২০১১-য় পূর্বস্থলীর এক পুকুর থেকে উদ্ধার হয়েছিল গাঁজা। ফাইল চিত্র
পথ বদল। কয়েক দশক আগেও এলাকায় এটির কারবারের মূল পথ ছিল, রেলপথ। কিন্তু লাগাতার অভিযানের পরে গাঁজা পাচারের রুট এখন সড়কপথ। এমনটাই জানাচ্ছেন পূর্ব বর্ধমানের পুলিশকর্তারা। তবে পুলিশি নজর এড়িয়ে পূর্বস্থলী বা লাগোয়া এলাকায় লুকিয়ে গাঁজার পসরা পৌঁছে দেওয়ার নানা অভিনব ‘পথ’ নিচ্ছে কারবারিরা, জানা গিয়েছে পুলিশ সূত্রেই।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পূর্বস্থলী ১ এলাকায় গাঁজার কারবার মোটামুটি ভাবে শুরু ১৯৯৩ সাল থেকে। কী রকম? অবসরপ্রাপ্ত এক পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেই সময়ে রেলপথ ধরে শিলিগুড়ি ও ভিন রাজ্য থেকে এলাকায় ঢুকত ঘড়ি, ভিসিডি-সহ নানান বিদেশি জিনিসপত্র। এই জিনিসপত্রের সঙ্গেই ‘লুকিয়ে’ শুরু হত গাঁজার কারবারও। সেই সময়ে প্রায়ই দেখা যেত, ট্রেনের শৌচাগার-সহ অন্যত্রও জিনিসপত্রের আড়ালে লুকিয়ে রাখা হত ছোট ছোট পেটি।
ট্রেন কোথায় পৌঁছল, সে বিষয়ে কারবারিদের ‘নিজস্ব নেটওয়ার্ক’ কাজ করত। সেই মতো, নির্দিষ্ট স্টেশনে নামিয়ে দেওয়া হত গাঁজার পেটি। এক একটি পেটির ওজন প্রায় ১৫ থেকে ১৬ কেজি! সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে গাঁজার ‘কদর’। পূর্বস্থলী থেকে তা ছড়িয়ে পড়ে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, হুগলি-সহ নানা এলাকায়। সেই সঙ্গে বাড়ে কারবারি ও ‘মাথা’-র সংখ্যা। মাথারা ছড়িয়ে পড়ে পূর্বস্থলী, নবদ্বীপ ও কাটোয়ার নানা এলাকায়।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘হাত’ আরও প্রশস্ত হয় এই কারবারের। পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে মণিপুর, ওডিশা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও নাগাল্যান্ড থেকে প্রচুর পরিমাণ গাঁজা এলাকায় ঢুকছে। কিন্তু গত ছ’বছরে এই কারবারের ‘পথ-বদল’ হয়েছে। কেন এমনটা? রেল সূত্রে জানা যায়, লাগাতার অভিযান ও যাত্রী সচেতনতার জন্য ট্রেনপথ ছেড়েছেন কারবারিরা।
এ বার বেছে নেওয়া হয় সড়কপথ। পুলিশকর্মীদের একাংশের অভিজ্ঞতা, অনেক সময়েই দেখা যায়, মালবাহী ট্রাক-সহ অন্য গাড়িতে জিনিসপত্রের আড়ালে লুকনো থাকছে গাঁজা।
তবে ধরা পড়ার ভয়ে অপেক্ষাকৃত কম নজরদারি থাকা রাস্তা ব্যবহার হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। পুলিশ জানায়, এমনও দেখা গিয়েছে, জাতীয় সড়ক ব্যবহার না করে কারবার চলছে এসটিকেকে রোডে। বছর খানেক আগেই নাদনঘাট থানার পুলিশ এসটিকেকে রোডে একটি গাড়ি আটকে সেখান থেকে উদ্ধার করে প্রায় দেড় কুইন্টাল গাঁজা। ওই ঘটনায় পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করে। তাদের জেরা করে পুলিশ জানতে পারে শুধু পূর্বস্থলী নয়, লাগোয়া নবদ্বীপেও রয়েছে কারবারের বড় চাঁইরা। বছর তিনেক আগে পূর্বস্থলী ব্যানাকর মোড়ে একটি যাত্রিবাহী বাস থামিয়ে তা থেকে প্রচুর গাঁজা উদ্ধার করে পুলিশ।
২০১০-এ দশঘড়ি এলাকায় নারকোটিকস দফতর অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করে সাড়ে তিন কুইন্টাল গাঁজা। গাঁজা লুকিয়ে রাখার ক্ষেত্রেও নানা সময়ে অভিনব পন্থা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিজ্ঞতা পুলিশের। যেমন, ২০১১-য় শ্রীরামপুরের পলতার বিলে পড়ে থাকতে দেখা যায় সাড়ে চার কুইন্টাল গাঁজা। স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেন, অভিযানের ভয়ে গাঁজার পেটি কারবারিরা ফেলে দেয় বিলে।
পূর্বস্থলীতে গাঁজা ঢোকার পরে ফের ‘পথ’ বদল হয় তার। কখনও দেখা যায়, সড়ক পথেই নদিয়া, মুর্শিদাবাদের মতো পড়শি জেলাগুলিতে তা পাচার হচ্ছে। কাটোয়া থেকে ধৃত এক জনকে গ্রেফতারের পরে জানা গিয়েছিল পাচারের পথে ব্রাত্য নয় ফেরিঘাটও। তা ছাড়া সাইকেল, মোটরবাইকে সওয়ার হয়েও কারবারিরা পৌঁছে যাচ্ছে কালনা মহকুমার নানা প্রান্তে।
কিন্তু গাঁজা গন্তব্যে পৌঁছনোর পরে কারবারের ‘চক্র’ কী ভাবে চলছে ও এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে, ক্রেতারা কারা, পুলিশ-প্রশাসনই বা কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, এমনই নানা বিষয় নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy