ছুটি: মঙ্গলবারের মতো ক্লাস শেষ। বেরিয়ে আসছে ছাত্রীরা। আসানসোলের মণিমালা গার্লস হাইস্কুলে। ছবি: পাপন চৌধুরী।
স্কুল খোলার দিন, মঙ্গলবার দেখা গেল, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানা হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি। তবে দুর্গাপুর, আসানসোল-সহ কিছু জায়গায় মাস্ক না পরেই পড়ুয়াদের স্কুলে আসতে দেখা গিয়েছে। এমনও দেখা গিয়েছে, স্কুলে ঢোকার আগে তারা মাস্ক পরে নিচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের ফুল ছুড়ে বরণ করতেও দেখা গিয়েছে শিক্ষকদের। তবে পশ্চিম বর্ধমান জুড়ে, পড়ুয়াদের উপস্থিতি ৫০ শতাংশের নীচে ছিল। যদিও তা নিয়ে এখনই চিন্তার কিছু নেই বলেই দাবি শিক্ষক ও শিক্ষা দফতরের।
পশ্চিম বর্ধমান জেলা শিক্ষা দফতর জানা গিয়েছে, আসানসোলের স্কুলগুলিতে হাজিরা ছিল গড়ে ৪২ থেকে ৪৭ শতাংশ। দুর্গাপুরেও তা ছিল ৫০ শতাংশের নীচেই। অতিরিক্ত জেলাশাসক (শিক্ষা) সঞ্জয় পাল বলেন, “২২৬টি স্কুলে ৩০ হাজার পড়ুয়া এসেছিল। শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল ১০০ শতাংশ। পড়ুয়াদের উপস্থিতি নিয়ে এখনই ভাবার মতো পরিস্থিতি হয়নি। আরও কয়েকটা দিন বিষয়টি দেখতে হবে।” জেলা স্কুল পরিদর্শক তিমিরবরণ জানা বলেন, “এ দিন ৩০ শতাংশ পড়ুয়াদের উপস্থিতি ছিল।”
মঙ্গলবার সকালে আসানসোলের চেলিডাঙা হাইস্কুলে গিয়ে দেখা গেল, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার এবং থার্মাল গান নিয়ে দাঁড়িয়ে শিক্ষকেরা। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক (টিচার ইনচার্জ) পূর্ণচন্দ্র ঘোষও ছিলেন সেখানে। ছাত্ররা ঢুকতেই তাঁদের হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার দেওয়ার পরে, পেন এবং কেক তুলে দেন শিক্ষিকা বিউটি মুখোপাধ্যায় ও মৌসুমী কর্মকার। স্কুলের প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাসও হয়েছে নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখেই। পূর্ণচন্দ্র বলেন, “গত ২০ মাস প্রায় প্রতিদিনই স্কুলে এসেছি। চতুর্দিকে শ্মশানের নীরবতা ছিল। এ দিন যেন, মরুভূমিতে ফুল ফুটল।” পাশাপাশি, অভিনন্দনসূচক কার্ড নিয়ে ছাত্রদের স্বাগত জানান বার্নপুরের সুভাষপল্লি বিদ্যানিকেতনের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক (টিচার ইনচার্জ) মুনমুন আচার্য। সহকর্মীদের কেউ-কেউ পড়ুয়াদের হাতে পেন, বিস্কুটের প্যাকেটও তুলে দেন। মুনমুন বলেন, “চেনা ছাত্রদের মুখগুলো দেখে খুব স্বস্তি পাচ্ছি।”
স্বস্তি, শুভেচ্ছা ও বিধি মানার ছবি দেখা গিয়েছে দুর্গাপুরেও। জেমুয়া ভাদুবালা বিদ্যাপীঠ ৩৫ শতাংশ পড়ুয়ার উপস্থিতি ছিল বলে জানা গিয়েছে। দুর্গাপুর প্রজেক্টস বয়েজ় হাইস্কুলে কুয়াশার জন্য হাজিরার হার ছিল ৫০ শতাংশ। শিক্ষক জগন্নাথ সাহা জানান, ছেলে-মেয়েদের গোলাপ ফুল ও পেন দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। দুর্গাপুর প্রজেক্টস
টাউনশিপ বয়েজ় হাইস্কুলে কাটা হয়েছিল সুরক্ষা বলয়। ছিল তাপমাত্রা পরীক্ষার ব্যবস্থাও। দুর্গাপুর কেমিক্যালস হাইস্কুলে নবম ও দশম শ্রেণির মোট পড়ুয়ার সংখ্যা ৩০ জন। তাদের মধ্যে মাত্র সাত জন উপস্থিত হয় বলে জানান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায়। গোপালমাঠ হাইস্কুলে পড়ুয়াদের কোভিড-বিধি সংক্রান্ত রঙিন পোস্টার সাঁটানো
ছিল। স্যানিটাইজ়ার কী ভাবে নিতে হবে, তা পড়ুয়াদের হাতেকলমে দেখিয়ে দিয়েছেন নেপালিপাড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কলিমুল হক। ছিল পুষ্পস্তবক দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর ব্যবস্থাও।
এমএএমসি টাউনশিপে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ অনুমোদিত একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে গিয়ে দেখা গিয়েছে, স্যানিটাইজার ‘ডিসপেন্সার’ বসানো হয়েছে। প্রধান শিক্ষক তরুণ ভট্টাচার্য জানান, আরও তিনটি যন্ত্র বসানো হবে। রয়েছে, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া যাবে, এমন যন্ত্র বসানোর পরিকল্পনাও। প্রতিটি বেঞ্চে এক জন করে পড়ুয়াকে বসানো হয়েছে। বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে রাজ্যের কোভিড মনিটরিং কমিটির পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের কো-অর্ডিনেটর সমরেন্দ্রকুমার বসু বলেন, “প্রথম দিনের ছবিটা স্বস্তি দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু আগামী দিনেও এ ভাবেই কোভিড-বিধি মেনে চলতে হবে সব পক্ষকে।”
স্কুলে আসতে পেরে খুশি অহনা বন্দ্যোপাধ্যায়, জয় সিংহ, সুজিত দাস, রশ্মি খাতুনের মতো পড়ুয়ারা। তারা বলে, “বন্ধুদের সঙ্গে, শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা হত না। অনেক সময়েই পড়তে ভাল লাগত না। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।” যদিও অন্য ছবিও দেখা গিয়েছে। ত্রিলোকচন্দ্রপুর জরিলাল স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী দেবযানী দাস বৈরাগ্য বলে, “করোনার জন্য এখনও ভয় হচ্ছে। তাই কয়েক দিন পরেই স্কুলে যাব।” উপস্থিতির হার নিয়ে এখনই চিন্তার কিছু নেই বলেই মন্তব্য করেছেন পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি রাজীব মুখোপাধ্যায়, এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক অমিতদ্যুতি ঘোষেরা। তবে অমিতদ্যুতির সংযোজন: “কেউ যাতে স্কুলছুট না হয়, সে দিকে কড়া নজর রাখতে হবে আগামী কয়েক মাস।” বিজেপির শিক্ষক সেলের জেলা কনভেনার বিকাশ বিশ্বাস বলেন, “এক-দেড় মাস পরে নতুন শিক্ষাবর্ষ। কিছু দিন পরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক। ফলে, অনেক পড়ুয়াই বাড়িতে থেকেই প্রস্তুতি চালাতে চাইছে। তাই এমন উপস্থিতি বলে মনে হয়। কোভিড সংক্রান্ত ভয়ও রয়েছে অভিভাবকদের।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy