পড়ে রয়েছে বাদ্যযন্ত্রের খোল। নিজস্ব চিত্র।
এমনিতেই বাজার মন্দা। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে নোট বাতিলের ফলে নগদের আকাল। দিন যেন আর চলছে না, এমনই দাবি সালানপুরের ঢাক-ঢোল-মাদল প্রস্তুতকারকদের। উনুনে হাঁড়ি চাপিয়ে ফুটন্ত জলে দু’মুঠো চাল ফেলা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
সালানপুরের সামডি রোডের কয়েক ঘর বাসিন্দা কয়েক পুরুষ ধরে চামড়ার বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে আসছেন। অরুণ দাস, সুকুমার রুইদাস, শিবশঙ্কর রুইদাসেরা ঢাক, ঢোল, মাদল, ধামসা, ডুগি-তবলা বা তাসা তৈরি করেন। ব্যাঙ্ক ঋণ মেলে না, তাই ঘরের সামান্য পুঁজিতেই ব্যবসা চালান বলে জানান সুকুমারবাবুরা। এই কারবারে প্রধান কাঁচামাল চামড়া। স্থানীয় মাংস বিক্রেতাদের কাছ থেকে তাঁরা পশুর চামড়া কিনে আনেন। সেই চামড়া শুকিয়ে ব্যবহারের উপযোগী করে মাটি বা কাঠের খোলে মুড়ে তৈরি করেন বাদ্যযন্ত্র। সুকুমারবাবু বলেন, ‘‘অন্য বছর এই সময় ভালই বিক্রি হয়। কিন্তু এ বার বাজার উঠছে না। লোকের হাতে টাকা কই যে কিনবে!’’
সামডি রোডে এই কারবারে জড়িত ছ’টি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল তো বটেই, লাগোয়া ঝাড়খণ্ড ও বিহার থেকেও কাজের বরাত পায় তারা। কিন্তু এ বছর রঙবেরঙের মাটি ও কাঠের খোলগুলি সার বেঁধে রাখা আছে। পড়ে রয়েছে গোটা কয়েক তৈরি বাদ্যযন্ত্রও। শিবশঙ্কর রুইদাস বলেন, ‘‘গোটা কয়েক ঢোল, মাদল তৈরির বায়না নেওয়া আছে। কিন্তু নগদের অভাবে চামড়া কিনতে পারছি না। তাই বিক্রিবাটাও থমকে আছে।’’ গত এক মাস ধরে কার্যত বেকার তাঁরা, জানান তিনি।
সামনেই বাঁদনা উৎসব। অন্য বছর এই সময়ে ধামসা মাদল বিক্রির ধুম পড়ে যায়। আদিবাসী মানুষজন পুরনো বাজনায় নতুন চামড়ার বসাতে আসেন। এ বার সে সবেরও দেখা নেই বলে জানান অরুণ দাস। তাঁর দাবি, বাজার এমনিতেই মন্দা। এখন বাজনাদারেরা বেশির ভাগই চামড়ার বদলে বাজার চলতি প্লাস্টিকের ছাউনি লাগিয়ে নিচ্ছেন। তাতে খরচ যেমন অনেক কম পড়ে, তেমনই নিজেরা তা লাগিয়ে নেওয়া যায়। ফলে, ক্রেতা কমেছে, আয়ও কমেছে পাল্লা দিয়ে। অরুণবাবু বলেন, ‘‘তা-ও কোনও মতে চালিয়ে নিচ্ছিলাম। কিন্তু গত এক মাস ধরে নগদের অভাবে না আসছে খদ্দের, না কিনতে পারছি কাঁচামাল।’’ আর্থিক সঙ্কট তো ছিলই, নোট বাতিল যেন বিষ ফোঁড়া হিসেবে হাজির হয়েছে বাদ্যযন্ত্র প্রস্তুতকারীদের কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy