Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

ধর্ষণের চেষ্টায় বেকসুর খালাস

বৃহস্পতিবার ওই রায়ের নির্দেশনামায় সরকারি আইনজীবীর ‘সক্রিয়তার অভাবে’র কথা বলেছেন বিচারক। দু’মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার ব্যাপারে জেলাশাসককে পদক্ষেপ করতেও বলা হয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৯ ০১:৪৯
Share: Save:

বারবার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন দেওয়া হয়েছে। কোনও দিনই আদালতে এসে পৌঁছননি সাক্ষীরা। কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টার ওই মামলার ‘মাঝপথে’ই অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস ও তাঁকে হয়রানির জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ রাজ্য সরকারের তহবিল থেকে এক লক্ষ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন কালনা অতিরিক্ত জেলা এবং দায়রা বিচারক তপনকুমার মণ্ডল।

বৃহস্পতিবার ওই রায়ের নির্দেশনামায় সরকারি আইনজীবীর ‘সক্রিয়তার অভাবে’র কথা বলেছেন বিচারক। দু’মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার ব্যাপারে জেলাশাসককে পদক্ষেপ করতেও বলা হয়েছে। কালনা আদালতের প্রবীণ আইনজীবীদের মতে, এমন রায় বেনজির।

এ দিন সন্ধ্যায় মামলার রায় বেরিয়েছে শুনে অবাক পেশায় আনাজ বিক্রেতা ওই কিশোরীর বাবা। তাঁর দাবি, ‘‘আদালতের কোনও কাগজ, সমন পাইনি আমরা। কী রায় হয়েছে, কেন হয়েছে কিছুই জানি না।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালের ২২ মে কালনার মুক্তারপুর এলাকার এক বাসিন্দা লিখিত অভিযোগ করেন, সকালে বাড়িতে ঢুকে ১৫ বছরের মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করে এলাকারই ধ্রুব পাত্র নামে এক যুবক। মেয়ের আর্তনাদে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে পালায় ধ্রুব। অভিযোগ করলে ফল ভাল হবে না বলে ‘হুমকি’ও দেওয়া হয়। পকসো (প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্স) আইনে মামলা হয়। ওই বছরেরই ১৩ ডিসেম্বর মামলার চার্জগঠন হয়। ওই কিশোরী, তার মা এবং এলাকার চার জনের নাম ছিল সাক্ষীর তালিকায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০ থেকে ২২ ডিসেম্বর টানা তিন দিন সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য হয়। তবে আদালতে হাজির হননি কোনও সাক্ষী। পরে আদালত আরও তিন বার তিন দিন করে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য করে। তখনও এক দিনের জন্যও দেখা মেলেনি কোনও সাক্ষীর। বৃহস্পতিবার ওই কিশোরী এবং তার মায়ের আদালতে আসার কথা ছিল। আসেননি তাঁরাও।

আদালতের প্রবীণ আইনজীবীরা জানান, সাক্ষীরা যাতে আদালতে নির্দিষ্ট দিনে পৌঁছন সে জন্য তাঁদের কাছে আগেভাগে সমন পাঠাতে হয়। সরকারি আইনজীবীকেই উদ্যোগী হতে হয়। এ ক্ষেত্রে সরকারি আইনজীবীর সক্রিয়তার অভাব ছিল, তাঁদের দাবি। এ ছাড়াও সরকারি আইনজীবী যেহেতু সরকারের প্রতিনিধি, তাই গাফিলতির ক্ষতিপূরণ রাজ্য সরকারের তহবিল থেকে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে বলেও জানান তাঁরা।

রায়ের নির্দেশনামায় বিচারকও সরকারি আইনজীবীর নাম উল্লেখ করে মামলায় তার সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। রায়ে তিনি জানিয়েছেন, সরকারি আইনজীবীর আচরণে অভিযুক্তকে অহেতুক হয়রান হতে হয়েছে। আরও এক জায়গায় বিচারক জানিয়েছেন, সরকারি আইনজীবীর মনে হয়েছে অভিযুক্তর বিরুদ্ধে তেমন কিছু নেই। সে জন্যই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেননি তিনি।

যদিও গাফিলতির অভিযোগ মানতে চাননি সরকারি আইনজীবী অরিন্দম বাজপেয়ী। তিনি বলেন, ‘‘মাঝে এক বার আইনজীবীদের কর্মবিরতি চলায় সাক্ষীরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে পারেননি। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব।’’

অভিযুক্তর আইনজীবী গৌতম গোস্বামীর বক্তব্য, ‘‘এই মামলায় আমার মক্কেল আগাম জামিন পেয়েছিলেন। সাক্ষীরা আদালতে না আসায় প্রমাণ হয়ে গেল ওর বিরুদ্ধে অভিযোগের তেমন সারবত্তা ছিল না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Rape Court Public Prosecutor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy