বাঁ দিক থেকে চন্দ্রহাস বাউড়ি, অমৃতা বাউড়ি এবং তন্ময় বাউড়ি। — নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএমের প্রার্থী হয়েছেন বাবা, ছেলে ও মেয়ে। জামুড়িয়ার ঘটনা। যদিও বিরোধীদের টিপ্পনী, সিপিএমের এমন অবস্থা হয়েছে যে, লোক খুঁজে না পেয়ে একই পরিবার থেকে তিন জনকে প্রার্থী করতে হয়েছে!
জামুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির ১৬ নম্বর সংসদের সিপিএম প্রার্থী চন্দ্রহাস বাউড়ি। এই এলাকাতেই বাহাদুরপুর পঞ্চায়েতের কৃষ্ণনগর (২০৫) ও ভূতবাংলা (২১১) সংসদ থেকে প্রার্থী হয়েছেন যথাক্রমে চন্দ্রহাসের মেয়ে অমৃতা ও ছেলে তন্ময়। চন্দ্রহাস ১৮ বছর বয়স থেকে সিপিএমের সঙ্গে যুক্ত। ১৯৯৩-এ বাহাদুরপুর পঞ্চায়েতের সদস্যও নির্বাচিত হন। পরে, ২০১৩-য় পঞ্চায়েত স্তরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২৫ ভোটে হারেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর ৩২-এর অমৃতা নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তন্ময়ের বয়স ৩০। তিনি মেকানিক্যাল ডিপ্লোমা করেছেন। ছোট থেকে দু’জনেই সিপিএমের সমর্থক। তবে বাবার হাত ধরে এ বারেই প্রথম ভোট-ময়দানে নেমেছেন দিদি-ভাই।
একটি বেসরকারি কারখানার কর্মী চন্দ্রহাসের অভিযোগ, ২০১৩ ও ২০১৮-য় ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক দলের লাগামছাড়া সন্ত্রাসের কারণে সিপিএমের বেশির ভাগ প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিলেন। নিচুতলার শ্রমজীবীরা সবাই বাম সমর্থক। তাঁদের একাংশ প্রকাশ্যে দলের পাশে দাঁড়ানোয় বাড়ি ভাঙচুর থেকে চাকরি কেড়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তাঁর দাবি, “তাই অনেকের ইচ্ছা থাকলেও তৃণমূলের বিরোধিতা করতে ভয় পাচ্ছেন। সে ভয় কাটাতেই আমি, আমার ছেলে ও মেয়ে নেতৃত্বের কাছে প্রার্থী করার আবেদন জানিয়েছিলাম। দল তা অনুমোদন করেছে।” অমৃতা ও তন্ময় বলছেন, “আমরা সন্ত্রাসের কাছে মাথা নত করব না, এটা তৃণমূল জানে। এই আত্মবিশ্বাস থেকেই দলের প্রার্থী হয়েছি। আর আমাদের দলের সমর্থকেরা সাহস হারালে, অপশাসন থেকে মুক্তি মিলবে না।” স্বামী, সন্তানদের এই কাজে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে চন্দ্রহাসের স্ত্রী স্বর্ণেরও। তিনি জানাচ্ছেন, সবাই দলের হয়ে কাজ করেন। ফলে, বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়নি।
সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, জামুড়িয়া ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েতের ১১২টি আসনের ৭৭টিতে দল লড়ছে। পঞ্চায়েত স্তরে তিনটি ও ২৫ আসনবিশিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতিতে দু’টি সংসদে কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থনকরা হয়েছে।
তবে, একই দলের হয়ে বাবা ও ছেলেমেয়ের ভোটে দাঁড়়ানোকে কটাক্ষ করছেন বিরোধীরা। বিজেপির জামুড়িয়া বিধানসভার সহ-আহ্বায়ক গৌতম মণ্ডলের মন্তব্য, “তৃণমূলে সন্ত্রাসের লক্ষ্য বিজেপি। সিপিএমের পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূল নেতারা মনোনয়ন জমা করতে সাহায্য করেছেন। তার পরেও কর্মী খুঁজে না পেয়ে একই পরিবারের তিন জনকে প্রার্থী করেছে সিপিএম। এ থেকে ওই দলের সাংগঠনিক দৈন্যই স্পষ্ট।” সন্ত্রাসের অভিযোগ অস্বীকার মানেনি তৃণমূল। দলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন বলেন, “লোক খুঁজে না পেয়ে জোর করে একই পরিবার থেকে এত জনকে প্রার্থী করা হয়েছে। ওঁরা না কি পরিবারতন্ত্রের কথা বলেন!” যদিও সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মনোজ দত্ত বলেন, “সন্ত্রাসের পরিবেশে একটি পরিবার নিরন্তর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে। তাই পরিবারের তিন জনকে প্রার্থী করা হয়েছে। এতে কর্মীর অভাব হয়েছে, এমনটা মনে করার কোনও কারণ থাকতে পারে না। কারণ, বেশির ভাগ সংসদে বিরোধী দল হিসাবে বামেদেরই প্রার্থী রয়েছে। বাহাদুরপুর পঞ্চায়েতের সব সংসদে তাঁরালড়াই করছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy