ভাতারে আহত তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। নিজস্ব চিত্র
ভোট মিটতে না মিটতেই অশান্তি, সংঘর্ষে তেতে উঠল জেলার নানা প্রান্ত। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কোথাও তৃণমূল-বিজেপির মারপিট, কোথাও আবার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে গোলমাল পেকেছে বলে অভিযোগ। আক্রান্ত হয়েছে পুলিশও।
সোমবার ভোট শেষের পরেই জামালপুরে বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষ বাধে। বিজেপির অভিযোগ, তেলনুরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে ঢুকে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ছাপ্পা ভোট দেওয়ার চেষ্টা করছিল। দলের এক কর্মী প্রতিবাদ করলে তাঁকে মারধর করা হয়। এর পরেই বিজেপি কর্মীরা স্কুল ভবন ঘিরে ফেলেন। বুথ থেকে তৃণমূল কর্মী শুভ তালুকদারকে বার করে মারধর করা হয়। তাঁকে উদ্ধার গেলে পুলিশকেও আটকে রাখা হয়। সময় পেরিয়ে গেলেও ইভিএম নিয়ে বেরোতে পারছিলেন না বুথের কর্মীরা। ব্লকের আধিকারিকেরাও ঘটনাস্থলে গিয়ে আটকে পড়েন।
জেলা পুলিশের দাবি, ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, শ’দুয়েক লোক স্কুল ভবন ঘিরে রেখেছেন। বেশিরভাগের হাতে লাঠি, রড, ইট। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে স্থানীয় বিজেপি নেতা কিঙ্কর মণ্ডলের নেতৃত্বে পুলিশের উপরে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের পাঁচটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জখম হন তিন জন পুলিশকর্মী। পরিস্থিতিতে আয়ত্তে আনতে দু’রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস শেল ফাটায় পুলিশ। সে রাতেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জামালপুরের ওসি পুষ্পেন্দু জানা ১৯ জনের নামে অভিযোগ করেন। রাতভর তল্লাশি চালিয়ে দশ জনকে গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার বর্ধমান জেলা আদালতে তোলা হলে চার জনকে দু’দিন পুলিশি হেফাজত ও বাকিদের দু’দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ভোটের হার
বর্ধমান পূর্ব
২০১৪: ৮৬.২২%
২০১৯:৮৪.৭৪%
বর্ধমান-দুর্গাপুর
২০১৪: ৮৪.১০%
২০১৯: ৮৩.৫৫%
মঙ্গলবার দুপুরে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ বাধে আউশগ্রামের ছোড়া কলোনি এলাকা। বিজেপির অভিযোগ, মোরবাঁধে যাওয়ার সময়ে তাদের তিন কর্মীর পথ আটকায় তৃণমূলের লোকেরা। ওই তিন কর্মীকে ধরে তৃণমূল অফিসে আটকে রেখে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে বিজেপি কর্মীরা তৃণমূলের অফিসে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। স্থানীয় রামনগর পঞ্চায়েত প্রধানের দাদার বাড়িতেও হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দু’জন বিজেপি কর্মীকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময়ে গাড়ি আটকে বিক্ষোভ শুরু হয়। গাড়ির কাচে ইট ছোড়া হয়। বর্ধমান থেকে পুলিশ-র্যাফ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এই ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
আউশগ্রামেরই যাদবগঞ্জে সিপিএম-তৃণমূল গোলমাল বাধে। পরস্পরের বিরুদ্ধে কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। আউশগ্রাম সদরেও বিরোধী কর্মীদের ‘হুমকি’ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের দিকে। প্রতিবাদ করায় কয়েকজনকে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। বননবগ্রাম স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তিন জনের চিকিৎসা করানো হয়। আউশগ্রামের পঞ্চমৌলি, সোমেশপুরেও গোষ্ঠী সংঘর্ষের অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলকোটে জালপাড়ায় তৃণমূলের লোকজনের বিরুদ্ধে তিন জনকে মারধরের অভিযোগে প্রায় চার ঘণ্টা পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় আদিবাসীরা।
ভাতারের মঞ্জুলা ও সন্তোষপুর গ্রামে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাদের দুই কর্মীকে মারধর করেছে বলে অভিযোগ সিপিএমের। এক জনের টোটো ভাঙচুরও করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ভাতারের শিকারপুর গ্রামে আবার তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারপিট বাধে বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি।
তৃণমূল-বিজেপি গণ্ডগোল বাধে বর্ধমান শহরেও। সোমবার রাতে শহর লাগোয়া খাঁ পুকুরে তৃণমূলের অফিসে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। বর্ধমান উত্তরের বিধায়ক নিশীথ মালিক, জেলা পরিষদ সদস্য গার্গী নাহারা জেলা প্রশাসনের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করেন। বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, ওই এলাকার তাঁদের দুই এজেন্টের উপরে হামলা চালিয়েছে তৃণমূল। এক জনের মাথা ফেটে গিয়েছে। মঙ্গলবার বর্ধমান থানায় বেশ কয়েকজনের নামে অভিযোগ করা হয়। মঙ্গলবার বিকেলে বাবুরবাগে তৃণমূল-বিজেপি গোলমাল হয়। বিজেপির এক জনকে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পুলিশ ও র্যাফ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সোমবার রাতে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে বর্ধমানের গোদায় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল বাধে বলে অভিযোগ। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে এলাকায় বোমাবাজি, দোকানে আগুন, বেশ কয়েকটি টোটো ভাঙচুর হয়। দু’টি গোষ্ঠীর লোকজনের বাড়িতেই ভাঙচুর চলে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। ছুরিতে আহত হয়ে এক মহিলা বর্ধমান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। একটি গোষ্ঠীর নেতা কাঞ্চন কাজির অভিযোগ, “হঠাৎ বহিরাগতেরা এসে বোমাবজি করেছে। আমাদের পার্টি অফিসেও ভাঙচুর হয়।’’ প্রাক্তন উপপ্রধান খোন্দেকার মহম্মদ শাহিদুল্লাহের দাবি, “কেউ-কেউ বহিরাগতদের নিয়ে এলাকা অশান্তি করেছে।’’ পুলিশ জানায়, এলাকা থেকে বোমা উদ্ধার হয়েছে। ১৯ জনকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে লক্ষ্মীপুর মাঠে দফায়-দফায় সংঘর্ষ হয়। বেশ কয়েকজন আহত হন। পুলিশ তিন জনকে আটক করেছে। এক্ষেত্রেও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেপথ্যে রয়েছে বলে অভিযোগ।
জেলা জুড়ে গোলমাল প্রসঙ্গে বিজেপির জেলা (সাংগঠনিক) সভাপতি সন্দীপ নন্দীর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল বুঝে গিয়েছে, ওদের নৌকা ডুবছে। তাই ভোট শেষ হতেই আমাদের এজেন্ট, কর্মীদের উপরে হামলা চালিয়েছে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘চার দিকে গোলমাল পাকাচ্ছে বিজেপি। পুলিশকেও মারছে। ভোটের পরে বেলুন চুপসে যেতে ওরা উচ্ছৃঙ্খলতা শুরু করেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy