বাঁ দিকে, নীল-সাদা এই বাড়ি এখন তৃণমূলের কার্যালয় বলে অভিযোগ। ডান দিকে, বাঁধের ধারের বাড়ি। নিজস্ব চিত্র
রাস্তার ধারে নীল-সাদা রং করা বাড়ি। সেটির দেওয়ালে কিছু দিন আগেও লেখা ছিল, ‘বাংলার আবাস যোজনা’। সঙ্গে আইডি নম্বরও। এখন সে বাড়ির গায়ে শুধুই নীল-সাদা রং। সেখান থেকে কিছুটা দূরে, দামোদরের বাঁধ লাগোয়া সেচ দফতরের জায়গাতেও একই আইডি নম্বর দেওয়া অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়া একচিলতে ঘর। আবাস যোজনার পাকা বাড়ি কী ভাবে এমন পাল্টে গেল, সে নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনই সেচ দফতরের জায়গায় সরকারি অনুদানের বাড়ি কী ভাবে তৈরি হল, সে বিতর্কও দেখা দিয়েছে।
‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’ নিয়ে পরপর বিতর্কের মাঝেই এই ছবি ধরা পড়েছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের কাঠুরিয়া গ্রামে। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর তৈরির জন্য এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান পান শঙ্কর মাঝি। ঘর তৈরির পরে শঙ্করকে সামনে রেখে ছবিও তোলা হয়েছিল। অভিযোগ, শঙ্কর সে ঘরে কোনও দিন পা রাখতে পারেননি। নিজের নামে থাকা জায়গার উপরে সরকারি অনুদানে তৈরি বাড়িটি প্রথম দিন থেকেই তৃণমূলের ‘দখলে’ রয়েছে। সে বাড়ির পোশাকি নাম রাখা হয়েছে ‘উন্নয়ন ভবন’। ঘরে রয়েছে এলইডি টিভি, মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতার স্মারক। এই ঘর থেকেই তৃণমূলের কার্যকলাপ চলে বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি।
স্থানীয় সূত্রের খবর, এ নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে হইচই শুরু হতেই, বাঁধের ধারে চিটেবেড়া ঘরে থাকা শঙ্করকে অ্যাসবেস্টস বা টিনের চাল দেওয়া একটি ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়। সেচ দফতরের জায়গায় থাকা ওই ঘরের দেওয়ালে ‘বাংলা আবাস যোজনা’ থেকে বাড়িটি তৈরি বলে লিখে দেওয়া হয়। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী, উপভোক্তার নিজের জায়গায় পাকা ছাদের বাড়ি হওয়ার কথা এই প্রকল্পে। তাই নিয়ম ভাঙার অভিযোগ উঠেছে।
বিডিও (জামালপুর) শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, “পাকা বাড়িটিই শঙ্কর মাঝির। পঞ্চায়েত কর্তারা দাঁড়িয়ে থেকে বাড়ির চাবি তুলে দিয়ে এসেছিল। তার পরেও সেচ দফতরের জায়গায় অস্থায়ী আচ্ছাদনের ঘর করে আবাস প্রকল্পের অনুদানে তৈরি বলে দেখানো হয়েছে। পুলিশকে পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে বলছি। জেলাতেও রিপোর্ট পাঠানো হবে।’’
বছরখানেক আগে ওই বাড়ির উপভোক্তা শঙ্করের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাতনি পূজা মাঝির অভিযোগ, “দাদুকে ওই নীল-সাদা বাড়ির সামনে রেখে ছবি তোলা হয়েছিল। কিন্তু বাড়ির ভিতরে আমরা কোনও দিন ঢুকতে পারিনি। তার বদলে আমাদের দামোদরের বাঁধের ধারে একটি ঘর করে থাকতে দিয়েছে। ওটা তৃণমূলের অফিস বলে সবাই জানে।’’
স্থানীয় তৃণমূল নেতা রামরঞ্জন সাঁতরা এ বিষয়ে আঙুল তুলেছেন তৃণমূল পরিচালিত জামালপুর ২ পঞ্চায়েতের দিকে। তাঁর দাবি, “আমাদের দলের অফিসকে পঞ্চায়েতের কর্তারা অন্যায় ভাবে আবাস যোজনার ঘর বলে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। সে জন্য আমিই শঙ্কর মাঝিকে ওই জায়গায় ঘর করে দিয়েছিলাম।’’ জামালপুর ২ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান উদয় দাসের পাল্টা বক্তব্য, “রামরঞ্জন মিথ্যা বলছেন। সরকারি অনুদানে তৈরি হওয়ার জন্য ওই বাড়ির দেওয়ালে আবাস প্রকল্পের তথ্য দেওয়া হয়েছিল।’’
বিজেপির যুব মোর্চার জামালপুর বিধানসভার আহ্বায়ক অজয় ডকালের অভিযোগ, “কর্তৃত্ব জাহির করতেই প্রশাসনের নির্দেশকে অমান্য করে উপভোক্তাকে তাড়িয়ে দিয়ে আবাস যোজনার ঘর দখল করেছেন তৃণমূলের নেতারা। কিছু দিন আগে দেওয়ালে লেখা আবাস সংক্রান্ত তথ্যও মুছে দেওয়া হয়েছে।’’
সিপিএম নেতা সুকুমার মিত্রের দাবি, “আবাস প্রকল্পের বাড়ি দখল করে দলীয় কার্যালয়! কত বড় দুর্নীতি চলছে।’’ সদ্য নির্বাচিত জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ভূতনাথ মালিক শুধু বলেন, “যাঁরা এমন অন্যায় কাজ করেছেন, তাঁদেরই এর দায়িত্বনিতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy