কালো ধোঁয়ায় ঢেকেছে পথ। ছবি: উদিত সিংহ
রোজ অফিসে যাওয়ার জন্য পার্কাস রোডের মুখে বাসের জন্য দাঁড়ান বছর পঞ্চান্নর তন্ময়ী সাহা। আগে কোনও দিন সমস্যা না থাকলেও ইদানিং পাঁচ মিনিট দাঁড়ালেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায় তাঁর। চিকিৎসকের পরামর্শে, রাস্তায় বের হলেই নাকেমুখে রুমাল চাপা দিয়ে থাকতে হয়। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘বাস, গাড়ির থেকে গলগল করে কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছে। শ্বাসকষ্ট হবে না তো কী!’’
শহরের ভিতর দিয়ে যাওয়া জিটি রোড ধরে প্রতিদিন কয়েকশো পড়ুয়া স্কুলে যায়। তাদেরও অনেকেরই মাঝেমধ্যে নাক-চোখ জ্বালা করে। অভিভাবকদের অনেকেরই দাবি, রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকার সময় বাস বা অন্য গাড়ি যে ভাবে কালো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে যায়, তাতে অনেক শিশুই অসুস্থ হয়ে পড়ে।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অশোক দত্তের দাবি, ‘‘বায়ু দূষণের জন্য বর্ধমান শহরে প্রতিবছর দশ শতাংশ শিশু শ্বাসকষ্টে ভুগছে। শিশুদের মধ্যে ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি জাতীয় রোগ প্রতি বছর তুলনামূলক ভাবে বাড়ছে।’’
এ শহরের উপর দিয়ে প্রতিদিন ১১৭টি বাস চলে। যার মধ্যে শুধুমাত্র টাউন সার্ভিস দেয় ৮০টি। বাকি বাসগুলি শহর ছাড়িয়ে লাগোয়া এলাকায় যাতায়াত করে। এই বাসগুলির মধ্যে আবার ১০-১২টির কোনও ‘পারমিট’ নেই। এর সঙ্গে চলে অগুনতি লরি, ম্যাটাডর, ভ্যানো। তাদের মাঝে রাস্তায় চলতে ফিরতে শ্বাসকষ্টে ভোগেন অনেক প্রবীণ, বৃদ্ধরাও। বর্ধমান শহরের প্রবীণদের নিয়ে গঠিত একটি সংগঠনের সভাপতি প্রবীর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের সংগঠনে বারোশোর উপর প্রবীণ মানুষ রয়েছেন। তাঁরা শহরের বিধান রায় মূর্তির কাছে, লক্ষ্মীপুর মাঠে বসে আড্ডা দেন। কিন্তু দূষণের চোটে অনেকেই শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। প্রশাসনকে বিষয়টি নিয়ে ভাবার জন্য বলেছি।’’
শহরের বিশিষ্টজন স্বপ্নকমল সরকারের কথায়, ‘‘অনেক ভেবেচিন্তে আমার পত্রিকার নাম রেখেছিলাম ‘আলোবাতাস’। এখন অনেকেই ঠাট্টা করে বলছেন শহরটা কালো বাতাসে ভরে গেল!’’ বর্ধমান আদালতের আইনজীবী রাজদীপ গোস্বামীরও ক্ষোভ, ‘‘দূষণের জন্য আমার কাশি আর কমছে না।’’ অফিসার্স কলোনি থেকে কাছারি রোডে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের রিজিওনাল অফিসে আসেন আধিকারিক সুব্রত হালদার। তাঁর কথায়, ‘‘বাসের কালো ধোঁয়ার জন্য এইটুকু পথ আসতেই শরীর হাঁসফাঁস করে।’’
দূষণের কথা মেনে নিয়েছেন শহরের মিনি ব্যাস অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারাও। সংগঠনের সম্পাদক কাঞ্চন ঘোষ বলেন, ‘‘১৫ বছরের বেশি পুরনো গাড়ি চালানো যাবে না, এই নিয়ম বর্ধমান শহরে চালু হয়নি। ছ’মাস অন্তর দূষণ পরীক্ষা করা হয়। তবে বিএস-৩ (ভারত স্টেজ) গাড়ি থেকে ধোঁয়া বেশি বের হয়।’’
আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের আধিকারিক রানা বিশ্বাস বলেন, ‘‘কাটা তেলে বাসগুলি চালানো হয় বলে কালো ধোঁয়া বের হয়। আমাদের কাছে খবর আছে, বর্ধমান শহরেও কাটা তেলের রমরমা রয়েছে। এ নিয়ে অভিযানও শুরু করেছি।’’ (চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy