লাউদোহার ভুরকুণ্ডার সুবর্ণ সরোবর। নিজস্ব চিত্র।
এক সময় এলাকার চাষাবাদের সুবিধের জন্য তৈরি হয় জলাশয়। সেটা সেন রাজাদের আমল। পরে রাজপাট বদলের সঙ্গে সঙ্গে দুর্গাপুর-ফরিদপুরের ভুরকুণ্ডা গ্রামের ‘সুবর্ণ সরোবরে’র আয়তনও কমতে থাকে। সম্প্রতি সেই সরোবরটিই সংস্কারের দাবি উঠছে গ্রামে। গ্রামবাসীদের দাবি, সরোবরটি সেজে উঠলে পর্যটন ব্যবসা ও চাষাবাদে সুবিধা হবে।
সময়টা খ্রিস্টিয় দশম শতাব্দীর শেষ থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়। সাবেক বাংলা-সহ উত্তর-পূর্ব ভারতে তখন বল্লাল সেন, কেশব সেনদের মতো শাসকদের রাজত্ব। প্রতাপপুর পঞ্চায়েতের এই গ্রামটির ভূপ্রকৃতি বেশ রুখাসুখা। বছরভর চাষাবাদের জন্য আকাশের দিকে চেয়ে থাকতে হয়। সমস্যা ছিল পানীয় জল নিয়েও। মনে করা হয়, এই সমস্যার সমাধানেই কোনও এক সেন রাজা গ্রামের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে প্রায় ৪০ বিঘা এলাকা জুড়ে তৈরি করেন এই সরোবরটি। প্রাণ ফেরে এলাকার। গোটা মধ্যযুগ এবং ব্রিটিশ আমলের একটা বড় সময় পর্যন্ত এই সরোবরের উপরে নির্ভর করত এলাকার অর্থনীতি। গ্রামের একদা বাসিন্দা কাজল অধিকারীর কথায়, ‘‘ছোটবেলাতেও দেখেচি ওই সরোবরের জলেই প্রায় ৭০ বিঘা জমিতে রবি শষ্যের চাষ হতো। পানীয় জলও নিয়ে আসা হতো সেখান থেকেই।’’
তবে ইংরেজ আমলের পরে থেকে সরোবরটির আর সংস্কার হয়নি বলে দাবি বাসিন্দাদের। সরোবরটির আয়তন কমতে কমতে বর্তমানে মাত্র ১০ বিঘে।
আর্টিজিও কূপ থাকায় কখনওই পুরোপুরি শুকোয় না সরোবরটি। জলাশয়ের মজে যাওয়া নিচু অংশে এখন চাষ হয়। গ্রামের চাষিরা জানান, গরমের সময়ে চড়া দামে জল কিনে খেতে সেচ দিতে হয়। এই পরিস্থিতিতে সরোবরটির সংস্কার হলে চাষেও সুবিধা হবে বলে দাবি তাঁদের। বাসিন্দাদের দাবি, সরোবরটির সংস্কার হলে গ্রামেরই রূপবদল হবে।
সরোবরটিকে ঘিরে গ্রামের ‘সুজলা-সুফলা’ গ্রামের ছবিটা বদলে যেতে শুরু করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে। ব্রিটিশরা ঘাঁটি তৈরি করে গ্রামে। কথিত রয়েছে, ইংরেজদের অত্যাচারে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান বাসিন্দারা। পরে ফিরে এসে দেখেন সাধের সরোবরটির বাঁধানো ঘাট ভেঙে গিয়েছে। তত দিনে সংস্কারের অভাবে কমে গিয়েছে সরোবরের আয়তনও।
ভুরকুণ্ডা এনসি ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আলি বলেন, ‘‘এই সরোবরের ঐতিহ্যের কথা আমরা শুনেছি। ঠিক ভাবে সংস্কার হলে চাষের কাজে যেমন সুবিধা হবে, তেমনই পিকনিক ও পর্যটনের কেন্দ্রও গড়ে উঠতে পারে।’’ বিডিও শুভ সিংহরায় বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের তরফে লিখিত আবেদন করা হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’ দুর্গাপুর-ফরিদপুর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ (কৃষি-সেচ সমবায়) কাজল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গ্রামবাসীরা লিখিত প্রস্তাব দিলে সমিতিতে আলোচনা করে পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy