Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Lok Sabha Election 2024

কেউ ভাবে না তাঁদের কথা, আক্ষেপ

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল কেন্দ্রে এ বার মোট ভোটার ২৩ লক্ষ ৩ হাজার ৪২৫ জন। তাঁদের মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৪০ জন।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

অর্পিতা মজুমদার
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৪ ০৭:০৬
Share: Save:

ভোট আসে, ভোট যায়। কিন্তু তাঁদের কথা কেউ ভাবেন না। এমনই অভিযোগ তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের। তাঁদের দাবি, ভোটার সংখ্যার নিরিখে তাঁরা অতি নগণ্য। তা-ই তাঁদের নিয়ে কার্যত কোনও রাজনৈতিক দলই ভাবে না। যদিও রাজনৈতিক দলগুলি সে অভিযোগ মানতে নারাজ।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল কেন্দ্রে এ বার মোট ভোটার ২৩ লক্ষ ৩ হাজার ৪২৫ জন। তাঁদের মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৪০ জন। বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে মোট ভোটার ১৮ লক্ষ ৪৭ হাজার ২৮৩ জন। তাঁদের মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ২৭ জন। তবে, নানা এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের মতে, জেলায় আরও অনেকে তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি রয়েছেন। তাঁদের অনেকে ভোটার তালিকায় নাম লেখাননি। অনেকে লেখালেও তালিকায় নিজেদের তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি বলে উল্লেখ করার সাহস সঞ্চয় করতে পারেননি। সেই সংখ্যা ধরলে ভোটার তালিকায় থাকা তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধির সংখ্যা বেশ কিছুটা বাড়বে।

তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের নিয়ে কাজ করা একাধিক সংগঠনের বক্তব্য, এই সব মানুষদের সম্পর্কে প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি বদলালেও সমাজে এখনও তাঁরা কোণঠাসা। অনেকেই তাঁদের দিকে বাঁকা চোখে তাকান। তাঁদের প্রান্তিক মানুষ বলে মনে করেন। ওই সংগঠনগুলির দাবি, সমাজের এই মানসিকতার জন্য তাঁদের অনেকেই লিঙ্গ পরিচয় সামনে আনতে চান না। সামান্য অংশই বাধা ভেঙে ভোটার তালিকায় নিজেদের তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি বলে উল্লেখ করেন। তাই ভোটার তালিকা দেখে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সংখ্যার আন্দাজ পাওয়া কঠিন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার একাধিক তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধির বক্তব্য, রাজনৈতিক দলগুলি এগিয়ে এলে তবেই তাঁদের জন্য তৈরি করা সরকারি আইন ও প্রকল্প সঠিক ভাবে বাস্তবায়িত হবে। তাঁদের অভিযোগ, কোনও রাজনৈতিক দলই সে ভাবে তাঁদের জন্য ভাবে না। তাঁদেরই এক জন বলেন, “আমরা খুবই অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকি। বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, কর্মসংস্থানের দাবি তো আছেই। পাশাপাশি, আমাদের লড়াই করতে হচ্ছে সামাজিক স্বীকৃতি ও সংরক্ষণের দাবিতে। রাজনৈতিক দলগুলি পাশে থাকলে আমাদের লড়াইয়ের গুরুত্ব বাড়ে।”

রাজ্যের ‘ট্রান্সজেন্ডার ওয়েলফেয়ার বোর্ড’-এর প্রাক্তন সদস্য তথা কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রধান রঞ্জিতা সিংহ বলেন, “সামাজিক ভাবে এই ধরণের মানুষদের দাবিয়ে রাখার প্রবণতা সর্বত্র। রাজনৈতিক দলগুলি এগিয়ে এলে তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের জন্য সরকারি আইন বা প্রকল্প রূপায়ণের কাজে সুবিধা হবে বলে মনে হয়। কিন্তু তেমন কোনও উদ্যোগ রাজনৈতিক দলের নেতাদের পক্ষ থেকে নজরে আসে না।”

রাজনৈতিক দলগুলি যদিও তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার জানান, দুর্গাপুরে তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি রঞ্জিৎ মুর্মু বুথ কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন কয়েক বছর ধরে। তিনি বলেন, “আমরা তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের পাশে আছি। কিন্তু কেন্দ্র বা রাজ্য, কোনও সরকারের তরফেই তাঁদের জন্য সদর্থক ভূমিকা নেওয়া হয় না।” বামপন্থীদের একাংশের উদ্যোগে তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের একজোট করতে একটি সংগঠন গড়া হয়েছে বছর দুই আগে। সেই সংগঠনের নেতা তথা এসএফআই রাজ্য কমিটির প্রাক্তন সদস্যা সুপ্রভা রায় বলেন, “শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান কোনও বিষয়েই বর্তমান রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার কোনও দিশা দেখাতে পারেনি। বিজেপি লোকসভা নির্বাচনের ইস্তাহারে তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের জন্য যা করবে বলেছিল কিছুই করেনি। এই রাজ্যের শাসকদলেরও কোনও উদ্যোগ নজরে আসেনি। আমরা চেষ্টা করছি।” দলে ও গণসংগঠনে তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের বেশি করে আনতে উদ্যোগী হয়েছে সিপিএমও।

বিজেপির জেলা সহ সভাপতি চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের পাশে আমাদের দল সর্বদা আছে।” তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, “দেশে প্রথম ‘ট্রান্সজেন্ডার ওয়েলফেয়ার বোর্ড’ গঠিত হয় আমাদের রাজ্যেই। রাজ্য সরকার সব রকম ভাবে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষজনের পাশে আছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Durgapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy