ছবি: সংগৃহীত
‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি উপলক্ষে তৃণমূলের নানা স্তরের নেতাদের গ্রাম-সহ নানা এলাকায় গিয়ে রাত কাটাতে দেখা যাচ্ছে। পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রামের জেলাশাসকেরা প্রত্যন্ত এলাকায় রাত কাটানো শুরু করেছেন। এ বার গ্রামে গিয়ে রাত্রিবাস করবেন জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী। সঙ্গে থাকবেন নানা দফতরের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক, সংশ্লিষ্ট এলাকার পঞ্চায়েতের প্রধান, কর্মীরাও।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার ‘রিভিউ মিটিং’-এ ঠিক হয়েছে, প্রতি বুধবার ‘নিশিযাপন সফর’ হবে। সব ঠিক থাকলে, জেলা সভাধিপতি শম্পা ধাড়ার এলাকা খণ্ডঘোষ ব্লক থেকেই এই কর্মসূচি শুরু করবেন জেলাশাসক। বুধবার তিনি বলেন, ‘‘আগামী ৪ ডিসেম্বর থেকে এই কর্মসূচি শুরু হবে। মূলত গ্রামের সমস্যা কতটা মিটেছে, সরকারি পরিষেবা কতটা নিচুস্তর পর্যন্ত পৌঁছচ্ছে, তা জানতেই এই কর্মসূচি। আমি তো বটেই, অন্যরাও গ্রামের মানুষের সঙ্গে রাত কাটাবেন।’’
তবে প্রশাসনের এমন ‘জন-সংযোগ’ সাবেক বর্ধমানে নতুন নয়। ২০১৩-য় পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের পরে জেলার নানা পর্যায়ের আমলাদের নিয়ে তৎকালীন জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু বিভিন্ন পঞ্চায়েতের নানা গ্রামে গিয়ে রাত কাটিয়েছিলেন। সেই সময়ে জেলাশাসক কিছু গ্রামে গেলেও রাত্রিবাস করেননি। পরে ওই কর্মসূচিই বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৫-র সেপ্টেম্বরেও ‘প্রশাসন আপনার দুয়ারে’ কর্মসূচি নেওয়া হয়। তা-ও কয়েক মাস চলার পরে বন্ধ হয়ে যায়।
কিন্তু কী কারণে এই ‘সফর’, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। উঠে আসছে, মূলত দু’ধরনের কথা। প্রথমত, জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বিজয় ভারতী জেলাশাসক হয়ে আসার পরে প্রতি বুধবার জেলার আমলা, বিডিও, জেলা পরিষদের কর্তাদের গ্রামে পাঠিয়ে নানা প্রকল্পের হাল দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। জেলায় বেশ কয়েক মাস ধরে সেই কর্মসূচিও চলছে। বিভিন্ন রিপোর্ট ধরে আলোচনাও হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, প্রশাসনের এই কর্মসূচির সঙ্গে তৃণমূলের ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে ‘খারাপ ফলের’ যোগসূত্র রয়েছে কি না, তা নিয়েও জল্পনা রয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলে। যদিও, ওই ভোটে জেলার ১৬টি বিধানসভা এলাকার মধ্যে ১৪টিতেই এগিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু, জামালপুর, কালনা, মেমারি, পূর্বস্থলী উত্তর, বর্ধমান দক্ষিণ-এর মতো কয়েকটি বিধানসভা এলাকায় ভোট-ফলের নিরিখে তৃণমূলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের স্থানীয় নেতা, কর্মীদের একাংশের ধারণা, প্রশাসনের বিভিন্ন প্রকল্পের ‘সুফল’ একেবারে নিচু স্তরে ঠিক মতো পৌঁছচ্ছে না। সম্প্রতি বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও বর্ধমানে এসে সরকারের নানা কাজের ‘সুফল’ জনগণের কাছে ঠিকমতো পৌঁছে দেওয়া যায়নি বলে মন্তব্য করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সম্প্রতি ‘নবান্ন’-এ এবং রাজ্যের নানা প্রান্তের প্রশাসনিক বৈঠকে প্রশাসনকে আরও বেশি করে জনসংযোগ বাড়ানোর কথা বলছেন। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের ‘সফর’ এ সবেরই ফল কি না, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে। যদিও, প্রশাসনের দাবি, প্রকল্প, পরিষেবার খোঁজ করাই একমাত্র উদ্দেশ্য।
ঘটনাচক্রে, খণ্ডঘোষ বিধানসভা এলাকা বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর লোকসভার মধ্যে পড়ছে। বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ এই কর্মসূচিকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘মানুষ তৃণমূলকে বিশ্বাস করে না। তাই, এখন আমলাদেরও মাঠে নামাতে হচ্ছে।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পাদেবী অবশ্য বলেন, ‘‘জন-মন বোঝা যে কোনও প্রশাসন এবং রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব। সেখানে প্রশাসন প্রশাসনের মতো, আর আমরা আমাদের মতো করে জন সংযোগের পরিকল্পনা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy