আসানসোলে। নিজস্ব চিত্র।
সূর্যের তাপে পুড়ছে আসানসোল। পুকুর, কুয়ো শুকিয়ে কাঠ। সকাল ১১টা-১২টা হলে পথঘাটও কার্যত ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। এই দাবদাহ থেকে পক্ষা পেতে ঘরোয়া কিছু টোটকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। পাশাপাশি, পর্যাপ্ত পানীয় জলের অভাবের অভিযোগ উঠছে কিছু জায়গায়। পরিস্থিতির সামাল দিতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে, জানায় প্রশাসন।
আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার শিল্পাঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পূর্বাভাস, আগামী কয়েক দিন ৪০ ডিগ্রির আশপাশেই ঘোরাফেরা করবে শিল্পাঞ্চলের তাপমাত্রা। গত কয়েক দিন ধরে সকাল ৯টা থেকেই ঘণ্টায় প্রায় ২০ থেকে ২৩ কিলোমিটার বেগে গরম হাওয়া (‘লু’) বইছে। এলাকাবাসী জানান, গত সাত দিন ধরে ভোরের দিকে আকাশ মেঘলা থাকায় সকালের দিকে আবহাওয়া তূলনামূলক ভাবে ঠান্ডা থাকছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে শুরু হচ্ছে দাবদাহ।
গরম পড়তেই, শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কটও দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ। সাধারণ ভাবে, সালানপুর ও বারাবনি ব্লকের বেশ কিছু অঞ্চল শিল্পাঞ্চলের অন্য এলাকার চেয়ে শুষ্ক। মাটির তলা ফাঁপা বলে জলের স্তর সহজেই গভীরে নেমে যায়। নরসিংহবাঁধের মনোজ ভুঁইয়া, সেন-র্যালের বাবলি মুখোপাধ্যায়রা বলেন, “পর্যাপ্ত জল পাচ্ছি না। খুবই খারাপ অবস্থা।” পরিস্থিতির সামাল দিতে, স্থানীয় প্রশাসন বারাবনির পানুড়িয়া, মাজিয়ারা, ভানোরা, পুঁচরা, কাশকুলি, সালানপুরের জেমারি, মুক্তাইচণ্ডী, মাধাইচকে জলের ট্যাঙ্কে করে জল সরবরাহ করা হচ্ছে। সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ফাল্গুনী ঘাষি কর্মকার বলেন, “ট্যাঙ্কে করে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল সরবরাহ করা হচ্ছে।” জলের সঙ্কট রয়েছে আসানসোল পুরসভারও বেশ কিছু এলাকাতেও। পুরসভার সেন-র্যালে, ওকে রোড, নরসিংহবাঁধ, রামবাঁধ, পুরানহাট, কুলটির চিনাকুড়ি, কেন্দুয়া বাজার, জনকপুরায় জলের সঙ্কট আছে। পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর চৈতালি তিওয়ারি বলেন, “আমার ওয়ার্ডে প্রবল জল-সঙ্কট আছে। সম্প্রতি বাসিন্দারা পথে নেমে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। এর পরেও, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।” আসানসোল পুরসভার মেয়র বিধান উপাধ্যায় বলেন, “পুরসভার নিজস্ব ৭৫টি জলের ট্যাঙ্ক আছে। বাইরে থেকে আরও ৭৫টি ট্যাঙ্ক এনে মোট ১৫০টি জলের ট্যাঙ্কে করে শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় জল সরবরাহ করা হচ্ছে। কোনও এলাকা যাতে নির্জলা না থাকে, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
এ দিকে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে-সঙ্গে বেড়েছে ঠান্ডা, রঙিন পানীয়ের চাহিদাও, জানাচ্ছেন আসানসোল, বরাকর, বার্নপুর-সহ শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন বাজারের দোকান মালিকেরা। অনুপ মাইতি, মহম্মদ ওসমান নামে দুই দোকানদার জানান, চাহিদার সঙ্গে সঙ্গত রেখে জোগান পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু গরমে এ ধরনের পানীয়গুলি থেকে দূরে থাকারই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস বলেন, “এই সময়ে শরীরে জলের পরিমাণ কমে যায়। হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি থেকে ওআরএস সংগ্রহ করে জলে গুলে খেতে হবে। তা না থাকলে, নুন-চিনির মিশ্রণে কাগজি লেবুর রস গুলেও খাওয়া যেতে পারে।” তবে গরমে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাজারে লেবুর দামও আকাশ ছোঁয়া। একটি কাগজি লেবু ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে ক্রেতারা জানিয়েছেন। বরাকর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিএমওএইচ অনির্বাণ রায় জানান, এই গরমে সহজপাচ্য খাবার খাওয়া খুবই জরুরি। তিনি বলেন, “মশলাহীন সাধারণ ঝোল ভাত ও টক দই শরীরের পক্ষে এই সময় খুবই উপযোগী। রোদে বেরোনোর আগে জল খেতে হবে।”
পাশাপাশি, চিকিৎসকদের পরামর্শ, যাঁরা নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের অসুখ বা কোনও ‘ক্রনিক’ অসুখের ওষুধ খান, গরমে তাঁদের সমস্যা বাড়তে পারে। যতটা সম্ভব তাঁদের চড়া রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। ছাতা ব্যবহার করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, গায়ে ঘাম বসে যাতে ঠান্ডা না লাগে। পর্যাপ্ত পরিমাণে বাড়িতে পাতা দইয়ের ঘোল, নুন লেবুর শরবত, ডাবের জল, যে কোনও টাটকা ফলের রস খাওয়া যেতে পারে। বেশি মাংস খাওয়া এড়িয়ে চললেই ভাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy