দুই সংস্থা থেকে উচ্ছেদের নোটিস পেয়েছেন বেশ কয়েক হাজারবাসিন্দা। দুর্গাপুর স্টিল প্লান্টের (ডিএসপি) সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় জমি জোগাড় করতে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে তেমন নোটিস পাঠান সংস্থা কর্তৃপক্ষ। ওই বছরের গোড়ার দিকে একই কারণে ডিটিপিএস কর্তৃপক্ষও কয়েক হাজার বাসিন্দাকে উচ্ছেদের নোটিস পাঠান। দুই জায়গাতেই পুনর্বাসনের দাবিতে শুরু হয়েছে আন্দোলন।
ডিটিপিএস এবং ডিএসপি-র উচ্ছেদের নোটিস পাওয়া বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, আন্দোলনের সামনের সারিতে এখনও পর্যন্ত সে ভাবে রাজনৈতিক দলের নেতাদের দেখা যায়নি। তৃণমূল নেতাদেরদু’এক জনকে বার দুয়েক দেখা গিয়েছে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে। কিন্তু কয়েক হাজার বাসিন্দা যেখানে ছাদ হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন, সেখানে রাজ্যের শাসক দলের তরফেআরও তৎপরতা প্রত্যাশিত ছিল বলে দাবি তাঁদের। ডিটিপিএসের ‘দুর্গাপুর ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরক্ষা কমিটি’রতরফে অরিন্দম নায়েকের দাবি, “আমাদের কাছে বিজেপি, সিপিএম বা কংগ্রেসের কোনও নেতা আসেননি। তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়ালের মতো দু’এক জন যোগাযোগ রেখেছেন।”
তৎকালীন বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া ডিএসপি-র আন্দোলনকারীদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে ২০২৩ সালের ২৮ জুলাই দাবি করেন, পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ হলে তিনি বুলডোজ়ারের সামনে দাঁড়াবেন। অরিন্দমের প্রতিক্রিয়া, “বুলডোজ়ারের সামনে দাঁড়াতে হবে না। আমাদের জল, বিদ্যুতের সংযোগ ছিন্ন করা হয়েছে। তখন বিজেপির কাউকে পাশে পাইনি।” ডিএসপি-র নোটিস পাওয়া বিক্ষোভকারীদের দাবি, সুরেন্দ্র প্রথমে পুনর্বাসনের খরচ ইস্পাত মন্ত্রক ৭০ শতাংশ ও ডিএসপি কর্তৃপক্ষ ৩০ শতাংশ দিক, এমন প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে লোকসভা নির্বাচনের আগে তিনি পুনর্বাসনের দায় পুরসভার ঘাড়ে চাপান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু বাসিন্দার দাবি, “আমাদের নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির নির্দিষ্ট কোনও চিন্তাভাবনা রয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। সবই হচ্ছে ভোটের কথা মাথায় রেখে। রাজনৈতিক নেতারা সব সময় ভাবছেন, আমাদের পাশে দাঁড়ালে যদি শিল্প-বিরোধী তকমা লেগে যায়?”
যদিও, বাসিন্দাদের পাশে না থাকার অভিযোগ মানতে নারাজ সব রাজনৈতিক দলই। বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক তথা বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের বক্তব্য, “পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ হবে না। তবে সে জন্য রাজ্য সরকারকে জমির ব্যবস্থা করতে হবে। কেন্দ্র প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরি করে দেবে।” কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তীদাবি করেন, তাঁরা বিক্ষোভকারীদের পাশে আছেন। সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তীর বক্তব্য, “আমাদের দাবি, শুধু পুনর্বাসন দিলেই হবে না। সঙ্গে সম্মানজনক আর্থিক প্যাকেজও দিতে হবে, যাতে নতুন জায়গায় গিয়ে পেট চালাতে সমস্যায় না পড়তে হয় বাসিন্দাদের।” তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনের দাবি, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার দাবি তিনি ডিএসপি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। সে জন্য রাজ্য সরকার ডিএসপি কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে বলেও আশ্বাস শিবদাসনের।
বর্ধমান-দুর্গাপুরের তৃণমূল সাংসদ কীর্তি আজাদ জানান, মাস ছয়েক আগে ডিভিসির চেয়ারম্যান এস সুরেশ কুমারকে চিঠি দিয়ে ডিটিপিএস এলাকার উচ্ছেদের নোটিস পাওয়া বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন। যদিও সুরেশ কুমার দুর্গাপুরে এসে জানিয়ে গিয়েছেন, পুনর্বাসনের কোনও প্রতিশ্রুতি তাঁরা দিচ্ছেন না। সাংসদ কীর্তি বলেন, “শিল্প চাই। তবে বছরের পর বছর ধরে যাঁরা বাস করছেন, তাঁদের কথাও আমাদের ভাবতে হবে। দু’টির মধ্যে সামঞ্জস্য দরকার। পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।”
ডিটিপিএস সূত্রে জানা গিয়েছে, কলোনিতে কত জন অবৈধ বসবাসকারী রয়েছেন, জরিপ করে সেই তথ্য জোগাড় করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে। এখন তাঁরা কাউকে সরাচ্ছেন না বা উঠে যেতে বলছেন না। সীমানা পাঁচিল নির্মাণ যাতে যথাযথ ভাবে করা সম্ভব হয়, সে জন্য সবার কাছে সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে। ডিএসপি কর্তৃপক্ষও গত কয়েক মাস ধরে ফাঁকা জায়গাগুলিতে পাঁচিল নির্মাণের কাজ করছেন।
পরিস্থিতি যাই হোক, পুনর্বাসন-কাঁটায় বিদ্ধ হয়ে দুই রাষ্ট্রায়ত্তসংস্থাকে শেষ পর্যন্ত পিছু হঠতে হবে না বলেই বিশ্বাস শহরবাসীর।
(শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy