Advertisement
E-Paper

মাটির তাল প্রাণ পায় তাঁর হাতে

পরিস্থিতি দেখে নবম শ্রেণির মেয়েকে বাড়িতে রেখে ১৯ বছর আগে স্বামীর পাশে দাঁড়ান পূর্ণিমা পাল। সংসার সামলে মূর্তি গড়ার কাজে হাত লাগান। তাঁর হাতেই এখন প্রাণ পায় কাদামাটির প্রতিমা।

প্রতিমা শিল্পী পূর্ণিমা।

প্রতিমা শিল্পী পূর্ণিমা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:৩৫
Share
Save

কাজের বরাত মিলত। কিন্তু লোক রেখে সেই কাজ উতরে দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। আবার যে ক’টা মূর্তি নিজের হাতে গড়তেন, তা শেষ করতে করতেই পুজো এসে যেত। ফলে কেনার লোক পাওয়া যেত না। লোকসানের ঠেলায় সংসার চালানোই দায় হয়ে গিয়েছিল বর্ধমানের বাদামতলার কাছে খালের বিল মাঠ লেনের প্রতিমা শিল্পী সমীর পালের। পরিস্থিতি দেখে নবম শ্রেণির মেয়েকে বাড়িতে রেখে ১৯ বছর আগে স্বামীর পাশে দাঁড়ান পূর্ণিমা পাল। সংসার সামলে মূর্তি গড়ার কাজে হাত লাগান। তাঁর হাতেই এখন প্রাণ পায় কাদামাটির প্রতিমা।

পূর্ণিমা বলেন, ‘‘কোনও দিন মাটির পুতুলও গড়িনি। কিন্তু সংসার সামলাতে আমাকে এগিয়ে আসতেই হল। মনের জোর আর জেদ নিয়ে বাঁশ কাটা, মাটি মাখার কাজ শিখেছি। এখন তো মূর্তি গড়তে পারি। আমি যখন এই স্টুডিয়োতে পা রেখেছিলাম, তখন ন’টার মতো দুর্গা প্রতিমা হত। এখন সেখানে কুড়িটার বেশি প্রতিমা গড়ি আমরা।’’ বর্ধমান ছাড়াও রামপুরহাটেও পূর্ণিমার তৈরি প্রতিমা মণ্ডপে জায়গা করে নেয়। সমীরের কথায়, “অনেক লড়াই, নানা জনের নানা রকম মন্তব্য সহ্য করে পূর্ণিমা শিল্পীর মর্যাদা আদায় করে নিয়েছে। এখন সবাই ওকে সম্ভ্রম করে, ভালবাসে। কাজের প্রতি নিষ্ঠা থাকলে সংসারের সব কাজ সামলে শূন্য থেকে কী ভাবে দাঁড়াতে হয়, তার প্রকৃত উদাহরণ পূর্ণিমা।’’

বর্ধমানের খালেরবিল মাঠ লেনের এই কুমোরটুলি যথেষ্ট পুরনো। বংশানুক্রমে এখানে প্রতিমা গড়েন সমীর পাল। কিন্তু তাঁর সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পরে গোড়ার দিকে সংসারের কাজেই ব্যস্ত থাকতেন পূর্ণিমাদেবী। স্টুডিয়োর কাছেই পার্কাস রোডের একটি বাড়িতে তাঁরা ভাড়া থাকতেন। সংসার ছেড়ে বাড়ির বাইরে পা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় কিশোরী মেয়েকে নিয়ে তাঁর চিন্তা ছিল। কিন্তু পড়শি ও বাড়ির মালিক মেয়েকে আগলে রাখার ভরসা দেওয়ায় তিনি নিশ্চিন্তে স্বামীর কাজে সাহায্য করতে পেরেছিলেন। পূর্ণিমা বলেন, “এখনও ভোরে রান্না ও জলখাবার করে সকাল ৯টা নাগাদ স্টুডিয়োতে চলে আসি। বাড়ি ঢুকি রাত ১০টা নাগাদ। তারপর আবার রাতের রান্না করি।’’ ভাড়া বাড়ি ছেড়ে কয়েক বছর আগে বর্ধমান শহর লাগোয়া রায়নগরে দোতলা পাকা বাড়ি করেছেন পূর্ণিমা। বাদামতলায় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। রায়নগর থেকে প্রথম দিকে টোটোতে আসতেন, এখন স্কুটার নিয়ে আসেন।

বছর পঞ্চাশের পূর্ণিমা বলেন, “শরীর আর চলে না। মেয়েও এ বার বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। ভাবি আর কাজ করব না। কিন্তু আষাঢ় মাস এলেই মায়ের মূর্তি তৈরির নেশা চেপে বসে।’’ ভরা স্টুড়িয়োর সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “একটা করে প্রতিমা চলে যায় আর মনটা কেঁদে ওঠে। আবার কোনও মণ্ডপে গিয়ে প্রতিমা তৈরির প্রশংসা শুনলেও চোখে জল আসে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman Idol Makers

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}