ধৃত শোভন টুডু। নিজস্ব চিত্র।
বাঁশবাগান থেকে এক মহিলার রক্তাক্ত দেহ মিলেছিল জামালপুরের জৌগ্রামের জলেশ্বরতলায়। সপ্তাহখানেক আগে দেহ উদ্ধারের সময়ে অজ্ঞাতপরিচয় হলেও, দু’দিন পরে মহিলার পরিচয় জানতে পারে পুলিশ। তাঁকে খুনের অভিযোগে শুক্রবার রাতে মেমারির কুচুট পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য শোভন টুডুকে গ্রেফতার করল পুলিশ। পুলিশের দাবি, নিহতের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন শোভন। নানা কারণে সে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েই পরিকল্পনা করে মহিলাকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘নিহতের পরিচয় জানার পরেই শোভনের নাম সামনে আসে। প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ তৃণমূলের মেমারি ২ ব্লক সভাপতি মহম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়ে এই ঘটনা। পুলিশ-প্রশাসন বিষয়টি দেখছে।’’
পুলিশ জানায়, গত রবিবার মেমারির পলশা গ্রামের সুখি মান্ডির (৪৭) রক্তাক্ত দেহ মেলে। তাঁর কাছে তখন প্রায় ১,৯০০ টাকা ও বেশ কিছু টুকরো কাগজ পাওয়া যায়। প্রতিটি কাগজে একটি করে ফোন নম্বর ছিল। সেই নম্বরগুলি খতিয়ে দেখে পুলিশ জানতে পারে, সেগুলি দিল্লি, ঝাড়খণ্ড, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার। দু’টি নম্বর ছিল মন্তেশ্বরের। সেই নম্বরের সূত্র ধরে পুলিশ মন্তেশ্বরের দেওয়ানি গ্রামে গিয়ে নিহতের পরিচয় জানতে পারে। দেহের ছবি দেখে নিহতের বৌদি ও ছেলেরা শনাক্ত করেন। পুলিশের দাবি, ময়না-তদন্ত রিপোর্টে জানা যায়, যৌন হেনস্থার ঘটনা হয়নি। ঘটনাস্থলে ভারী বস্তু দিয়ে মাথায় আঘাত করে খুন।
পুলিশের দাবি, তদন্তে নেমে জানা যায়, সুখি তাঁর স্বামী, ট্রাক্টর চালক সাধন মান্ডির সঙ্গে সঙ্গে থাকতেন না। তিনি থাকতেন পাশের গাঙ্গুয়া গ্রামে। তাঁর সঙ্গে কয়েক বছর ধরে শোভনের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথা জানতে পারে পুলিশ। এলাকার কয়েক জন পুলিশের কাছে দাবি করেন, ঘটনার দিন শোভনের মোটরবাইকে সুখিকে যেতে দেখা গিয়েছিল। এর পরেই পুলিশ শোভনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠায়।
জামালপুর থানা সূত্রের দাবি, শোভন গোড়ায় তাদের জানান, সুখির মৃত্যুর খবর পুলিশের কাছেই তিনি জেনেছে। থানার ভিতরেই কান্নাকাটি শুরু করেন। সে দিন ছেড়ে দেওয়া হলেও তাঁর গতিবিধি নজরে রাখে পুলিশ। সেই সঙ্গে তাঁর মোবাইলের তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়। পুলিশের দাবি, সে তথ্যে জানা যায়, ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬টার সময়ে ধৃতের ফোন ছিল মেমারি-জৌগ্রাম রোডে। ৭টা নাগাদ মশাগ্রামে ফোনে একটি মেসেজ আসে। এর পরে ফের পুলিশ শোভনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে। পুলিশের দাবি, প্রথমে অস্বীকার করলেও, একাধিক তথ্য তার সামনে তুলে ধরতেই তাদের কাছে খুনের কথা স্বীকার করেন ওই পঞ্চায়েত সদস্য।
তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় ধৃত তাঁদের জানিয়েছেন, সুখির সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। সম্প্রতি নানা কারণে সুখি ঘনঘন টাকা দাবি করছিলেন। এ ছাড়া, ছেলেদের কাজের ব্যবস্থার জন্যও চাপ দিচ্ছিলেন। তাতে ব্যতিব্যস্ত হয়েই খুনের পরিকল্পনা করেন তিনি। কুচুট গ্রামের একটি দোকান থেকে ভারী লোহার পাইপ কিনে মোটরবাইকের ‘টুল বক্সে’ রেখে দিয়েছিলেন। ঘটনার দিন বেড়াতে যাওয়ার নাম করে সন্ধ্যায় জৌগ্রামের ওই জায়গায় নিয়ে যান সুখিকে। সেখানে সুখি একটি গাছতলায় বসলে মাথার এক পাশে ওই পাইপ দিয়ে আঘাত করা হয়। সুখি পড়ে গেলে মাথায় বেশ কয়েক বার আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে মোটরবাইক নিয়ে বাড়ি ফিরে যান শোভন, জেরা করে এমনটাই জানা গিয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
শনিবার ধৃতকে বর্ধমান আদালতে তোলা হলে ছ’দিন পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়। এসডিপিও জানান, ধৃতকে জেরা করে খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র খোঁজা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy