বহুরূপীর বেশে। নিজস্ব চিত্র।
কালের নিয়মেই পাল্টেছে যুগের হাওয়া। বদল এসেছে আর্থ-সামাজিক কাঠামোয়। আধুনিকতার যুগে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেমন নতুন ধরনের কাজ তৈরি হয়েছে, তেমনই কার্যত হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাচীন লোক-ঐতিহ্যগুলি, বহুরূপী সাজা যাদের অন্যতম।
এক সময়ে দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর আশপাশে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা আমরাই, কাণ্ডেশ্বর, কুড়ুরিয়া, ইছাপুর, সরপি, প্রতাপপুর, কালিকাপুরের মতো গ্রামগুলি থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন রকমের জিনিস নিয়ে দু’পয়সা রোজগারের আসায় নগরীতে আসতেন মানুষজন। নানা রকমের মুখোশ পরে, সঙ সেজে শহরে ঢুকতেন বহুরূপীরাও। দিনের শেষে টাকা রোজগার করে যে যাঁর বাড়ি ফিরে পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিতেন। কিন্তু বহুরূপীদের এই পেশা এখন কার্যত অতীত হতে বসেছে। টিভি, স্মার্টফোন, কম্পিউটারের যুগে শিশুমনে বহুরূপীদের মন মাতানো পোশাক আর খেলা দাগ কাটতে পারছে না।
ফলে, এক কালের বহুরূপীদের অনেকে পুরনো ধ্যানধারণার খেলা ছেড়ে এখন ছুরি, কাঁচি, বঁটি ধার দেওয়া,আনাজ বিক্রি করার মতো ভিন্ন পেশার দিকে ঝুঁকেছেন। তবে সকলে যে তা করতে পারছেন, এমন নয়। এখনও অনেক বহুরূপী পরিবার রয়েছে, যারা এই পেশাকে আঁকড়ে বেঁচে আছে। এমন প্রায় কুড়িটি পরিবার বসবাস করছে সরপি গ্রামের বেইদপাড়ায়। বেশ কয়েকটি পরিবার আছে নাচন গ্রামে। প্রতাপপুর, কালিকাপুরেও বহুরূপীর অস্তিত্ব মেলে। কিন্তু বর্তমানে ওই সব পরিবারের সদস্যেরা আর্থিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
সরপি গ্রামের ইকো-পার্কের কাছে বেইদ পাড়ার বাসিন্দা বছর তেরোর বিশ্ব বেইদ বলে, ‘‘ছোটবেলায় দু-একদিন স্কুলে গিয়েছিলাম। তবে ওই পর্যন্তই। তার পর থেকে আর ও পথ মাড়াইনি। আর এখন বহুরূপী হিসেবে কালী, শিবের রূপ ধরে প্রতিদিন ইস্পাত নগরীতে গিয়ে মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করি। দিনের শেষে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা নিয়ে ঘরে ফিরি। তবে করোনার জেরে সে পথও এখন বন্ধ।’’ বিশ্বর বাবা নববাবু বলেন, ‘‘আমিও এক সময় বহুরূপী সেজে খেলা দেখাতাম। কিন্তু সেই রোজগারে সংসার চলছে না। তাই এ পথ ছেড়ে এখন ছুরি, কাঁচি ধার দিই।’’
এই গ্রামগুলি লাউদোহা ব্লকের মধ্যে পড়ে। বহুরূপীদের জন্য কোনও প্রকল্পের সুবিধা রয়েছে? এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিডিও মৃণালকান্তি বাগচি বলেন, ‘‘বহুরূপীদের জন্য তেমন কোনও সরকারি প্রকল্প নেই। তবে কেউ সমস্যার কথা জানিয়ে আবেদন করলে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy