল্প ধরে রাখতে হলে কাঁচামালের সহজ ও সুলভ সরবরাহ খুবই জরুরি। আগামী নভেম্বর থেকেই কাজ শুরুর আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসনও।
প্রায় আড়াই হাজার মানুষের বাস ওই গ্রামে। বেশির ভাগই শোলাশিল্পী। গ্রামের পুরুষ, মহিলাদের তৈরি প্রতিমার প্রতিমার শোলার শাড়ি, গয়না, মুকুট পাড়ি জমায় বিদেশেও। শিল্পীরা জানান, রাজ্যের নানা জায়গায় তো বটেই দিল্লি, মুম্বইয়ের বড় পুজোয় সাজ যায় এখান থেকে। আগে শুধু সাদা শোলায় কাজ হলেও এখন রঙিন কাজের চাহিদা বাড়ছে, দাবি তাঁদের। বিপদভঞ্জন পাল, রাজকুমা পালেরা জানান, পুজো উদ্যোক্তাদের চাহিদা মেনে শোলার বেনারসিও তৈরি করছেন তাঁরা। তবে গোড়ার দিকে ছবিটা এমন ছিল না।
প্রবীণ বাসিন্দা হারাধন মুখোপাধ্যায় জানান, গ্রামের শোলার কাজকে বিশ্বের দরবারে এনেছেন মালাকার পরিবার। শোনা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি থেকে ‘ডাকের সাজ’ আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মাথায় হাত পড়েছিল পুজো উদ্যোক্তাদের। তখনই নানা নকশা, কলকার মতো করে শোলা কেটে, চুমকি দিয়ে সাদা কাপড়ে বসিয়ে তৈরি হয়েছিল ঠাকুরের সাজ। তার পর থেকে পিছনে তাকাতে হয়নি এ গ্রামের শিল্পীদের। ফের সমস্যা বাড়ে থিমের পুজো শুরু হওয়ার পরে।
শিল্পীদের দাবি, এক দিকে পুজোর বরাত কমে যাওয়া, অন্য দিকে শোলার অভাব-দাম না মেলায় পেশা ছাড়তে চাইছিলেন অনেকে। সমস্যা মেটাতে ২০১৩ সালে বনকাপাশি স্কুলের সামনে এক একর জমিতে ৬৪টি ঘরের শোলা হাব তৈরি হয়। যদিও এই ছ’বছরে মাত্র ১২ জন ওই হাবে ঘর পেয়েছেন, বাকি বন্ধই থাকে, অভিযোগ শিল্পীদের। হাবে কাজের পরিবেশ নেই, ক্রেতাও আসে না দাবি রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত শোলাশিল্পী আশিস মালাকারের।
প্রশাসনের আশ্বাস, নতুন পরিকল্পনায় হাল ফিরবে শিল্পের। শোলাশিল্পীদের তরফে কোনও প্রস্তাব এলেও ভেবে দেখা হবে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘সার্বিক উন্নয়নের জন্যই শোলা হাব গড়া। আরও উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy