আটকে বালির ট্রাক। তিরাটে। নিজস্ব চিত্র।
দামোদরের নাব্যতা বাড়ানোর জন্য একটি সংস্থাকে বরাত দেওয়া হলেও, চলছে বালি ‘পাচার’। এই অভিযোগে মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে টানা বালির ট্রাক, ডাম্পার, ট্রাক্টর আটকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জের তিরাট ও হাড়াভাঙার বাসিন্দাদের একাংশ। বিষয়টি নিয়ে বাসিন্দারা ৬ জুলাই রানিগঞ্জ থানায়, ৭ সেপ্টেম্বর জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) এবং ১৩ জুলাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরে ই-মেল করে অভিযোগ জানিয়েছেন বলেও দাবি। জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) এস অরুণ প্রসাদ বলেন, “বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তিরাট গ্রাম লাগোয়া দামোদরে বালিঘাট রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা নিরূপ মিশ্র, সুনীল মণ্ডল, কল্যাণ গোপরা বলেন, “সম্প্রতি কুমারিডিহি রেল গেট থেকে আমকোলা পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার করেছে পূর্ত দফতর। ওই রাস্তা দিয়ে দশ টন সামগ্রী নিয়ে যাওয়া গাড়ি যেতে পারে। কিন্তু সম্প্রতি দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাটি এক সঙ্গে ৩০-৫০ টন করে বালি নিয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় বালি উপচে পড়ছে। শ্মশান পর্যন্ত বালিঘাট বাড়ানো হচ্ছে। এর ফলে, শ্মশানের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।” পাশাপাশি, অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলনের জেরে বর্ষায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পাইপলাইনে সরবরাহ করা জল ঘোলা হয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাটি দামোদরের নাব্যতা বাড়ানোর কাজ না করে, বালি উত্তোলন করে তা পাচার করছে। এর ফলে, হাড়াভাঙার জীর্ণ সেতু আরও বিপজ্জনকহয়ে উঠেছে।
এ দিকে, প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রতি বছরের মতন এ বছরও ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর বালি উত্তোলন নিষিদ্ধ। মজুত করা বালি বিক্রি করা যাবে। ২০২১-এর ডিসেম্বরে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মাইনস অ্যান্ড মিনারেল ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেড’ (ডব্লিউবিএমডিটিসি) তিরাট ও হিরাপুরের কালাঝরিয়ায় পৃথক দু’টি বেসরকারি সংস্থাকে দামোদরে নাব্যতা বাড়ানোর কাজের বরাত দেয়। বরাতের শর্তগুলি ছিল— এক, নাব্যতা বাড়াতে মাটি, পাথর ও বালি কাটতে হবে। তার জেরে যে বালি পাওয়া যাবে, তা বিক্রির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু বিধি মানতে হবে। দুই, বাসিন্দাদের চলাফেরার জন্য রাস্তা বাঁচিয়ে বালিঘাট থেকে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে ফাঁকা ও তার দিয়ে ঘেরা জায়গায় বালি মজুত করতে হবে। সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা ও ওজন মাপার যন্ত্র বসাতে হবে। তিন, দরিদ্র পরিবার যাতে বাজারদরে বালি পায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। তার দরও বেঁধে দেওয়া হয়।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট সংস্থা তিরাটে কোনও নিয়ম মানছে না। নৌকা ও যন্ত্রের সাহায্যে বালি উত্তোলন করে সরাসরি নদীর পাড় থেকেই বালি পাচার করছে। স্থানীয় এলাকায় এক ঘনফুট বালি ২২ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে, যা শর্তবিরোধী।
এই পরিস্থিতিতে সরব হয়েছেন বিরোধীরাও। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায় ও বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দিলীপ দে বলেন, “রাজ্য সরকার বালির অবৈধ কারবার বন্ধে নানা পদক্ষেপ করার কথা বলছে। কিন্তু দামোদর সংস্কারের নামে বালি পাচার চলছে।” তৃণমূল পরিচালিত তিরাট পঞ্চায়েতের সদস্য আরতি বেসরা জানান, স্থানীয়দের বিক্ষোভের কারণ সঙ্গত। তাতে তাঁদেরও নৈতিক সমর্থন রয়েছে।
যদিও সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর রাঘবেন্দ্র দুবে বলেন, “বিধি মেনেই কাজ করা হচ্ছে। কোথাও কোনও অনিয়ম হচ্ছে না। বালি পাচারের অভিযোগও ভিত্তিহীন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy