শেফালি পণ্ডিত। নিজস্ব চিত্র।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অনুপস্থিতি ও নার্সের গাফিলতিতে প্রসবের সময়ে শিশুমৃত্যুর অভিযোগ উঠল কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে।
টিকরখাজির ওই পরিবারের অভিযোগ, সোমবার রাতে প্রসবের সময় চিকিৎসক ছিলেন না। নার্সরাই প্রসব করান। প্রসব চলাকালীন ফরসেপ দিয়ে শিশুটিকে টেনে বের করতে গিয়ে মাথায় ক্ষত হয়। তা থেকেই এই ঘটনা বলেও তাঁদের অভিযোগ। হাসপাতাল সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন তাঁরা। যদিও ওই চিকিৎসকের দাবি, মৃত সন্তান প্রসব করেছিলেন ওই মহিলা। ফরসেপ ব্যবহার করার কথা মানতে চাননি তিনি।
মহকুমা হাসপাতাল সুপার রতন শাসমলের দাবি, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গাফিলতি প্রমাণিত হলে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’ যদিও যে হাসপাতালে শুধু মহকুমা নয়, আশপাশের জেলা থেকেও রোগী আসে, বছরে সাত হাজারের বেশ প্রসব হয়, সেখানে চিকিৎসকের বদলে নার্স কেন প্রসব করাচ্ছিলেন সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রসবের সময় চিকিৎসক, নার্স ছাড়াও এক জন লেবার রুম মেডিক্যাল অফিসারের হাজির থাকার কথা ঘরে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মেডিক্যাল অফিসার তো দূর, চিকিৎসকও ছিলেন না বলে অভিযোগ। প্রতিদিন যেখানে অন্তত ২০ জনের প্রসব হয়, সেখানে মাত্র তিন জন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন বলেও হাসপাতালের দাবি। এমনকী, প্রসব কক্ষে কোনও আল্ট্রাসোনোগ্রাফি যন্ত্রও নেই।
মৃত শিশুটির পরিবারের দাবি, সোমবার দুপুর নাগাদ বছর কুড়ির শেফালি পণ্ডিতকে চিকিৎসক রবীন্দ্রনাথ মণ্ডলের অধীনে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রাত ১১টা নাগাদ প্রসবযন্ত্রণা ওঠে। অভিযোগ, ওই চিকিৎসককে পাওয়া যায়নি। নার্সরাই শেফালিদেবীকে প্রসব করেন। মাঝপথে শিশুটি আটকে যাওয়ায় ফরসেপ দিয়ে মাথা টেন বের করা হয়। শেফালিদেবীর অভিযোগ, সেই আঘাতেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর সন্তানের। শেফালিদেবীর মা কল্পনাদেবীও বলেন, ‘‘সারা রাত লেবার রুমে শুয়ে কাতরাচ্ছিল আমার মেয়ে। কোনও চিকিৎসা হয়নি।’’ সকালে শেফালিদেবীর বাবা ওই চিকিৎসক ও দুই নার্সের বিরুদ্ধে সুপারের কাছে অভিযোগ করেন। শেফালিদেবী বলেন, ‘‘রাত ৯টা নাগাদ ডাক্তার দেখে গিয়েছিলেন। তারপরে আর আসেননি। ব্যাথা উঠলে নার্সরা আমায় নিজেই প্রসব করতে বলেন।’’ প্রসবের সময় ফরসেপ ব্যবহার করা হয়েছিল বলেও তাঁর দাবি।
তবে অভিযুক্ত চিকিৎসকের দাবি, ‘‘প্রসবের সময় ফরসেপ ব্যবহার হয়নি। ওই মহিলা মৃত সন্তান প্রসব করেছিলেন। আমার কোনও গাফিলতি নেই।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাটোয়া হাসপাতালের এক চিকিৎসকও বলেন, ‘‘কলকাতার পিজি হাসপাতালে যেখানে বছরে ৩৫০০ প্রসব হয় সেখানে চিকিৎসক, নার্স, হাউসস্টাফ মিলে ১০০ জন কর্মী। অথচ এখানে মহকুমা ছাড়া, পাশের বীরভূম, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ থেকে প্রতিদিন আসা প্রায় ৮০০ রোগীর চিকিৎসার ভার কেবলমাত্র ৩৫ জন চিকিৎসকের হাতে।’’
যদিও ওই রাতে প্রসবের সময় অভিযুক্ত চিকিৎসক ছিলেন কি না, সে উত্তর মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy