এখানেই মেলে দেহ। নিজস্ব চিত্র Jayanta Biswas
ঘরে ঠাসা বই-খাতা। পুলিশের চাকরি, সরকারি নানা চাকরির প্রস্তুতির বইয়ের মাঝে একটা খাতায় প্রিয় বান্ধবীকে নিয়ে ইংরেজিতে একটা লেখাও আছে। প্রতিবেশীরা জানান, এরকমই ছিল বর্ধমানের নান্দুরের প্রিয়াঙ্কা হাঁসদা। আড্ডা-গল্পের চেয়ে পশু, পাখি দেখে সময় যেত তাঁর। বাইরের জগৎ বলতে ছিল ভাই।
বুধবার রাতে বাড়ির পিছনে মাঠে গলার নলিকাটা অবস্থায় দেহ মেলে ওই তরুণীর। বাবা-মায়ের অভিযোগ, মেয়েকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু কেন, কে বা কারা এমন করতে পারে, কিছু বলতে পারেননি তাঁরা। পুলিশের দাবি, যে খানে খুন করা হয়েছে, তা দেখে মনে হচ্ছে আততায়ী পরিচিত কেউ। নাহলে বাড়ির পিছনে কোন গলিপথে কোথায় যাওয়া যায়, তা জানা সম্ভব নয়।
জোতরাম হাইস্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে বর্ধমানের মহিলা কলেজ থেকে স্নাতক হন প্রিয়াঙ্কা। পরে দূরশিক্ষায় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর করেন। উল্লাসের কাছে একটি সংস্থায় কম্পিউটার শিখেছিলেন। পরিজনদের দাবি, ওই সংস্থার যোগাযোগের মাধ্যমে বেঙ্গালুরুতে ছ’মাসের জন্য কম্পিউটারে ডিজ়াইনের প্রশিক্ষণ নিতে যান প্রিয়াঙ্কা। সোমবার বাড়ি ফেরেন। হাওড়া থেকে ট্রেনে করে বাড়ি ফেরার পথে মেয়েকে দেখে কিছুই বুঝতে পারেননি বাবা। শুধু ঠান্ডা গেলে গলা ফুলে থাকায় কথা কম বলছিলেন তিনি। বুধবার দুপুরে আধার ‘লিঙ্ক’ করানোর জন্য বৈকুণ্ঠপুর ১ পঞ্চায়েত অফিসেও গিয়েছিলেন।
শুক্রবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ জায়গাটিকে ঘিরে রেখেছে। আলের উপরে চাপ চাপ রক্ত রয়েছে। মৃতার মা কাঁদতে কাঁদতেই বলেন, “সোমবার রাখি পূর্ণিমা। ভাইকে পড়াবে বলে বেঙ্গালুরু থেকে রাখি কিনে এনেছিল। মেয়ের সঙ্গে রাখিও শ্মশানে চলে গিয়েছে!” দিদির মৃত্যুর পর থেকেই প্রিয়াঙ্কার ভাইও শয্যাশায়ী। নান্দুরে ঝাপানতলায় ঢালাই রাস্তার ধারে এক তলা পাকা বাড়ি। তিনটি ঘর রয়েছে। পাকা বাড়ির সামনে ছাউনি দেওয়া রান্নার জায়গা। তার পাশে হাঁসের ঘর। রয়েছে গোয়াল ঘর। সব পেরিয়ে রয়েছে শৌচাগার। সেখান থেকেই কয়েক ফুট দূরেই পড়েছিল প্রিয়াঙ্কার নিথর দেহ।
আত্মীয়স্বজনদের দাবি, প্রিয়াঙ্কা এলাকায় খুব একটা মিশতেন না। পড়া আর নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন, জানান কাকিমা শকুন্তলা হাঁসদা। পড়শিদের ধারণা, যে জায়গায় খুন হয়েছে, অপরিচিতদের সেখানে গিয়ে খুন করা সম্ভব নয়। গ্রামের কোন রাস্তা থেকে আলপথ ধরে প্রিয়াঙ্কাদের বাড়ির পিছনে যাওয়া যায়, তা বিলক্ষণ জানত আততায়ী। আবার সেই রাস্তা দিয়েই তাকে ফিরতে হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে কয়েকটি জিনিস বাজেয়াপ্ত করা গেলেও প্রিয়াঙ্কার ফোন পাওয়া যায়নি। সম্ভবত আততায়ী নিয়ে পালিয়েছে। একাধিক জনজাতি সংগঠন বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে।
প্রিয়াঙ্কার বাবা সুকান্ত হাঁসদা জানান, মেয়ে ছোট থেকেই এনসিসি করত। একাধিক শিবিরে যোগ দিয়েছে। রোজ ভাইয়ের সঙ্গে ছুটতে যেত। সেই মেয়েকে কে মেরে ফেলল, উত্তর খুঁজছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy