Advertisement
E-Paper

কেন কম পরীক্ষার্থী, বাড়ি গিয়ে খোঁজ

এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষার জেলার আহ্বায়ক অমিতকুমার ঘোষ বলেন, “গত বছরের চেয়ে এ বার খাতায়-কলমে পরীক্ষার্থী প্রায় ২০ হাজার বেশি।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:২০
Share
Save

কোনও স্কুলে সদ্য শেষ হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট। আবার কোনও স্কুলে শেষ পর্যায়ে পরীক্ষা। তবে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও জেলার অনেক স্কুলের পড়ুয়াই টেস্ট পরীক্ষায় বসেনি বলে জানা যাচ্ছে। শিক্ষক সংগঠনগুলির দাবি, করোনা-পরবর্তী সময়েও এই ছবি যথেষ্ট চিন্তার। পূর্বস্থলী, রায়না ও মঙ্গলকোট শিক্ষা দফতরের বিশেষ মাথা ব্যথার জায়গা।

এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষার জেলার আহ্বায়ক অমিতকুমার ঘোষ বলেন, “গত বছরের চেয়ে এ বার খাতায়-কলমে পরীক্ষার্থী প্রায় ২০ হাজার বেশি। বিভিন্ন কারণে ১০% পর্যন্ত পরীক্ষার্থীরা টেস্টে বসেনি। কেন পরীক্ষার্থীরা স্কুল পর্যন্ত এল না, তা বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রয়োজনে স্কুলগুলিকে অনুসন্ধান করতে হবে।” উচ্চ মাধ্যমিকের আহ্বায়ক অতনু নায়ক বলেন, “অভিভাবকদের বোঝাতে হবে।”

পূর্বস্থলীর হাঁপানিয়া স্কুলে ১৬৫ জন রেজিস্ট্রেশন করিয়েছিল। পরীক্ষা দিয়েছে ১৩৬ জন। সেখানকার কাষ্ঠশালী স্কুলেও ১৩৫ জনের মধ্যে ১০৮ জন, লক্ষ্মীপুরে ২৪২ জনের ২২৬ জন পরীক্ষায় বসেছিল। বিশ্বরম্ভার স্কুলে ২২৭ জন রেজিস্ট্রেশন করেছিল, পরীক্ষায় বসেছে ১৮৯ জন। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ দাস বলেন, “কম পরীক্ষার্থী টেস্টে বসেছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সোমবার থেকে অনুসন্ধান করব।”

বর্ধমান ১ ব্লকের জোয়াদবাদ হাইস্কুলে ৯০ জন রেজিস্ট্রেশন করেছিল। পরীক্ষায় বসেছে ৬২ জন। ওই ব্লকেরই বিদ্যাসাগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৪২ জনের পরীক্ষায় বসার কথা ছিল। বসেছ ১১৮ জন। খণ্ডঘোষের ওঁয়ারি হাইস্কুলে ১২২ জন রেজিস্ট্রেশন করে পরীক্ষায় বসে ৯২ জন, রায়নার এসবি স্কুলে ৯৬ জন রেজিস্ট্রেশন করিয়ে পরীক্ষায় বসে ৭৪ জন। খণ্ডঘোষের স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ তোজামল, রায়নার স্কুলের প্রধান শিক্ষক কোরবান আলিরা বলেন, “অনেকেই কাজে ভিন্‌ রাজ্যে চলে গিয়েছে। কারও বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তার পরেও অনেকের বাড়ি গিয়ে পরীক্ষা হলে নিয়ে আসা হয়েছে।”

একই ছবি মেমারি, কাটোয়াতেও। মেমারির গন্তার বিএম হাইস্কুলে রেজিস্ট্রেশন করেছিল ১৩৬ জন, পরীক্ষা দিয়েছে ১২০ জন। কাটোয়ার ঘোড়ানাশ হাইস্কুল, করুই হাইস্কুলে রেজিস্ট্রেশন করেছে যথাক্রমে ৯৭ ও ১২২ জন। পরীক্ষায় বসেছে ৮৮ ও ৯৩ জন। কেতুগ্রামের গঙ্গাটিকুরি এ এন বিদ্যালয়ে ১৪৭ জন রেজিস্ট্রেশন করালেও পরীক্ষায় বসেছে ৯৯ জন। মঙ্গলকোটের মাথরুনের স্কুলেও ২৬২ জনের মধ্যে টেস্টে বসেছে ২২১ জন। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক পরিমল প্রধানের দাবি, “যতটা জানতে পারছি, কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। ছেলেরা কাজে চলে যাচ্ছে।” মাধ্যমিকের মতো উচ্চ মাধ্যমিকেরও ছবিটা অনেকটা এক। তবে উচ্চ মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থী অনুপস্থিতি তিন থেকে পাঁচ শতাংশ।

এই প্রবণতা আটকানো যাচ্ছে না কেন? বাড়ি বাড়ি যাওয়া আংশিক সময়ের শিক্ষকদের একাংশের দাবি, “অভিভাবকরাই চান না, তাঁদের ছেলেমেয়েরা মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ুক। সে জন্য বুঝিয়ে লাভ হয় না। বরং তাঁরা ভাবেন, দ্রুত হাতের কাজ শিখলে, বাড়িতে তাড়াতাড়ি প্রতি মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা পাঠাতে পারবেন।” মঙ্গলকোটের এক ছাত্রের মা আনুজা বেগম বলেন, “কর্তা অসুস্থ। প্রতি মাসে ওষুধ-চিকিৎসা নিয়ে চার হাজার টাকা খরচ। সেই টাকা কী ভাবে পাব? বিএ, এমএ পাশ সব ছেলেরা ঘুরছে, মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক পড়ে তো ছেলে চাকরি পাবে না। তার চেয়ে কাজ করলে সংসারটা বাঁচবে।”

এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক সুদীপ্ত গুপ্তের দাবি, “আর্থ সামাজিক পরিবেশের মতো স্কুলগুলিতে অহেতুক ছুটির ফলে প্রান্তিক পড়ুয়াদের পড়ায় ব্যাঘাত ঘটছে। তার ফলে অনেকেই পড়া ছেড়ে দিচ্ছে। প্রকৃত ড্রপ আউট অনেক বেশি।” তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের জেলার সভাপতি তপন দাস বলেন, “এই ব্যাধির দায়িত্ব সকলের। সবাই মিলে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman Madhyamik Higher Secondary

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}