উদ্ধার হওয়া বোমা। নিজস্ব চিত্র
২৯ এপ্রিল ভোটে জেলার ২৭৫১টি বুথ চত্বরের মধ্যে প্রায় ৯৯ শতাংশে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল। আজ, রবিবার বিষ্ণুপুর লোকসভার খণ্ডঘোষের ২১৪টি বুথ চত্বরে তার চেয়ে কম কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে বলে জানা গিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দাবি, খণ্ডঘোষের ৯০ শতাংশ চত্বরে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। ১১ কোম্পানি আধাসেনা মোতায়েনও করা হয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরে ভোট-গরমে তপ্ত এই এলাকা। শনিবার সকালেও ওঁয়াড়ি গ্রামে একটি পুকুর পাড় থেকে আটটি বোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই গ্রামের পাশে আলিপুর গ্রামে কয়েকদিন আগেই রাজনৈতিক হিংসায় নিহত হন কামরুল শেখ নামে এক প্রৌঢ়। তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে তরজাও বাধে তৃণমূল, সিপিএমের। ভোটের আগের দিন বোমা উদ্ধারেও উঠেছে নানা প্রশ্ন। বিরোধীদের দাবি, আতঙ্ক ছড়াতেই এলাকায় বোমা মজুত করেছে শাসক দল। তার মধ্যে কয়েকটা পুলিশ পেয়েছে। তৃণমূলের পাল্টা বক্তব্য, বিরোধীরাই বোমা রেখে সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন বিভিন্ন গ্রামে তল্লাশি চালানোর সময় ওঁয়াড়ি গ্রামের শেখ পাড়ার কায়েতপুকুর পাড়ে একটি পিচবোর্ডের বাক্স পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাতেই ছিল বোমাগুলি। সন্ধ্যায় সিআইডির বোম স্কোয়াড গ্রামে গিয়ে বোমাগুলি নিষ্ক্রিয় করে। এলাকার বাসিন্দা শেখ হালিমের দাবি, “ওই পুকুর পাড়ে আমার মুরগির খামার রয়েছে। বস্তাবন্দি কিছু পড়ে থাকতে দেখে সিভিক ভলান্টিয়ারকে খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ বোমা উদ্ধার করে।’’ জেলা পুলিশের দাবি, বোমাগুলি কী ভাবে এল, খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তিন বছর আগে ওঁয়ারি গ্রামে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে খুন হয়েছিলেন তিন তৃণমূল কর্মী। আলিপুর গ্রামের খুনেও ওঁয়ারি গ্রামের তৃণমূল নেতা শেখ ফিরোজকে অন্যতম মূল অভিযুক্ত করা হয়। পুলিশ এখনও পর্যন্ত ধরতে পারেনি তাঁকে। এলাকার সিপিএমের নেতা বিনোদ ঘোষ বলেন, “তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষ একজোট হয়েছেন। সেই জোট ভাঙতে ও এলাকায় আতঙ্ক তৈরি করতে তৃণমূল বোমা মজুত করছে।’’ বিজেপির খণ্ডঘোষ ব্লকের পর্যবেক্ষক বিজন মণ্ডলের দাবি, “ভোট লুট করার উদ্দেশে বোমা মজুত করেছে তৃণমূল।’’
যদিও ব্লকের তৃণমূল সভাপতি অপার্থিব ইসলাম বলেন, “বিরোধীরা হারার ভয়ে কাঁপছে। সে জন্যে বিভিন্ন এলাকায় নিজেরাই বোমা রেখে সন্ত্রাসের ধুয়ো তুলছেন। মানুষ ওঁদের কথা বিশ্বাস করে না।’’
বিরোধীরা এর আগে খণ্ডঘোষের সীমানা-এলাকা রায়না, মাধবডিহি ও বাঁকুড়ার ইন্দাস-পাত্রসায়রের রাস্তা ‘সিল’ করার জন্যে কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছিল। তাঁদের অভিযোগ ছিল, ভোটের দিন বিভিন্ন এলাকা থেকে ‘বহিরাগত’রা ঢুকবে। ২০১৪ সালের লোকসভা ও ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও এ হেন কান্ড ঘটেছিল বলে তাঁদের দাবি। যদিও কমিশন জানিয়েছে, একাধিক রাস্তা সিল করা যায় না। তবে ওই সব এলাকায় ক্রমাগত তল্লাশি চলবে। বিশেষ বিশেষ জায়গায় ‘নাকা’ও থাকবে।
জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচন আধিকারিক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, “খণ্ডঘোষ বিধানসভায় ২৫টি সেক্টর গঠন করা হয়েছে। সব সেক্টরেই এক জন করে ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের আধিকারিক থাকছেন। এ ছাড়াও আরও ৯ জন ম্যাজিস্ট্রেটকে ভোট পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, খণ্ডঘোষ ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েত ও গলসির ৭টি পঞ্চায়েত (আদ্রাহাটি, গোহগ্রাম, মসজিদপুর, গুঁড়ি, সাটিনন্দী, সাঁকো ও খানো) নিয়ে খণ্ডঘোষ বিধানসভা। মোট ভোটার ২ লক্ষ ৩৪ হাজার ৬৬৪ জন। ভোটের দিন এলাকা যাতে উত্তপ্ত না হয়, সে জন্যে নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। বিভিন্ন সেক্টরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি কুইক রেসপন্স টিমেরও প্রধান করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানকে। এ দিন গরমের কথা মাথায় রেখে ১২৩৪ জন ভোটকর্মীকে গ্লুকোজ এবং ওআরএসের প্যাকেট দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক বলেন, “ভোটারদের জন্যে অনেক বুথে অস্থায়ী ছাউনি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী ও বয়স্করা যাতে বসতে পারেন তার জন্যে অস্থায়ী ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিটি বুথে পানীয় জলের ব্যবস্থা থাকছে।’’ কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিবন্ধী ও বয়স্করা যাতে সরাসরি ইভিএমের কাছে পৌঁছতে পারেন তার জন্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy