উপরে, রানিগঞ্জে ও নীচে, দুর্গাপুরে জাতীয় সড়কের সার্ভিস রোডের এই হাল। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ ও বিকাশ মশান
রাস্তার মাঝে যেন ছোটখাট পুকুর। তা পেরিয়ে খানিক এগোলে আবার একই রকম একটি গর্ত। উঁচু-নিচু এই পথে সন্তর্পণে গাড়ি না চালালেই বিপদে পড়ার আশঙ্কা। উপরে ঝাঁ চকচকে রাস্তা দিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে চলেছে যানবাহন। কিন্তু নীচে সার্ভিস রোডের এমনই বেহাল অবস্থা। বরাকর থেকে পানাগড়, ২ নম্বর জাতীয় সড়কের সার্ভিস রোডের এমন হাল প্রায় সর্বত্রই। রানিগঞ্জের রানিসায়ের মোড়ে সার্ভিস রোড সংস্কারের দাবিতে মঙ্গলবার ডিওয়াইএফের তরফে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, জমি-সহ নানা সমস্যায় কাজ করা যাচ্ছে না। সে সব মিটলেই সার্ভিস রোড সংস্কার হবে।
আগে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক ছিল চার লেনের। যাত্রী ও বাসিন্দাদের দাবি, তখন সার্ভিস রোডের হাল তুলনায় ভাল ছিল। কিন্তু ছ’লেনে সম্প্রসারণ প্রকল্পের জেরে নতুন করে সার্ভিস রোড তৈরি করতে হয় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে। তা এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। নতুন করে তৈরি করা সার্ভিস রোড অল্প সময়েই ভেঙে যেতে থাকে বলে অভিযোগ। বিশেষ করে বিভিন্ন মোড়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ। ফলে, দুর্ঘটনা বাড়ছে। যত দ্রুত সম্ভব নতুন করে সার্ভিস রোড তৈরির দাবি উঠেছে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে বৈঠক হলেও এখনও পরিস্থিতি পাল্টায়নি।
অণ্ডাল মোড় হয়ে প্রতিদিন দুর্গাপুরে মোটরবাইক নিয়ে যাতায়াত করেন বেসরকারি সংস্থার কর্মী নিখিলেশ রায়। তিনি বলেন, ‘‘অণ্ডাল মোড়ে দুর্গাপুরের দিকে যাওয়ার সার্ভিস রোডের ভয়াবহ দশা। প্রায় দু’ফুট গভীর গর্ত এক-এক জায়গায়। সাবধানে না চালালে বাইক উল্টে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’’ দুর্গাপুরের ভিড়িঙ্গি মোড়, ডিভিসি মোড়েও সার্ভিস রোডের একাংশ বেহাল বলে জানান যাত্রীরা। সম্প্রতি তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারি যাত্রীদের সমস্যার কথা জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগের আবেদন করে চিঠি দেন জেলা প্রশাসনকে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বহু মানুষ প্রতিদিন ভুগছেন। দুর্ঘটনা ঘটছে। বড় বিপদ ঘটতে পারে। অথচ, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের হেলদোল নেই।’’
রানিগঞ্জ মোড় থেকে আসানসোল যাওয়ার পথে কিলোমিটার দুয়েক দূরে রানিসায়ের মোড়। গাড়ি চালক মুকেশ ভারতী, ডাম্পার চালক অজয় দুবেরা জানান, জামুড়িয়া থেকে রানিগঞ্জের দিকে যাওয়ার সময়ে সার্ভিস রোড ব্যবহার করতে হয় না। কারণ, জাতীয় সড়কের এই দিকে খোলা রাখা হয়েছে। রানিগঞ্জ থেকে জামুড়িয়া যাওয়ার সময় সড়কের উপর ব্যারিকেড করে দেওয়ায় সার্ভিস রোড ধরতে হয়। কিন্তু সার্ভিস রোডের যা হাল, তাতে গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করতে ভয় হয় বলে চালকদের দাবি।
আসানসোল মহকুমা মিনিবাস বাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায়, জামুড়িয়া বণিক সংগঠনের সম্পাদক অজয় খেতানরা জানান, এ নিয়ে প্রশাসনকে বারবার জানানো হলেও ফল হয়নি। বেহাল রাস্তার জেরে মাঝে-মাঝেই গাড়ির যন্ত্রাংশ ভেঙে যায়। তাতে খরচ বাড়ছে। এ দিন সার্ভিস রোড সংস্কারের দাবিতে ডিওয়াইএফের জামুড়িয়া-অজয় পশ্চিম লোকাল কমিটির তরফে সই সংগ্রহ করা হয়। সংগঠনের নেতা বুদ্ধদেব রজক জানান, তাঁরা গণস্বাক্ষর-সহ স্মারকলিপি জেলাশাসক ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবেন। তবে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের প্রকল্প আধিকারিক অরিন্দম হান্ডিক জানান, রানিসায়ের মোড়ে সার্ভিস রোড তৈরির জন্য ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। শরিকি মালিকানাধীন জমির ভাগ নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। তার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সার্ভিস রোড তৈরি করা সম্ভব নয়।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, কোথাও জমি নিয়ে সমস্যা রয়েছে। কোথাও রাস্তার নীচ দিয়ে গ্যাসের পাইপলাইন থাকায় সমস্যা রয়েছে। এমন নানা কারণে কোনও-কোনও জায়গায় সার্ভিস রোড তৈরিই করা যায়নি। কোথাও আবার রাস্তা সরু করতে হয়েছে। কোথাও জায়গার অভাবে রাস্তার পাশে নর্দমা তৈরি করা যায়নি। বৃষ্টি হলে জল বয়ে যায় রাস্তা দিয়ে। রাস্তা ভাঙার সমস্যাও রয়েছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এ সব বিষয় নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক হয়েছে। তা-ও সমাধানসূত্র বেরোয়নি। তবে দ্রুত সুরাহা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তখন নতুন করে পুরো সার্ভিস রোড নির্মাণের কাজ হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy