কোথাও বিদ্যুতের বোর্ড খোলা, কোথাও আবার ছড়িয়ে রয়েছে দাহ্য পদার্থের তৈরি বিভিন্ন প্যাকেট। অপারেশন থিয়েটারে অগ্নিকাণ্ডের ৪৮ ঘণ্টা বাদেও এমনই হাল কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে।
কোথাও বিদ্যুতের বোর্ড খোলা, কোথাও আবার ছড়িয়ে রয়েছে দাহ্য পদার্থের তৈরি বিভিন্ন প্যাকেট। অপারেশন থিয়েটারে অগ্নিকাণ্ডের ৪৮ ঘণ্টা বাদেও এমনই হাল কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে। রোগী ও তাঁদের পরিজনদের অভিযোগ, গত শনিবার অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচা গিয়েছে। কিন্তু তারপরেও অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার খোলনলচে বদলে ফেলার জন্য কোনও রকম পদক্ষেপ করেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
চিত্র এক: হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার। এখানেই একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে শর্ট সার্কিট হয়ে আগুন লাগে। কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, ওটি-র সামনে থাকা আগুন নেভানোর যন্ত্রটির মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে বছর দেড়েক আগেই। একই হাল তিন তলাতেও। সেখানে আগুন নেভানোর যন্ত্রটির বয়স প্রায় ৪ বছর।
চিত্র দুই: মূল ভবনে, অপারেশন থিয়েটারের পাশেই রয়েছে গোটা হাসপাতালের মূল বিদ্যুৎ সংযোগ বিভাগটি। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, বিদ্যুতের বাক্স খোলা। ঝুলে রয়েছে বিদ্যুতের তার। বহু খুঁজেও দেখা মিলল না কোনও ফায়ার অ্যালার্মের।
চিত্র তিন: হাসপাতাল জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ। হাসপাতালের দোতলায় এসএনসিইউ ওয়ার্ডের আশেপাশে পড়ে রয়েছে ওষুধের বাক্স, স্যালাইনের বোতল ইত্যাদি। আবার অপারেশন থিয়েটারের কাছে, বিদ্যুতের বক্সের পাশেই পড়ে তুলোর পেটি।
গত শনিবার, অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি চলাকালীন আগুন ধরে অপারেশন থিয়েটারে। সেখানেই অপারেশন হওয়ার কথা ছিল চার জনের। হঠাৎ আগুন লাগায় তড়িঘড়ি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসেন প্রসূতি ও রোগীরা। কয়েক জনকে স্থানান্তরিত করানো হয় শহরের একটি নার্সিংহোম ও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
এরপরেও হাসপাতালের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার হাল ফেরাতে কর্তৃপক্ষ কোনও উদ্যোগ না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। রোগীর এক আত্মীয়ের ক্ষোভ, ‘‘অপারেশন থিয়েটারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগেই এই হাল। তা হলে বর্হিবিভাগ বা অন্যান্য ওয়ার্ডের কী হবে।’’ নির্মল দত্ত নামে এক রোগীর ক্ষোভ, ‘‘হাসপাতাল তো নয়। যেন জতুগৃহ। একবার বড়সড় আগুন লাগলে বেরিয়ে আসার সময়টুকুও মিলবে না।’’
অগ্নিকাণ্ডের পরে সোমবারও হাসপাতাল পরিদর্শনে এসেছিলেন পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ার দিলীপ সরকার। তাঁর বক্তব্য, ‘‘১০ বছর অন্তর শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রগুলি বদলানো দরকার। অপারেশন থিয়েটার সম্পূর্ন আলাদা করে সেখানকার বিদ্যুত সংযোগও আলাদা করা দরকার। এ ছাড়া প্যানেল, পাওয়ার বিডিবিগুলিরও সংস্কার প্রয়োজন।’’ দিলীপবাবুর ক্ষোভ, হাসপাতালে অন্তত ৫৫টি আগুন নেভানোর যন্ত্র থাকার দরকার হলেও বর্তমানে রয়েছে মাত্র ১০টি। তবে হাসপাতালের ডেপুটি সুপার অনন্য ধর বলেন, ‘‘অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা পূর্ত দফতরের দেখার কথা। ওষুধের বাক্স, স্যালাইনের বোতল প্রভৃতি এক জায়গায় রাখার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের গুদামঘর তৈরির আবেদন জানানো হয়েছে।’’
অগ্নিকাণ্ডের পরে তড়িঘড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয় অপারেশন থিয়েটার। সোমবার থেকে আপদকালীন ভিত্তিতে কাজ শুরু হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে সোমবার পর্যন্ত কিছু জানাননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির এক্সিকিউটিভ বডির চেয়ারপার্সন তথা মহকুমাশাসক খুরসিদ আলি কাদরির বলেন, ‘‘দমকলের ওসি-কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার জন্য বলা হয়েছে। আগামী বুধবার এলাকার সমস্ত সরকারি হাসপাতাল ও ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy