প্রতীকী ছবি।
এলাকায় পেটি পৌঁছয় মাথাদের কাছে। তার পরে স্থানীয় এজেন্ট, খুচরো বিক্রেতাদের হাত ঘুরে তা পৌঁছে যায় পূর্বস্থলী-সহ লাগোয়া এলাকা এবং ভিন-জেলার নেশা়ড়ুদের কাছে। গত কয়েক বছরে গাঁজার অবৈধ কারবার রুখতে অভিযান চালিয়েছেন, এমন পুলিশকর্মীদের একাংশই জানান, এ ভাবেই চলছে গাঁজার অবৈধ কারবার।
ট্রেন ছেড়ে এখন সড়কপথে ঢুকছে গাঁজা। কিন্তু তা কী ভাবে ছড়িয়ে যায় এলাকায়? কী ভাবেই বা চলে টাকার লেনদেন, এমন নানা প্রশ্ন রয়েছে।
পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘মাথা’দের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ থাকে দক্ষিণবঙ্গের নানা জেলায় ছড়িয়ে থাকা এজেন্টদের। তাদের কাছ থেকেই মেলে বরাত। মণিপুর, নাগাল্যান্ড, ওডিশা-সহ নানা রাজ্য থেকে গাঁজা নিয়ে আসা হয় সেই বরাত অনুযায়ী। বিশেষ সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণ ভাবে এক এক জন এজেন্ট ন্যূনতম ২৫ কেজি গাঁজার বরাত দেয়। গাঁজা হাতে পাওয়ার পরে সেই এজেন্টরা আবার তা বেচে খুচরো কারবারিদের কাছে। গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে থাকা সেই খুচরো কারবারিরা আবার ১০ থেকে ১৫ গ্রামের প্যাকেটে পুরে পুরিয়া হিসেবে তা বিক্রি করেন খদ্দেরদের। তেমনই কয়েক জন খদ্দেরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুরিয়া প্রতি দাম, ২০ থেকে ৬০ টাকার মতো। দাম ও কদর সব থেকে বেশি মণিপুরের গাঁজার।
পুলিশ জানায়, বাড়তি আয়ের লক্ষ্যে খুচরো ব্যবসায়ীরা বেছে নেয় জনবহুল এলাকা, মেলা বা বাজার এলাকা। সম্প্রতি এক রবিবার পূর্বস্থলী ২-র জামালপুরে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে এক হাটে প্রায় প্রকাশ্যেই হাতবদল হচ্ছে পুরিয়ার। এ ছাড়া স্টেশন লাগোয়া গুমটি, চায়ের দোকান, এমনকি বহু বাড়ি থেকেও গাঁজার পুরিয়া মেলে বলে জানা গিয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পূর্বস্থলী থেকে গাঁজার এই কারবার চলে এই ব্লক, কালনা ও কাটোয়া মহকুমা, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের নানা জায়গায়।
এলাকাবাসীর অভিজ্ঞতা, গাঁজার নেশায় বুঁদ কিশোর থেকে প্রবীণ, সকলেই পড়ছেন। ফলে এলাকার সামগ্রিক নিরাপত্তার ছবিটা প্রশ্নের মুখে পড়ছে।
কিন্তু কী ভাবে গাঁজার কারবারিদের মধ্যে লেনদেন চলে? পূর্বস্থলী ১-র শ্রীরামপুরের এক যুবক জানায়, সাধারণ ভাবে ভিন-রাজ্য ও এলাকার মাথা এবং এজেন্টদের মধ্যে লেনদেন হয়, ব্যাঙ্কের মাধ্যমেই। প্রত্যেকের কাছেই দেওয়া থাকে নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট নম্বর। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য বার বার মোবাইলের ‘সিম’ বদলায় কারবারিরা। জেলার গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্তা আবার জানান, এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতৃত্বের একাংশেরও মদত থাকে ওই কারবারিদের সঙ্গে।
তবে এই কারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেই পুলিশের দাবি। পূর্ব বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘গাঁজা সংক্রান্ত মামলাগুলি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। মামলার চার্জশিটে সাধারণ ভাবে মূল কারবারি বা মাথাদের নামও উল্লেখ করা হয়।’’
কিন্তু এর পরেও দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের জুনের মাঝামাঝি কাটোয়া স্টেশন লাগোয়া এলাকা থেকে পুলিশ প্রায় দু’কুইন্টাল গাঁজা উদ্ধার করে। ধরা হয় ফজলুর মল্লিক এবং তিন জন মহিলাকে। এর কিছু দিন আগে গাঙ্গুলিডাঙায় উদ্ধার হয় প্রায় ২০ কেজি গাঁজা। এ ছাড়া পূর্বস্থলীর শিবতলা লাগোয়া এলাকা, হেলেরহল্ট স্টেশন লাগোয়া এলাকা থেকেও গাঁজা পাচারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয় কয়েক জনকে। উদ্ধার হয় কয়েক কুইন্টাল গাঁজা। ১২ জুন পূর্বস্থলী থানার পুলিশ ফের উদ্ধার করে ২৩ কেজি গাঁজা।
এই পরিস্থিতিতে অভিযানে লাভ কী, প্রশ্ন তুলেছেন কালনার বাসিন্দাদের একাংশ। পুলিশের একটি সূত্রের মতে, গাঁজা পাচারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারির সংখ্যা বাড়লেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অধরা থেকে যায় মাথারা। তা ছাড়া ভিন-রাজ্যের যোগ থাকায় অনেক সময় ব্যবস্থা নিতে দেরি হয়। ফলে পগারপার হয় মূল কারবারিরা। যদিও পুলিশ জানায়, বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy