শোকার্ত পরিজন। নিজস্ব চিত্র
স্বামীর সঙ্গে ‘অশান্তি’র জেরে চার মাস ধরে বাপেরবাড়িতে ছিলেন যুবতী। আচমকা স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হাজির হন যুবক। ভরসন্ধ্যায় মেয়ের জামাকাপড় কিনতে যাওয়ার নাম করে স্ত্রীর পেটে ভোজালি ঢুকিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, সঙ্গে থাকা বছর দেড়েকের মেয়েও খুন করতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু লোকজন জড়ো হয়ে যাওয়ায় ওই ভোজালি ঢোকান নিজের পেটেই। আপাতত কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই যুবক অশোক পাল।
বুধবার ওই হাসপাতালের ময়না-তদন্ত হয় মৃত পল্লবী পালের (২৪)। বিকালে জামাই-সহ মেয়ের শ্বশুর মিহির পাল, শাশুড়ি লক্ষ্মী পাল, দেওর ষষ্ঠী পাল, ননদ কৃষ্ণা ধারা ও নন্দাই সঞ্জয় ধারার নামে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন মৃতার মা টিঙ্কু পাল। হাসপাতালের বেডে শুয়ে অশোক দাবি করেন, ‘‘স্ত্রী বিভিন্ন কারণে বাড়িতে অশান্তি করত। বাপেরবাড়ি চলে গিয়েছিল। আমি নিতে এসেছিলাম। যেতে না চাওয়ার ভয় দেখাতে পেটে চাকু ঢুকিয়ে দিয়েছি। নিজের পেটেও চাকু ঢুকিয়েছি। কিন্তু ও মরে যাবে ভাবিনি।’’ পুলিশ জানিয়েছে, দেওরকে আটক করা হয়েছে। তবে বাকিরা বেপাত্তা। ননদের বাড়ি বীরভূমের কীর্ণাহারে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়ার সিঙ্গি গ্রামের পূর্বপাড়ার কালীতলায় বাপেরবাড়ি পল্লবীর। তিন বছর আগে কেতুগ্রামের নিরোল গ্রামের উত্তরপাড়ার অশোকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। অশোক পেশায় সোনার গয়নার কারিগর। টিঙ্কুদেবীর অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই মেয়েকে সন্দেহ করত জামাই। নিত্যদিন শ্বশুবাড়িতে অশান্তি লেগে থাকত। মারধরও করত। অনেকে বোঝালেও শোধরায়নি। মেয়ের জন্মের পরে দুর্ব্যবহার আরও বেড়ে যায় বলেও জানান তিনি। টিঙ্কুদেবী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘মেয়ে বাধ্য হয়ে আমাদের বাড়ি চলে এসেছিল। চার মাস পরে জামাই হঠাৎ আসে। ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে বলে মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। অশোকের কথা শুনে আমরাও আশ্বস্ত হই। ভেবেছিলাম মেয়েটা এ বার সুখে থাকবে। কিন্তু মেয়ে খুন হয়ে যাবে ভাবিনি।’’
তাঁর দাবি, মঙ্গলবার বিকেলে বেশ কিছুক্ষণ সবার সঙ্গে গল্প করে অশোক। চা-বিস্কুট খায়। সন্ধ্যা নাগাদ মেয়ের জামা কিনবে বলে সিঙ্গি বাজারে নিয়ে যায় স্ত্রী-মেয়েকে। তার পরেই ঘোষপাড়ার কাছে সাত বার ভোজালির ‘কোপ’ মারে মেয়েকে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভোজালি অশোকের কাছেই ছিল। হঠাৎ হামলার পরে মেয়ের উপরেও হামলা করতে যায় সে। পল্লবীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে গেলে নিজের পেটে ওই ভোজালি ঢুকিয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গেই দু’জনকে কাটোয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রাত ৯টা নাগাদ মারা যান পল্লবী। টিঙ্কুদেবী বলেন, ‘‘পুলিশকে সব জানিয়েছি। ওর ফাঁসি চাই।’’
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ধ্রুব দাস বলেন, ‘‘খুনের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। দেহের ময়না-তদন্ত করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy