Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Electricity Crisis In Durgapur

বিদ্যুৎহীন বস্তি, হ্যারিকেনের আলোয় পড়ে মাধ্যমিকে

বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে রয়েছে বিদ্যুতের সাব-স্টেশন। তবু সন্ধ্যা নামলেই ওদের লেখাপড়া করতে হয় হ্যারিকেনের নিভু নিভু আলোয়। কেরোসিনের দাম যে ভাবে বাড়ছে, তাতে দীর্ঘক্ষণ হ্যারিকেন জ্বালিয়ে পড়াশোনা করা ওদের কাছে বিলাসিতা।

An image of no electricity

বিদ্যুৎ নেই এই কলোনিতে। —নিজস্ব চিত্র।

অর্পিতা মজুমদার
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:১৪
Share: Save:

বাড়ি দুর্গাপুরের অভিজাত এলাকা সিটি সেন্টারের পাশে। বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে রয়েছে বিদ্যুতের সাব-স্টেশন। তবু সন্ধ্যা নামলেই ওদের লেখাপড়া করতে হয় হ্যারিকেনের নিভু নিভু আলোয়। কেরোসিনের দাম যে ভাবে বাড়ছে, তাতে দীর্ঘক্ষণ হ্যারিকেন জ্বালিয়ে পড়াশোনা করা ওদের কাছে বিলাসিতা। মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার অবসরে অঙ্কিতা মুর্মু ও পিয়াসা বাউড়ি জানিয়েছে তাদের আক্ষেপের কথা— এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি তাদের বস্তিতে।

দুর্গাপুরে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের এক পাশে রয়েছে অভিজাত এলাকা সিটি সেন্টার। অন্য পাশে পলাশডিহা, যেখানে রয়েছে দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেডের (ডিপিএল) সাব-স্টেশন। সেই সাব-স্টেশনের পাশেই রয়েছে অঙ্কিতাদের বস্তি। জাতীয় সড়কের পাশে মেঠো রাস্তা ধরে যেতে হয় ওই বস্তিতে। সেখানে রয়েছে ৩০-৩৫টি ঘর। বেশির ভাগেরই দেওয়ালই মাটির। মাথায় রয়েছে পলিথিন বা টালির ছাউনি। পুরসভা পানীয় জলের সংযোগ দিয়েছে। রয়েছে কমিউনিটি শৌচাগার। কিন্তু আসেনি বিদ্যুৎ। সিটি সেন্টার যখন আলোয় ঝলমল করে, জাতীয় সড়ক দিয়ে তীব্র আলো ছড়িয়ে যায় গাড়ির মিছিল, তখন অঙ্কিতাদের বস্তিকে ঘিরে থাকে জমাট বাঁধা আঁধার।

অঙ্কিতা, পিয়াসা পলাশডিহা হাই স্কুলের ছাত্রী। সবুজসাথী প্রকল্পে পাওয়া সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যায় তারা। ওদের মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যেতে হচ্ছে ভিড়িঙ্গি টিএন হাই স্কুলে। বাড়ি থেকে যার দূরত্ব প্রায় সাত কিলোমিটার। পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে হয় জাতীয় সড়ক ধরে। তাই সাইকেলে যাওয়ার ঝুঁকি নেয়নি তারা। ঘরে অনটন থাকলেও বাধ্য হয়েই অটো ভাড়া করে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাচ্ছে তারা।

পিয়াসার বাবা নেই। থাকে দিদিমার কাছে। মামা জনমজুর। কোনও রকমে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোটে। বাধার পাহাড় ঠেলে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে পিয়াসা। তার এক প্রতিবেশীর কথায়, ‘‘দিনের আলোই পিয়াসার ভরসা। কেরোসিনের দাম যেখানে ঠেকেছে তাতে বেশিক্ষণ হ্যারিকেন জ্বালিয়ে রাখাও সম্ভব নয়।’’ ছাত্রীর দিদিমা কালিকা মল্লিক বলেন, ‘‘বহু কষ্ট করে নাতনির পড়াশোনা চলছে। বিদ্যুতের আলো থাকলে শুধু আমার নাতনি নয়, সবার সুবিধা হবে।’’ অঙ্কিতার মা পরিচারিকার কাজ করে সংসার ঠেলেন। অঙ্কিতা জানায়, বহু কষ্ট করে সে লেখাপড়া জারি রেখেছে। তার কথায়, ‘‘আজকের দিনেও বিদ্যুৎ ছাড়া আমাদের জীবন কাটাতে হচ্ছে। হ্যারিকেনের আলোই আমাদের ভরসা।’’

কত দিন পরে কাটবে বস্তির আঁধার? পুর-প্রশাসক অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিষয়টি আমি জানি। ইতিমধ্যেই ওখানে কমিউনিটি শৌচাগার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদ্যুতের জন্য রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার সঙ্গে কথা হয়েছে। আশা করি দ্রুত সমস্যা মিটবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

no electricity Durgapur Electric Supply
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy