প্রতীকী ছবি।
বেড়েছে ঘরে গাছ রাখার প্রবণতা, দাবিআজ, বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এই জেলায় দূষণের মাত্রা চিরকালই বেশি। কিন্তু এ সবের মধ্যেও খানিকটা হলেও আশা জোগাচ্ছে, একটি দাবি। তা হল, জেলার বিভিন্ন নার্সারি মালিকেরা জানাচ্ছেন, ইন্ডোর প্ল্যান্টের চাহিদা ও বিক্রি কোভিড-কড়াকড়ির সময়েও বেড়েছে। আর এই তথ্য জেনে শহরের চিকিৎসক থেকে পরিবেশ বিজ্ঞানী সবারই বক্তব্য, ইন্ডোর প্ল্যান্টই না হয় হোক, এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, গাছ সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা খানিকটা
হলেও বাড়ছে।
সাম্প্রতিক কড়াকড়ির জেরে বাজারের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রের ব্যবসায়ীরা যখন তাঁদের ক্ষতির কথা বলছেন, তখন আসানসোলের নার্সারি মালিকেরা অন্য কথা বলছেন। নিশ্চিত করে ‘লাভের’ অঙ্ক না জানালেও আসানসোলের জিটি রোড লাগোয়া একটি নার্সারির মালিক সুভাষ কুণ্ডু বলেন, ‘‘গত তিন বছরের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, গাছ বিক্রি খুব একটা কমেনি। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে এ পর্যন্ত বিক্রিতে মোটেও ভাটা পড়েনি। মানুষ যে শুধু ঘর সাজাতেই গাছ কিনছেন, এটা মনে হয় না। গাছের প্রতি ভালবাসা বাড়ছে তাঁদের।’’ তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে গাছের আমদানি খানিকটা কমেছে। রূপনারায়ণপুরের একটি নার্সারির মালিক দিগন্ত জানা বলেন, ‘‘এ বার গাছের বিক্রি বেশ বেশি। ভাল লাগছে দেখে, শিল্পাঞ্চলেও মানুষ গাছ কিনছেন।’’ মূলত, নানা প্রজাতির পামগাছ, অ্যালোভেরা, পাতাবাহারের বিক্রিই বেশি হচ্ছে বলে দাবি। প্রতিটি গাছের দাম ১৭৫ টাকা থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে রয়েছে।
শুক্রবার আসানসোলের একটি নার্সারিতে গাছ কিনতে এসেছিলেন বলাকা গঙ্গোপাধ্যায় নামে শহরের এক চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘‘এক বন্ধুকে গাছ উপহার দেব। পরিবেশ দিবস বলে শুধু নয়, উপহার হিসেবেও গাছ অত্যন্ত ভাল জিনিস।’’
জনসাধারণের গাছ কেনার প্রবণতার নেপথ্যে কয়েকটি কারণ দেখছেন পরিবেশবিদ ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞেরা। বিশ্বভারতীর গবেষক বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, অ্যারিকা পাম, বস্টন ফার্ন, সিগোনিয়াম, ডাম্ব কেন, স্নেক প্ল্যান্ট, অ্যালোভেরা, মানি প্ল্যান্ট ইত্যাদি গাছগুলি ঘরের অন্দরে বা ব্যালকনিতে লাগানো হয়। তাঁর কথায়, ‘‘এই গাছগুলি এক দিকে ঘরের শোভা বাড়ায় আবার খুব কম আলোয় সালোকসংশ্লেষ করতে পারে বলে ঘরময় সারাক্ষণ অক্সিজেন সরবরাহ করে। ধূমপানের ধোঁয়া-সহ নানাবিধ দূষিত রাসায়নিক গ্যাস শোষণ করে বাতাস পরিশুদ্ধ করতেও সাহায্য করে।’’
বাড়িতে গাছ রোপণ করার বিষয়টির পরিবেশগত এবং মানসিক গুরুত্বও আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। আসানসোল বিবি কলেজের অধ্যাপক তথা পরিবেশবিজ্ঞানী অরূপ রায় বলেন, ‘‘শহরাঞ্চলে বহুতল আবাসনের বাসিন্দারা মাটির সংস্পর্শ পান না। তাঁরা গৃহ শোভা বা ব্যালকনি সাজাতে ইন্ডোর প্ল্যান্ট লাগালেও পরিবেশের ভারসাম্য অনেকটাই রক্ষা পাবে। বাড়বে সচেতনতাও।’’ আসানসোল জেলা হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেবপ্রসাদ রায়চৌধুরী আবার মনে করেন, গত দেড় বছর ধরে করোনা অতিমারি ও লকডাউনের জন্য ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন মানুষজন। একঘেয়েমি কাটাতে ইন্ডোর-প্ল্যান্টের জুড়ি মেলা ভার।
তবে এ সবের মধ্যেও বায়ু, জল, ভূমি ও নদী দূষণের মতো বিষয়গুলি রয়েছে জেলায়। তা নিয়ে পরিবেশবিদেরা চিন্তিতও। পাশাপাশি, প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছেন পরিবেশবিদের বড় অংশ। বিশিষ্ট পরিবেশবিদ তথা লেখিকা জয়া মিত্রের মতে, ‘‘ইন্ডোর প্ল্যান্ট কেনার প্রবণতা বাড়েছে, তা ভাল কথা। কিন্তু বৃক্ষনিধনের প্রবণতাও বিপজ্জনক ভাবে বেড়েছে। ‘ন্যাচরাল আরবান ফরেস্ট’ শেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন এ বিষয়টি নিয়ে উদাসীন।’’ ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার (দুর্গাপুর) নীলরতন পাণ্ডা অবশ্য বলেন, ‘‘সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ করা হয়। কিন্তু কিছু দিন পরে দেখা যায়, ৭০ শতাংশ গাছ বেঁচে রয়েছে। বাকি গাছগুলি বাঁচানোর জন্য আমরা সমন্বয়ে জোর দিচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy